বিজেপির অভিযোগ, বুধবার বিধানসভায় রাজ্য সরকারের মিথ্যা ভাষণকে 'রাজ্যপালের ভাষণ' বলে কৌশলে রাজ্যপালকে দিয়ে পড়ানো হয়েছে। প্রতিবাদে রাজ্যপালের ভাষণ শুরুর তিন মিনিট পরেই প্রতিবাদে সরব হয় বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ৫৮ জন বিজেপি বিধায়ক একযোগে সরকারি দুর্নীতি ও রাজ্যপালের ভাষণের বিরোধিতা করে স্লোগান দিতে থাকেন। লক্ষ্যণীয়, গতবছর যে বিজেপি বিধায়করা রাজ্যপালের ভাষণের প্রতিবাদে স্লোগান দিয়েছিলেন রাজ্য সরকার হায় হায়, এবার তাদের গলাতেই শোনা গেল রাজ্যপাল হায় হায়। এটাই তাৎপর্যপূর্ণ।
advertisement
শেষ পর্যন্ত, ওয়াক আউট করে বিধানসভার লবি ও পোর্টিকোয় বিজেপি বিক্ষোভ জারি রাখলেও বিজেপি বিধায়করা, রাজ্যপাল বিধানসভা ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত জায়গা ছাড়েননি। এটুকু দেখলে মনে হতেই পারে, রাজ্যপালের ভাষণের প্রতিবাদে সংসদীয় রীতিনীতি মেনে এর বাইরে আর কীই বা করতে পারে বিজেপি? সেক্ষেত্রে, মুখরক্ষার প্রশ্ন উঠছে কেন বিজেপি পরিষদীয় দলের বিরুদ্ধে?
আরও পড়ুন: রাতভর তল্লাশি, বান্ডিল-বান্ডিল ভর্তি টাকা! বালিগঞ্জে আর যা পেল ইডি, বিরাট চমক
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যপালের ভাষণ যে রাজ্য সরকারের পক্ষেই হবে তা নিয়ে কোন সংশয় ছিল না বিজেপির৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীকে ডিলিট দেওয়ার সমর্থনে এগিয়ে আসা থেকে আনন্দ বোসের বেশ কিছু পদক্ষেপে বিজেপির কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এই রাজ্যপালের থেকে ধনকড়ের মতো 'সহযোগিতা' পাওয়া যাবে না। সে কারণে রাজ্যপালের ভাষণের প্রতিবাদের কৌশল কী হবে, তা স্পষ্ট করে দিতে অধিবেশন শুরুর আগে পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সূত্রের খবর সেই বৈঠকেই ঠিক হয় ১) রাজ্যপালকে ভাষণ পড়তে শুরুতেই বাধা দেওয়া হবে না। ২) কিন্তু, রাজ্য সরকারের কাজের সাফল্যের প্রসঙ্গে ইস্যু ভিত্তিক বিরোধিতা করতে হবে। ৩) সংসদীয় রীতি মেনেই রাজ্যপালের ভাষণের প্রতিবাদ করা হবে। ৪) প্রয়োজনে ওয়াক আউটও হতে পারে।
আরও পড়ুন: 'এই রিপোর্টে আমরা সন্তুষ্ট নই', বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে গণ্ডগোলে ক্ষুব্ধ হাই কোর্ট
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট প্রতিবাদের নামে 'গন্ডগোল' করে রাজ্যপালের ভাষণ পড়া বন্ধ করা বিজেপির লক্ষ্য ছিল না। কারণ, শুভেন্দু অধিকারী বুঝে গিয়েছিলেন, আনন্দ বোসকে ধনকড়ের 'রোল মডেল' করা যাবে না। সে কারণেই সংসদীয় পথে রাজনৈতিক বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। লক্ষ্যণীয়, টানা প্রায় ১৫ মিনিট ধরে অধিবেশন কক্ষে বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দিলেও, নিয়ম ভেঙে অধিবেশন কক্ষে তাঁরা কোন পোস্টার, ব্যানার ব্যবহার করেননি। বিগত বাজেট অধিবেশনের মতো শাসক দলের ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যাওয়া বা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে যায়নি বিজেপি। পরিবর্তে তারা অধিবেশন সংক্রান্ত টেবিল করা কিছু কাগজ ছিঁড়ে প্রতীকী প্রতিবাদ দেখিয়েছেন।
সংসদ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্লোগান দেওয়া, কাগজ ছেঁড়া থেকে ওয়াক আউট সবটাই পরিষদীয় রীতি মেনে প্রতিবাদের ভাষা৷ এমনকি অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করে বেরিয়ে গিয়ে বিধানসভার লবি ও পোর্টিকোয় বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ জারি রাখলেও রাজ্যপালের বিধানসভা ছেড়ে যাওয়ার রাস্তায় কোন বাধা তৈরি করেননি। সর্বোপরি, পরিস্থিতি যাতে কোনভাবেই লাগাম ছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য দলীয় বিধায়কদের কাগজের মন্ড ছোঁড়ার মতো বিষয়কে এগিয়ে এসে নিয়ন্ত্রণ করতেও দেখা গেছে বিরোধী দলনেতাকে।
রাজ্যপালকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ''আমাদের সঙ্গে রাজ্যপালের কোনও বিরোধ নেই। বিরোধ চেয়ারের সঙ্গে।'' তিনি যে ব্যক্তিগত আক্রমণের বিরুদ্ধে তা বোঝাতে, শুভেন্দু নিজেই দাবি করেছেন, অধিবেশন কক্ষে ঢোকার পর রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য বিনিময় হয়েছে।
কিন্তু, ঘটনাচক্রে সেই রাজ্যপালের ভাষণের মধ্যেই ওয়াক আউট করে হাউস ছাড়ার আগে, রাজ্যপালের দিকে আঙুল তুলে 'সেম.. সেম' বলে চিৎকারও করতে হয় শুভেন্দু সহ বিজেপি বিধায়কদের।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ থেকেই স্পষ্ট শুভেন্দুদের প্রতিবাদের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল। রাজ্যপালের রাজ্য সরকারমুখী ভাষণের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক ভাবে বার্তা দেওয়ার জন্য ঠিক যতটুকু প্রতিবাদ দরকার ছিল, শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা ঠিক ততটুকুই করেছেন। না হলে বিধানসভার বাইরে দলের 'মুখরক্ষা' করাই দায় হয়ে পড়ত।