অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে প্রতিটি জেলাকে জনসংখ্যার নিরিখে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে এই টাকা কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়। কোনও বছরে এই টাকা কম খরচ হলে পরের বছরের বরাদ্দ কমে যায়। এজন্য নির্দিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক পরিকল্পনা মাফিক ৬০ শতাংশ টাকা বরাদ্দ করা হয়। একে শর্তাধীন বা টায়েড তহবিল বলা হয়। পানীয় জল ও স্যানিটেশন প্রকল্পে এই টাকা খরচ করতে হয়।
advertisement
প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলাগুলিকে এই তহবিলের বরাদ্দ পেতে গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জমা দিতে হয়। বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয় আনটায়েড বা নিশ্বর্তাধীন তহবিলে। সেক্ষেত্রেও গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বাধীনতা রয়েছে। তাদের এই বরাদ্দ অনুমোদন পেতে তাদের পছন্দ মতো প্রকল্প বছরের গোড়ায় নিয়ম করে জমা দিতে হয়। যা মূলত গ্রামীণ পরিকাঠমোগত বিকাশে খরচ করতে হয়। কোনও পঞ্চায়েত বেতন, প্রশাসনিক কাজে বা পরিবহণ সংক্রান্ত কাজে এই টাকা খরচ করতে পারে না। এলাকার সমষ্টিগত উন্নয়নের স্বার্থেই এই টাকা খরচ করতে হয়।
আরও পড়ুন: কম্বল বিতরণ কাণ্ডে 'রক্ষাকবচ' চেয়ে হাইকোর্টে চৈতালি তিওয়ারি! আদালতে জানালেন 'এই' আর্জিও
নবান্ন বলছে এই মুহূর্তে এরমধ্যে শর্তাধীন তহবিল বা টায়েড ফান্ড খরচ না হয়ে জেলাগুলিতে পড়ে রয়েছে ১৬৪৫ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে জেলাগুলিকে এই তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এই টাকা গ্রামীণ পানীয় জল,স্যানিটেশনের কাজে খরচ করার কথা। শুধুমাত্র গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পে পঞ্চায়েত ভিত্তিক অনুমোদন নিয়েও জেলাগুলি ১০৭৮ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেনি। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও জেলাগুলিতে পরে রয়েছে ৫৬৭ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। দেখা গিয়েছে,পাঁচ জেলা বরাদ্দ অর্থের ৫০ শতাংশের কম খরচ করেছে। এই জেলাগুলি হল মুর্শিদাবাদ,উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা,পশ্চিম বর্ধমান এবং নদীয়া।
পানীয় জল ও স্যানিটেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রকল্পের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় টাকা থাকার পরও কেন তা খরচ হচ্ছে না-এই প্রশ্নই উঠে এসেছে প্রশাসনিক মহলে। মুখ্যসচিব জেলাশাসকদের এব্যাপারে বার বার সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশেও স্টেট রুরাল লাইফহুড মিশন বা আনন্দধারা প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির কাজের অগ্রগতি নিয়েও ক্ষুব্ধ নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আনন্দধারা প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে নতুন দু’লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যমাত্র বেঁধে দিয়েছিলেন। নভেম্বর পর্যন্ত সেই লক্ষমাত্রার ৫০ শতাংশ পূরণ করতে পারেনি।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়