জবাবে, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে ওই অফিসার বললেন, 'না, এটাতে অন্তত কোন ভুল নেই।' আধিকারিক আশ্বস্ত করলেও, ধ্বন্দ কাটতে চায় না বিধায়কের। ব্যাপারটা কী? ঝাঁপি খুলতে জানা গেল রহস্যটা।
বিলের নাম 'দ্য ওয়েষ্ট বেঙ্গল সিমেন্ট কন্ট্রোল বিল।' রাজ্যের খাদ্য দপ্তর এই বিলটিকে বাতিল করতে আগামী সোমবার বিধানসভায় একটি 'রিপিলিং বিল' আনতে চলেছে।
advertisement
আরও পড়ুন: পুকুর পাড়ে ঝোপের মধ্যে পড়েছিল এই প্রাচীন মূর্তি, দাম কত জানেন?
'দ্য ওয়েষ্ট বেঙ্গল সিমেন্ট কন্ট্রোল বিল' নামে মূল যে বিলটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি বিধানসভায় পেশ ও পাশ হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। আজ থাকে ৭৪ বছর আগে। সে সময় আজকের মতো খোলাবাজারে সিমেন্ট পাওয়া যেত না। সিমেন্ট কিনতে গেলে নির্মাণের খতিয়ান দিয়ে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর থেকে পারমিট নিতে হত। খাদ্য দপ্তরের ইস্যু করা সেই পারমিট অনুসারে সিমেন্ট বরাদ্দ হত। রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের গোডাউন থেকে সিমেন্ট সংগ্রহ করতে হত সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে।
সিমেন্ট বিক্রির এই নিয়ম বজায় ছিল মোটামুটি ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত। তারপর, ধীরে ধীরে খোলা বাজারে সিমেন্ট বিক্রি শুরু হয়। এই বিল এবং তার সূত্রে বলবৎ থাকা আইনও কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। নতুন প্রজন্ম জানতই না, কোনও এক সময়ে, এমন "আজব" একটি আইন তৈরি করতে হয়েছিল রাজ্যের আইন প্রণেতাদের। কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আইনের প্রাসঙ্গিকতা লোপ পেলেও, কোন অজ্ঞাত কারনে দীর্ঘ ৭৪ বছর ধরে আইনটিকে অকার্যকর করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় নি।
খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৪৮ সালে এই আইনটি করার আগে, তদানীন্তন সরকার একটি অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ আনে। পরে সেটিকে বিল আকারে বিধানসভায় পেশ করে পাশ করানো হয়। তখন থেকেই রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের অনুমোদিত বিলের তালিকায় 'দ্য ওয়েষ্ট বেঙ্গল সিমেন্ট কন্ট্রোল বিল ১৯৪৮' শোভা পাচ্ছিল। কিন্তু, নিয়ম অনুযায়ী কোনও বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর, তাকে অকার্যকর করতে হলে নতুন করে বিধানসভায় বিল এনে আগের বিলটিকে খারিজ করতে হয়। যার পোষাকি নাম 'রিপিলিং বিল'। বাস্তবে যা হয়নি।
আরও পড়ুন: 'চুরি করে নিয়ে গেলাম', ১০১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কী চুরি করলেন ফিরহাদ হাকিম? তুমুল আলোচনা...
এখন, সব ঠিকঠাক থাকলে, আগামী সোমবার এই বিলটি (দ্য ওয়েষ্ট বেঙ্গল সিমেন্ট কন্ট্রোল রিপিলিং বিল ২০২২) পেশ ও পাশ করাতে বিধানসভায় আনতে চলেছে সরকার। কিন্তু, বিধানসভার সদস্য ও কৌতূহলিরা যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যাস্ত, তাহল, খাদ্য দপ্তরের কথা মত ১৯৮০-র দশকে এই বিল কার্যত ''অকার্যকর " হয়ে গেলেও, তারপর কমবেশি ৪২ বছর কেন লাগল তাকে আইনসিদ্ধ ভাবে অকার্যকর করতে? আর, আইনসিদ্ধ না করে কীসের ভিত্তিতে এত বছর খোলা বাজারে সিমেন্ট বিক্রি মেনে নিল সরকার ও প্রশাসন?
প্রশাসনিক এক কর্তার মতে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ন ত্রুটি। কারণ, কোনও আইন (সে যত তুচ্ছই হোক না কেন) তাকে রদ করতে হলে কোন সরকারি নির্দেশিকা জারি করে করা যায় না। বিভাগীয় সার্কুলার বা নোটিস তো নয়ই। একমাত্র, বিকল্প রাস্তা নতুন করে সংশোধিত বিল বিধানসভায় পাস করিয়ে তাকে আইনে পরিণত করা এবং আগেরটিকে বাতিল করা। এক্ষেত্রে, এ ধরনের একটি আইনকে খারিজ করতে একদিকে দপ্তরের প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতা অন্যদিকে, নিয়ম না মানার মত দুটো বিষয়ই কাজ করেছে৷ যা খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা। এই সমস্ত টানাপোড়েন কাটিয়েই অবশেষে বাতিল হতে চলেছে 'দ্য ওয়েষ্ট বেঙ্গল সিমেন্ট কন্ট্রোল বিল'৷