সূত্রের খবর, চিঠিতে দ্রুত কিস্তির টাকা রিলিজ করার আবেদন জানানো হয়েছে রাজ্যের তরফে। চিঠিতে এও বলা হয়েছে, কেন্দ্রের তরফে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার টাকা রিলিজ না করলে পরবর্তী ক্ষেত্রে ৩০ মার্চের মধ্যে বাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে না। পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকদের কথায় ‘‘কেন্দ্রের তরফে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হোক তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা টাকা রিলিজ না করলে এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।’’ তাই টাকা রিলিজ করার কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এই মুহূর্তে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেই রাজ্যের পক্ষ থেকে পাল্টা চিঠি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রককে বলেই নবান্ন সূত্রে খবর।
advertisement
আরও পড়ুন- মকর সংক্রান্তিতে বড় চমক জিওর, দেশের এই রাজ্যগুলিতেও চালু True 5G পরিষেবা
গত শুক্রবার কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক নবান্নকে চিঠি দেয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় আগের খরচের হিসেব রাজ্যকে দিতে বলে কেন্দ্র। গ্রামীণ আবাস যোজনায় রাজ্য যে আগে খরচ করেছে অনুমোদিত প্রকল্পে তার হিসেব পেলেই তবেই এই প্রকল্পের অনুমোদন মিলবে বলেই কেন্দ্রের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
১১ লক্ষ ৩৬ হাজারেরও বেশি বাড়ি তৈরির অনুমোদন কেন্দ্র দিয়েছিল রাজ্যকে। ৮২০০ কোটি টাকারও বেশি টাকা কেন্দ্র অনুমোদন দিয়েছে রাজ্যকে। কিন্তু সেই টাকা এখনও রিলিজ করেনি কেন্দ্র। আর সেই টাকা রিলিজ নিয়েই নয়া শর্ত কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে রাজ্যকে। যা নিয়ে, নতুন করে ফের চাপানউতোর শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে। তবে শুধু গ্রামীণ আবাস যোজনা খরচের হিসেব নয়, একশো দিনের গ্রামীন কর্মসংস্থান প্রকল্পের আগে অনুমোদিত খরচের হিসেব চাইল কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রক। যার জেরে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার অধীনে বাড়ি তৈরির কাজ কার্যত বিশবাও জলে বলেই মনে করছেন নবান্নের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন- হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে বিশেষ উদ্যোগ, পশু হাসপাতাল তৈরিরও ভাবনা
কয়েকশো পাতার চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে। সেখানে একাধিক প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে রাজ্যকে। যা নিয়ে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সোমবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘী থেকে এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হন। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় কেন্দ্র কেন টাকা দিচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন "আমরা এর বিকল্প ভাবনা চিন্তা করছি। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। একশ দিনের টাকাও আটকে রেখেছে কেন্দ্র। অথচ ১০০ দিনের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্প নিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হয়েছে।" আর এর জেরেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্যে গ্রামীণ এলাকার গরীব মানুষের জন্য ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮ টি বাড়ি নির্মাণ কীভাবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয়ন মন্ত্রক এই প্রকল্প রূপায়ণের নিয়ম মেনে, ১০২০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা চিঠি দিয়ে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরকে জানিয়েছিল। গত বছরের শেষ দিনের মধ্যেই এই টাকা রাজ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্য সে টাকা পায়নি।
নবান্ন সূত্রের খবর, গত ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয়ন মন্ত্রক এই প্রকল্পের অনুমোদনের কথা রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। এই চিঠিতে প্রকল্প খরচের ৬০ শতাংশ অর্থ হিসেবে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। সেইমতো বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ রাজ্যকে দিতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বরাদ্দ না করলে রাজ্য তার অংশ দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া নির্মাণ খরচ হিসেবে একশো দিনের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু শ্রম দিবস দেওয়া হয়। এছাড়াও বাড়িগুলিতে শৌচালয় তৈরি করে দিতে হবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায়। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের হিসেবে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি তৈরি করতে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। সেই মতো রাজ্যকে প্রায় ৪,৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে। এই টাকার সংস্থান আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও রাজ্য করে রেখেছে। কিন্তু কেন্দ্রের টাকাই এখনও এসে পৌঁছয়নি।
এই প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে যাতে গড়িমসি না হয়, তাই প্রথম থেকেই রাজ্যকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় পোর্টালে তুলতে হবে। না পারলে ‘কোটা’ অন্য রাজ্যে চলে যাবে। উপভোক্তাদের নামের সঙ্গে আধার সংযোগ ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। কারণ তিন দফায় আধার বেস পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণের টাকা দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিতর্কের মধ্যে রাজ্য সরকার ত্রিস্তরীয় যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে ফেলে। ৯০ দিন অর্থাৎ ৩১ মার্চের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ শেষ করার জন্য রূপরেখা তৈরি করে দেয় রাজ্য সরকার। তাতে নির্মাণ কাজে ইঁট, সিমেন্ট-সহ নির্মাণ সামগ্রী কিভাবে সংগ্রহ করা হবে, রাজমিস্ত্রিদের প্রশিক্ষণ এবং তদারকির কাজ আধিকারিকরা কী ভাবে করবে তা বিস্তারিত বলা হয়। এমনকী, ভাল গুনগতমানের কাজের জন্য প্রশাসনের নিচুতলায় ইনসেনটিভ দেওয়ার কথা বলা হয়। নতুন বছরের প্রথম ১২ দিন কেটে গেলেও টাকার অভাবে প্রকল্প রূপায়ণের কাজই শুরু করা যাচ্ছে না।