হরেশ্বর মন্দিরের দক্ষিণ পাশে শাঁখারিপাড়ার রাস্তা, উত্তর পাশে গিয়েছে কুচকুচিয়ার রাস্তা ফাঁসিডাঙা পর্যন্ত। জানা যায়, ওই এলাকায় কুচকুচিয়া নামে একটি পুকুর ছিল। জলের তলায় কালো মাটি থাকায় জলটা কালো কুচকুচে দেখাত। তাই পুকুরটিকে বলা হত কুচকুচিয়া। ধীরে ধীরে পুকুর সংলগ্ন এলাকাটিকেও বলা হত কুচকুচিয়া। কুচকুচিয়ার রাস্তা হরেশ্বর শিব মন্দিরের উত্তর পাশ দিয়ে খানিকটা পূর্ব দিকে গিয়ে, সাপের মত এঁকেবেকে আবার উত্তর দিকে ফাঁসিডাঙা হয়ে লখ্যাতড়ায় (লক্ষ্মী ঘোষের তড়ায়) গন্ধেশ্বরী নদীর ঘাটে যাওয়ার রাস্তায় মিশেছে।
advertisement
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে শহরের লোকালয়ের বাইরে ফাঁকা জায়গায় দুর্দান্ত ডাকাত ও খুনি আসামীদের প্রাণদণ্ড দেওয়া হত, যদিও সেই পোডিয়াম আজ আর নেই। তাই এলাকার নাম হয়েছিল ফাঁসিডাঙা। পরে ফাঁসিডাঙায় পিছিয়ে পড়া শ্রেণিদের চুনভাটি ও বসতবাড়ি হয়েছিল। সেকালের বাসিন্দাদের মুখে প্রখ্যাত ডাকাত ‘গুরাই মাঝি’র কুকীর্তি ও তার ফাঁসির অনেক গল্প শোনা যেত। গুরাই মাঝি ছিল ডাকাত দলের দুঃসাহসী সর্দার। বর্ধমান ও হুগলি জেলার ধনীদের বাড়ি ও নীলকুঠীতে ডাকাতি করত। গুরাই মাঝি মাথায় খড়ের বা চটের বিড়ার উপর পিতলের হাঁড়ি পাগড়ির সঙ্গে বেঁধে ডাকাতি করত। ‘রণ-পা’ ব্যবহার করে ঘণ্টায় ১২-১৪ মাইল দৌড়ত।
লোকমুখে শোনা যায়, গুরাই মাঝি মাঝরাতে ডাকাতি করত প্রায় ১০-১২ ক্রোশ দূরে। ভোররাতে নিজের আস্তানায় ফিরে আসত। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তার আস্তানা ছিল। একসময়ে ধরা পড়ে। বিচারের পর তাকে পাঠানো হয় আন্দামান দ্বীপে। কিন্তু সমুদ্রপথে জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়ে সমুদ্রে, কিছুটা পথ সাঁতরে, কিছুটা পথ নৌকায় পাড়ি দিয়ে অবশেষে ডাঙায় আসে। শেষে বাঁকুড়া জেলারই কোনও জঙ্গল থেকে ফের পাকড়াও করা হয় গুরাই মাঝিকে। বিচারে মৃত্যুদণ্ডর হুকুম হয়। জেলখানার ভিতরেই ফাঁসি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।
সূত্র: ১০০ বছর আগে অধ্যাপক শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখে যাওয়া ইতিহাস, রথীন্দ্রমোহন চৌধুরীর লেখা এবং লীলাময় গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা। বাঁকুড়ার মহাফেজ খানার তথ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার ও বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া তথ্য।





