ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় পাল্টা শুভেন্দুর বক্তব্যকে অসত্য বলে দাবি করলেন শোভন৷ একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে শোভনের হুঁশিয়ারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মানহানি করার চেষ্টা করলে যতদূর যাওয়ার তিনি যাবেন৷
হঠাৎ করে শোভনের এই সক্রিয়তায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন, তিনি কি ফের তৃণমূলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন? শোভন অবশ্য এই ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন, কোনও কিছু পাওয়ার লোভে নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী হিসেবেই এই প্রতিবাদ করছেন তিনি৷
advertisement
গতকাল শিশির অধিকারীর সঙ্গে দেখা করতে কাঁথিতে তাঁর বাড়ি শান্তিকুঞ্জে যান বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷ এই সাক্ষাৎ পর্ব শেষেই শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমের সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন, 'নন্দীগ্রাম না হলে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না৷' বিরোধী দলনেতা স্পষ্ট বোঝানোর চেষ্টা করেন, অধিকারী পরিবার না থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে নন্দীগ্রাম আন্দোলন সফল হত না৷
আরও পড়ুন: 'আমাদের চোর সাজানোর আগে ওরাই বিপদে পড়বে!' সুকান্ত সাক্ষাতের পরই হুঁশিয়ারি শিশিরের
শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্ত্যবের বিরোধিতা করে এ দিন ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন শোভন৷ বিরোধী দলনেতাকে তীব্র আক্রমণ করে শোভনের পাল্টা দাবি, সভা সমিতি বাদ দিলে নন্দীগ্রামে অত্যাচারের সময় শুভেন্দুকে সেখানে দেখাই যেত না৷ ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম গণহত্যার ঘটনা ঘটে৷ সেদিনই রাতে নন্দীগ্রাম রওনা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শোভন বলেন, 'সেদিন আমরা তৃণমূল ভবনে ছিলাম৷ গণহত্যার খবর পেয়ে মমতাদির দু' চোখ দিয়ে জল পড়ছিল৷ বিকেলেই আমরা নন্দীগ্রাম রওনা দিই৷ চণ্ডীপুরে আমাদের আটকানো হয়৷ শুভেন্দুবাবু, ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ আপনি সেদিন চণ্ডীপুরে উপস্থিত ছিলেন? নিজেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হোতা হিসেবে দাবি করেন! পরের দিন ১৫ মার্চ তমলুক, নন্দীগ্রাম হাসপাতালে পৌঁছেছিলাম আমরা৷ শুভেন্দুবাবু আপনি বলুন তো, শিশিরদা (শিশির অধিকারী) মাঝে মধ্যে এসে কোলাঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমাদের সঙ্গী হতেন কখনও কখনও৷ কিন্তু নন্দীগ্রামে যখন দিনের পর দিন অত্যাচার চলছে, তখন একবারও আপনি আগে পা পরে সেখানে উপস্থিত ছিলেন? সভা সমিতি প্রচুর হয়েছিল৷ প্রকৃত সত্য সবার জানা উচিত৷ বিকৃত সত্য তুলে ধরছেন শান্তিকুঞ্জ থেকে৷ বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের মাটি নিয়ে গিয়ে নবান্ন দখল করেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা আন্দোলনের নাম৷ সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে আক্রমণ হয়েছে৷ লক্ষ্মীপুজোর দিনে আপনার এই বক্তব্য শুনে ভেবেছিলাম শিশিরদা অন্তত ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ করবেন৷'
এখানেই থামেননি শোভন৷ সুর চড়িয়ে রীতিমতো বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা আক্রমণ করে তিনি বলেন, 'শালীনতার সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন৷ বলছেন শান্তিকুঞ্জ না থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না? আমি বলছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে আপনি সাংসদও হতে পারতেন না, শহিদের মাকে অন্য বিধানসভায় সরিয়ে আপনাকে নন্দীগ্রাম থেকে জিতিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা, মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসেছিলেন৷ সৃষ্টি স্রষ্টাকে অস্বীকার করলে স্রষ্টার কোনও ক্ষতি হয়না৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ করে আছেন বলে বাংলার মানুষ চুপ করে থাকবেন না৷ তাঁরা সত্যিটা জানেন৷' শুভেন্দুর মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁরও সৃষ্টিকর্তা বলেও মন্তব্য করেন শোভন৷
আরও পড়ুন: TMC-র বিরুদ্ধে আন্দোলনে BJP-র হাতিয়ার তৃণমূলের অস্ত্রই! আন্দোলনে ঝাপাচ্ছে পদ্ম শিবির
গত ২২ জুন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন শোভন৷ দু' জনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়৷ এর পরেই শোভনের তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হয়৷ কিন্তু তার পর বেশ কয়েক মাস কেটে গেলেও শোভনের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘটেনি৷ বরং রাজনীতি থেকে দূরেই ছিলেন তিনি৷ এ দিনের ভিডিও বার্তায় শোভন নিজেও স্বীকার করেছেন, সক্রিয় রাজনীতি থেকে এখন তিনি অনেক দূরে৷ তবে কি পুরনো দল এবং নেত্রীকে বার্তা দিতেই হঠাৎ করে শুভেন্দুকে জবাব দিলেন তিনি?
শোভন অবশ্য ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন, তাঁর কিছু হারানোর নেই, কিছু পাওয়ার আশাতেও এসব করছেন না তিনি৷ শুভেন্দুকে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে শোভন বলেন, 'বিয়াল্লিশ বছর ধরে তাঁর প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম৷ তাই আজ আমার বিবেক বলছে এর প্রতিবাদ করা দরকার৷ তাই বলছি এসব বন্ধ করুন৷ আমিও একদিন বিজেপি-তে গিয়েছিলাম৷ হয়তো এখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে রয়েছি৷ নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য এসব করছেন? এসব করে কি বাংলায় নিজেকে না বিজেপি-কে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন? একসময় আপনার সহকর্মী ছিলাম ভাবতে লজ্জা লাগছে৷ নিজের মানসিকতার পরিবর্তন করুন৷ না হলে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা দরকার, আমি করব৷ আমার কিছু হারাবার নেই, কিছু পাওয়ার আশা নেই৷ প্রয়োজনে মৃত্যু বরণ করতে পারি, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে যদি নিচু, অশ্লীল মানসিকতা নিয়ে আঘাত করেন, তাহলে যদি একজনও প্রতিবাদ করেন, তাঁর নাম হবে শোভন চট্টোপাধ্যায়৷'