জন্মের পরেই সায়নকে পাঠানো হয় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে।সেখান থেকে তাকে শিশু সাথী স্কিমের মাধ্যমে শিয়ালদহ এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের এসএনসিইউ-তে পাঠানো হয়। সেখানেই ৪ এপ্রিল পর্যন্ত রাখা হয় সায়নকে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ডক্টর পরেশ বন্দোপাধ্যায় সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন। এত ছোট বাচ্চার অপারেশন করা এমনিতেই খুব কঠিন। এতো জটিল অপারেশন করার ঝুঁকি অনেক, অথচ খুব দ্রুত অপারেশন না করলে শিশুর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। চিকিৎসক পরেশ বন্দোপাধ্যায় দৃঢ়তার সঙ্গে অপারেশনের পরিকল্পনা করেন। ততদিনে অবশ্য এনআরএসের কার্ডিওলজিস্ট এবং অ্যানেস্থেটিস্টদের টিমও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন এই জটিল অপারেশন করার।
advertisement
আরও পড়ুন: সঙ্গিনীর সঙ্গে দিঘার হোটেলের ঘরে ছিলেন, এরপর কী ঘটল জানেন? শুনলে চমকে যাবেন...
তিন কিলো ওজনের বাচ্চাকে অজ্ঞান করা খুব কঠিন কাজ। কারণ যে কোনও মুহূর্তে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরপুর অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শম্পা দত্তগুপ্ত সেই ঝুঁকি নিতে রাজি হন। ১৩ এপ্রিল ডাঃ শম্পা দত্তগুপ্তর নেতৃত্বে অ্যানাস্থেটিস্টদের টিম ও ডাঃ বিজয় আগরওয়ালের নেতৃত্বে ইনটেনসিভ মেডিসিন ও কার্ডিওলজিস্টদের টিম শুরু করেন এই জটিল অপারেশন। সঙ্গে ছিলেন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান ও নার্সরাও।
আরও পড়ুন: গরমের ছুটিতে ডেস্টিনেশন হতেই পারে পেলিং, কীভাবে যাবেন-কোথায় থাকবেন? জেনে নিন...
কয়েক ঘন্টার অস্ত্রোপচার। শুধু হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা নয়, অপরিণত মহাধমনীটিও গঠন এবং নির্মাণ করা হল কোথাও বোভাইন প্যাচ দিয়ে আর কোথাও শিশুর নিজের দেহের কোষ দিয়ে। আরও একটি জটিল কাজ করা হয়েছিল, তা হল মহা ধমনী (aorta) ও পালমোনারি আর্টেরির স্থানান্তর, যার নাম আর্টেরিয়াল সুইচ প্রসিডিওর (arterial switch procedure with coronary transfer )। এত ছোট শিশুর হার্টে এত জটিল অপারেশন আগে কখনও পশ্চিমবঙ্গের কোনও সরকারি হাসপাতালে হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা ধরে চলে অপারেশন| অপারেশনের পরে সায়নের শারীরিক পরিস্থিতি দেখে খুশি হন ডাক্তাররা।
এনআরএস টিমের মিলিত প্রচেষ্টায় ছোট্ট সায়ন আজ আরোগ্যর পথে। একই সঙ্গে নবজীবন লাভ করেছেন সায়নের পরিবারের সকলেও। সরকারি পরিকাঠামোয় সফলভাবে এত জটিল হার্টের অপারেশন করায় এনআরএসের মুকুটেও যোগ হল জয়ের পালক। এই সাফল্যকে সঙ্গে নিয়ে আগামীদিনে এইরকম আরও ছোট্ট বাচ্চাদের জটিল অপারেশন করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন নীলরতন সরকার হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।
ABHIJIT CHANDA