সাম্প্রতিক অতীতে সংসদের বাদল অধিবেশনে তৃণমূলের সর্বাত্মক আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন অর্পিতা। সংসদ ভবনের দরজার কাঁচ ভাঙা নিয়ে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন তিনি। দলের সঙ্গে কখনই তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তেমন কোনও কানাঘুষোও রাজনৈতিক মহলে ছড়ায়নি। বরং ২০১১-এর সেই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের যে ডানায় ভর করে বিদ্বজ্জন সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূলে এসেছিলেন অর্পিতা ঘোষ, তা বরাবর চড়াইয়ের দিকেই এগিয়েছে। তাই তাঁর ইস্তফা স্বাভাবিক কারণেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আতস কাঁচের তলায় এসে পড়ছে।
advertisement
তবে, জল্পনার পারদ তেমন চড়তে দেননি অর্পিতা নিজেই। তৃণমূলের অন্দরেও যখন তাঁর পদত্যাগ নিয়ে প্রবল আলোচনা শুরু হয়েছে, অর্পিতা তখন চিঠি পাঠিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee)। আর সেই চিঠিতেই যাবতীয় জল্পনা-কল্পনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্বের প্রধান অভিষেককে চিঠিতে অর্পিতা লিখছেন,
প্রিয় অভিষেক,
নাটকের মঞ্চে এবং নাগরিক আন্দোলনে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর তৃণমূল কংগ্রেসে থিতু হয়ে আমি এই সফর দারুণ উপভোগ করছি। দল আমাকে কখনও লোকসভার সাংসদ হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে, কখনও আমায় জেলা সভাপতির পদাধিকার দেওয়া হয়েছে, তেমনই আমি কাজ করেছি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবেও। কাজের সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।
২০২১ সালের মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের অবিস্মরণীয় জয়ের পর আমি ভাবতে শুরু করি, দলে আমার ভূমিকাটা এই মুহূর্তে ঠিক কী হওয়া উচিত। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে সংগঠনের কাজ করতে পারলে, বিশেষত আমার নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে কোনও সংসদীয় মন্ত্রিত্ব ছাড়াই দলের কাজ করার সুযোগ পেলে আমি বেশি উৎসাহিত হব। আমার লক্ষ্য খুব পরিষ্কার। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
আমার মনে হচ্ছে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলে আমি রাজ্যে ফিরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কাজের প্রতি সুবিচার করতে সক্ষম হব। এই ভাবনা থেকেই আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি। এবং বিধি মেনেই আমি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান-এর কাছেও আমার পদত্যাগপত্র জমা দেব।
আপনি যদি আমার এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং তৃণমূলের একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে এগিয়ে যেতে আমায় সাহায্য করেন, তবে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
বিনীত
অর্পিতা ঘোষ
অর্পিতার এই চিঠির বয়ান সামনে আসার পর জল্পনা কতটা জারি থাকবে, তা সময় বলবে। তবে, তৃণমূলের একটা সূত্র বলছে, আসলে দিল্লিতে নয়, অর্পিতার ইচ্ছে অনুযায়ীই তাঁকে রাজ্যে ব্যবহার করবে দল। এছাড়াও ত্রিপুরা বা অসমে যেভাবে সংগঠন বিস্তার করছে তৃণমূল, আর তাতে এ রাজ্যের নেতা-নেত্রীদের যেভাবে নিত্যদিন সংগঠনের কাজে পাঠানো হচ্ছে, সেখানেও অর্পিতার মতো ডাকাবুকো মুখকে ব্যবহার করা অনেক বেশি ফলপ্রসূ বলে মনে করছে দলেরই একটা বড় অংশ। সেদিক থেকে দেখলে অর্পিতা ঘোষের ইস্তফা তৃণমূলের জন্য কোনওরকম অস্বস্তির নয়। বরং তা অনেক বেশি দলীয় পরিকল্পনারই অংশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর জাতীয় রাজনীতিতে যেভাবে তৃণমূলের হয়ে আসরে নামছেন সুস্মিতা দেব, সাকেত গোখেলের মতো নাম, তেমনই সাংগঠনিক বিস্তারের রাজনীতিতে অর্পিতা ঘোষের মতো মুখকে আরও আগ্রাসীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা অর্পিতা ঘোষের, কারণ হিসেবে তৃণমূল সূত্র বলছে...
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ অবশ্য বলছে, রাজ্য রাজনীতিতে কাজ করতে আগ্রহী বলে নিজেই লিখেছেন অর্পিতা। সেক্ষেত্রে শান্তিপুর, দিনহাটার মতো আসন এখন বিধায়কশূন্য হয়ে রয়েছে। শান্তিপুর থেকে জগন্নাথ সরকার ও দিনহাটা থেকে নিশীথ প্রামাণিক জিতেও ইস্তফা দিয়েছেন নিজেদের সাংসদ পদ অক্ষুন্ন রাখতে। ফলে সেই আসনগুলির মধ্যে একটিতে অর্পিতা ঘোষকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর উত্তরবঙ্গের রাজনীতি বিগত কয়েক বছরে অর্পিতা যথেষ্টই বুঝে নিয়েছেন বালুরঘাটের সৌজন্যে। ফলে অনেকেই তাঁকে দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী বলেও ইতিমধ্যেই জল্পনা জুড়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে যেমন জল্পনা শুরু হয়েছে অর্পিতার ছেড়ে যাওয়া রাজ্যসভার আসনে কাকে পাঠাবে তৃণমূল, সেই নাম নিয়ে।
