হ্যাঁ, এই বিশেষ ভাবে সক্ষম কচিকাঁচাদের নিয়ে আয়োজিত হল সাঁতার প্রতিযোগিতা। কথায় আছে ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানে প্রতিবন্ধকতা। ওদের মনের জোর ও বাবামায়ের ইচ্ছার কাছে সমস্ত প্রতিকূলতা হার মানছে। হোক না বিশেষভাবে সক্ষম, তারাও পেরোচ্ছে পুল। আর তার সাক্ষী থাকল গড়িয়া শ্রীরামপুর কল্যাণ সমিতির প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন বিভাগে মোট ৫৫ জন কচিকাঁচা যারা বিশেষ ভাবে সক্ষম, অংশ নিল সাঁতার প্রতিযোগিতায়। সমস্ত সময় ধরে অভিভাবক থেকে ট্রেনার উৎসাহ দিয়ে গেল তাদের। এই প্রতিযোগিতায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৌমিত্র সেন।
advertisement
সপ্তম শ্রেণির এক পড়ুয়া, দৃষ্টিহীন। সে বছর কয়েক ধরেই এই ক্লাবে আসছে সাঁতার শিখতে। শনিবার বিকালে ক্ল্যাপিংয়ের তালে পার হল সুইমিং পুল। আর সেই খুশির উচ্ছ্বাস ওর চোখে মুখে। মাও খুশি। এমন খুশির ছোঁয়ার হাসি সকলের চোখে মুখে। তবে এই পথ পেরোনো অতি সহজ ছিল না, মানছেন ওদের ট্রেনাররা। এখন এই ক্লাবে এমন বিশেষ সক্ষম কচিকাঁচার সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। যাদের প্রশিক্ষণের জন্য ১২ থেকে ১৫ জন রয়েছেন। তাদের একজন কাবেরী মণ্ডল বলছেন, "ওদের মতো করে মন বুঝে আমরা ওদের প্রস্তুত করি। সাধারণ একজন তো বুঝতে পারে কি বলা হচ্ছে, ওরা তো বুঝতে পারে না। তাই আমাদের ওদের মতও করে ধরে ধরে তৈরি করতে হয়। ঝুঁকি থাকে, তবে গত ৬ বছর ধরে ওদের তৈরি করার চ্যালেঞ্জ ভাল লাগছে।"
আরও পড়ুন: তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ কেন হয়েছিলেন? মমতাকে দুঃখ দিতে চাননি, দাবি মিঠুনের
অতিথি হিসেবে উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৌমিত্র সেন বলেন, "ধন্যবাদ জানাব শ্রীরামপুর কল্যাণ সমিতিকে, যারা এই শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে সাধারণের মতো জীবনযাপনের। ঝুঁকি থাকলেও এই ক্লাব যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে, তা দেখে অন্যদেরও এগিয়ে আসা উচিত। এমনকী অভিভাবকদেরও বলব তারাও নিজেদের সন্তানদের ঘরবন্দি না করে রেখে এগিয়ে আসুক।" প্রতিযোগিতা শেষে সকলের হাতেই তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। যা হাতে পেয়ে বাঁধ ভাঙা খুশি ওদের চোখে মুখে।
আরও পড়ুন: অষ্টমীতে রাজ্যে এসে অঞ্জলি দেবেন অমিত শাহ? জল্পনা উস্কে দিলেন সুকান্ত
হঠাৎ বছর ছয় আগে এমনই জনাকয়েক অভিভাবক এসে প্রস্তাব দিয়েছিলেন নিজেদের বিশেষ সক্ষম সন্তানদের সাঁতার শেখানো হোক। সহজ ছিল না। ঝুঁকি ছিল। বিভিন্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ট্রেনারের সঙ্গে আলোচনা করেই গ্রহণ করা হয়েছিল এই চ্যালেঞ্জ, বলছেন উদ্যোক্তারা। তবে অভিভাবকদের মতে, তাঁদের সন্তানরা এখন অনেক ভাল আছেন। শারীরিক থেকে মানসিক বিকাশ, সবেতেই উপকার এসেছে।সমস্ত প্রতিকূলতা হার মানে পুরস্কার হাতে সন্তানকে মায়ের আলিঙ্গনে। সমস্ত অক্ষমতা মুখ লুকোয় বিজয়ী সন্তানের গালে মায়ের চুম্বনে।