TRENDING:

'না প্রেম, না লেখা, না রাজনীতি...কিস্যু হল না!' ভেসে চলে গেলেন কবি রাহুল পুরকায়স্থ, না ফেরার দেশে!

Last Updated:

কবিতার পাশাপাশি রাহুল পুরকায়স্থর দ্বিতীয় প্রেম ছিল সাংবাদিকতা। একাধিক প্রথম সারির সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। সংবাদের পরতে পরতে মিশিয়েছেন ভাবনা, বিশ্লেষণ, ও অনুভবের গভীরতা। যাঁর কলমে থাকত একধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা, যিনি ছিলেন অনেকের কাছে ভরসার আর এক নাম।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
“শূন্য গ্রীবা শূন্য জিহ্বা শূন্য কবিতারা…” জমিয়েছিল আশঙ্কার মেঘ। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টারে ভরেছিল— রাহুল পুরকায়স্থ (Rahul Purkayastha) ভাল নেই। কবি ভাল নেই। প্রিয় সাংবাদিক ভাল নেই। নাগেরবাজারের এক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন শুধু রাহুল নন, তাঁর অগণিত ভক্তরাও। সাহায্য চাই! দূরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় ইতিমধ্যে সব অর্থ নিঃশেষিত হয়েছিল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন শহরের আরও বহু কবি ও শিল্পীরা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ৬০ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাহুল পুরকায়স্থ। তিনি যেমন বহু মানুষের হৃদয়ের কবি, তেমনই ছিলেন প্রথম সারির কিছু সংবাদমাধ্যমেরও বুনিয়াদ।
News18
News18
advertisement

শিকড় শ্রীহট্টে হলেও, তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বেলঘরিয়ায়। বড় হয়ে ওঠা উত্তাল সাতের দশকে। অল্প বয়সেই কলম ধরেছিলেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্ধকার, প্রিয় স্বরলিপি’। এরপর একের পর এক— ‘আমার সামাজিক ভূমিকা’, ‘নেশা এক প্রিয় ফল’, ‘সামান্য এলিজি’র মতো গ্রন্থ বাংলা কবিতার জগতে তাঁকে এনে দেয় এক নিজস্ব পরিচয়।

পদত্যাগেও এলাহি জীবন! জগদীপ ধনখড়ের নতুন ঠিকানাই এখন বড় চমক! বাংলো যাপন কতদিন, কী সুবিধা পাবেন ধনখড়? অবিশ্বাস্য!

advertisement

আজীবন কবিতার প্রতি নিবেদিত রাহুল পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন। তাঁর বহু কবিতা অনুবাদ হয়েছে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায়। পাশাপাশি পেশাগত জীবনে যুক্ত ছিলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম। আর দ্বিতীয় প্রেম? সাংবাদিকতা। একাধিক প্রথম সারির খবরের কাগজের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছে তাঁর কর্মজীবন। প্রতিদিনের খবরে ঢুকে পড়ত আরেকটা স্তর — ভাবনার, বোধের, বিশ্লেষণের। ভালবাসায়, সাফল্যের ওমে থেকেও আয়ু লেখা হল না তাঁর বেশি। কবিতায় এই ভাবেই হয়তো আক্ষেপ ফুটেছিল রাহুলের— “ভাবি বিপর্যয়। একেক দিন ভাবি আমার

advertisement

কিস্যু হল না। না প্রেম, না লেখা, না রাজনীতি,

অর্থাৎ আমার বেঁচে থাকা হল না, ইহজীবনে আমিও চলেছি ভেসে।”

প্রয়াত আজিজুল হক! জটিল জীবনে ‘কারাগারে ১৮ বছর’ কেটেছিল নকশাল আন্দোলনের পুরোধার!

গত ২২ জুলাই ভোর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পালস ওঠানামা করছিল সমানে। একটি ইনজেকশনে সাময়িক স্থিতি এলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শুক্রবার দুপুর ২টো ১০ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কবিতার পাশাপাশি রাহুল পুরকায়স্থর দ্বিতীয় প্রেম ছিল সাংবাদিকতা। একাধিক প্রথম সারির সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। সংবাদের পরতে পরতে মিশিয়েছেন ভাবনা, বিশ্লেষণ, ও অনুভবের গভীরতা। যাঁর কলমে থাকত একধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা, যিনি ছিলেন অনেকের কাছে ভরসার আর এক নাম।

advertisement

ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, একমাত্র ভরসা এক্সটারনাল পেসমেকার বসানো, তবে তার ঝুঁকি কম নয়। পরিবারের সম্মতিতেই শেষ পর্যন্ত সেই পথেই হাঁটতে হয়। রাহুলকে ইনটিউবেশন করে চিকিৎসকেরা সময় কেনার লড়াই শুরু করেন। ২৩ জুলাই, সাময়িক স্বস্তি — পেসমেকারের কারণে হার্টরেট নিয়মিত। কিন্তু সেপসিসের সংক্রমণ তখন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। সিআরপি লাফিয়ে বেড়ে গেল ১০০-র গণ্ডি ছাড়িয়ে। ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে কলিস্টিন ব্যবহার শুরু করেন। ২৪ জুলাই, ডাক্তার জানান — ছ’টি অঙ্গ অকেজো, ল্যাকটেট বেড়েই চলেছে, শুরু হয়েছে ডায়ালিসিস। কিন্ত তারা জানতেন, সময় বড় বেশি নেই হাতে। সেই সময় এতই যে কম ছিল বোঝেননি ভক্তরা। তাই শহর জুড়ে হাহাকার।

advertisement

রাহুল পুরকায়স্থ — নামে জড়িয়ে থেকে যাবে এক নিঃশব্দ সন্ন্যাসীর দীর্ঘ সাধনার কথা। জন্ম ১৯৬৪ সালের ৬ ডিসেম্বর, কলকাতায়। বেলঘরিয়ার উপকণ্ঠে বড় হয়ে ওঠা এই মানুষটির কৈশোর কেটেছে উত্তাল সত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে। আশির দশকে কবিতা লিখতে শুরু করেন, দ্রুত চিনিয়ে দেন নিজের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। ছোটো-বড় মিলিয়ে কুড়িটি কবিতার বই — প্রত্যেকটিই যেন শব্দের শরীর ভেদ করে পৌঁছে যায় অনুভবের গভীরে।

রাহুল পুরকায়স্থ শুধুই কবি ছিলেন না। তিনি ছিলেন এক নির্ভরতার নাম, এক বাতিঘর, যাঁর আলোয় নতুনরা পথ চিনেছে। শিকড় ছিল শ্রীহট্টে, কিন্তু জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। আর সেই দুই ভূমির মাটি মিলেমিশে তৈরি করেছিল তাঁর আত্মাকে।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

সেই আত্মা মুক্ত হল শব্দের ঊর্ধ্বে। নতুন কবিতা আসবে না, কিন্তু তাঁর লেখা বাঁচিয়ে রাখবে সময়, নীরব অথচ নিবিড় আলো হয়ে। রাহুল পুরকায়স্থ নেই। কিন্তু তাঁর ভাষা আছে, রাহুলের লড়াই আছে, রাহুলের রেখে যাওয়া গন্ধ এখনও বাতাসে ভাসে। শব্দেরা থেমে গেল ঠিকই, কিন্তু কবি এখনও আছেন। হৃদয়ে হৃদয়ে, শিক্ষক হয়ে।

বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
'না প্রেম, না লেখা, না রাজনীতি...কিস্যু হল না!' ভেসে চলে গেলেন কবি রাহুল পুরকায়স্থ, না ফেরার দেশে!
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল