পঞ্চায়েত ভোটের আসন সংরক্ষণে গরমিলের অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মামলাকারীর দাবি ছিল, ওবিসি আসন সংরক্ষণে শাসক দলকে সুবিধা করে দিতে আসন সংরক্ষণে দু'রকম পদ্ধতি নিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ঘোষণা করার আগে সংরক্ষণ তালিকা নতুন করে নিয়ম মেনে করতে হবে। কিন্তু, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্বাচন স্থগিত রাখার কোন নির্দেশ দেননি। হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন শুভেন্দু। কিন্তু, জরুরি ভিত্তিতে এই মামলা শুনতে রাজি হয়নি শীর্ষ আদালত। সেক্ষেত্রে, আগামী ৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে পঞ্চায়েত মামলার শুনানির সম্ভবনা। তার আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করতে পারে, এই আশঙ্কায় ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ভোটের দিন ঘোষণায় স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু, সেই আর্জিও খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। ফলে, শুভেন্দুকে এখন সুপ্রিম কোর্টের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
advertisement
আরও পড়ুন: প্রয়াত বেলুড় মঠের সহ সংঘাধক্ষ্য স্বামী প্রভানন্দ, শোকে বিহ্বল অগণিত ভক্ত
আসন সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু অধিকারী হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা করেছেন, সেই মামলার জেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণায় বিলম্বের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না কমিশন। কমিশনের মতে, সাধারণভাবে, মে মাসের শেষের দিকে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার সম্ভবনা। কিন্তু, কোনোভাবে আদালতের গেরোয় এই মামলার নিষ্পত্তি করে মে- জুন মাসে নির্বাচন না করা গেলে, চলতি বছরে পঞ্চায়েত নির্বাচন আটকে যেতে পারে। কারণ, জুলাই থেকে রাজ্যে বর্ষার মরশুম। এরপরেই পুজোর বাজনা বেজে যায়। আর, আগামী বছর লোকসভা ভোটের জন্য এবার পুজোর পরেই লোকসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে। তখন,পঞ্চায়েত ভোট কার্যত বিশ বাঁও জলে চলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ট্রাকের খালাসি থেকে কয়লা খনির মালিক! মৃত BJP নেতা রাজু ঝার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ
সিপিএম-এর দাবি, এটাই চাইছে তৃণমূল আর বিজেপি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত তৃণমূলের অবস্থা এখন তথৈবচ। দলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী জেলে। একদিকে, শিক্ষিত যুবক যুবতীদের জন্য নেই কোনও কর্মসংস্থান, আর অন্যদিকে সরকারি কর্মচারিদের ডিএ না দিয়ে তাদের চোর, ডাকাত বলে অপমান করা। এই পরিস্থিতি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে ধরনায় বসছেন। দুয়ারে সরকার করে মানুষকে আর একবার ধোঁকা দিতে চাইছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনমোহিনী নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আর সেইভাবে আম আদমির কাছে মেসায়া হয়ে উঠতে পারছেন না। রাজ্যের বিজেপিকে যারা তৃণমূলের বিকল্প ভেবে ভরসা করেছিল, তাদের ভুল ভাঙছে। সাম্প্রতিক সাগরদিঘি, ঝালদার উপ নির্বাচন তার প্রমাণ। সেই কারণেই তৃণমূল, বিজেপি ২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে নতুন করে মানুষের রায় নিতে সাহস দেখাচ্ছে না। তাই, নানা ছুতো নাতায় কেউ আদালতে গিয়ে ভোট আটকাতে চাইছে। আর কেউ কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে আন্দোলনের কথা বলে বাজার গরম করতে চাইছে।
তবে, সিপিএমের অভিযোগের জবাবে শুভেন্দুর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছিল বলেই আজ বাম, কংগ্রেস সাগরদিঘি বা ঝালদায় খাতা খুলতে পেরেছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না৷ আর, তৃণমূলের মতে, একটা সাগরদিঘিতে রামধনু জোট করে আসন জেতা যায়। ২৯৪ টা বিধানসভা আসনের লড়াইটা এত সহজ নয়। যে কেউ পাগলের মতো ভোট আটকাতে আদালতে যেতেই পারে। দেশের নির্বাচন কমিশন বা আদালত এত মূর্খ নয়।