হ্যাঁ। স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে এগিয়ে আসে হাজারো মানুষ। কোভিড এবং বিভিন্ন কারণে জেলায় সেভাবে রক্তদান হয়নি। এর ফলে রক্তের ভাঁড়ার কিছুটা ফাঁকা ছিল। ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর রক্তের চাহিদা বেড়ে যায়। চিন্তায় পড়ে ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ছাত্র থেকে যুব, নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেই এগিয়ে আসে রক্ত দিতে। এদিন যেন সবাই এক হয়ে গিয়েছিল। ছিল না কোনও রাজনীতির রং বা অমানবিকতার ছবি (Maynaguri train accident)। এই মানবিকতা মিলিয়ে দিল সকলকে। প্রমাণ করে দিল, রক্তের রং এক, এবং আমরা সবাই এক।
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ছবি এবং হেল্পলাইন নম্বর। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো এসে উপস্থিত হয় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল ও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে (Maynaguri train accident)। রীতিমত গভীর রাত পর্যন্ত সেই ভিড়ের ছবি বহাল থাকে। মানবিকতা আজও বেঁচে আছে, এটা কাল রাতের রাস্তায় নেমে যেন আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
কেউ এগিয়ে না এলে কী হত, ভেবেই কেঁপে উঠছে ব্লাড ব্যাংকে কর্মরত কর্মীরা। তাঁরা বারবার উল্লেখ করেন, মানুষ মানুষের জন্য। তাই সকলেই সমান সহযোগিতা করেছে। এই ঘটনার পর সকলেই নিজের একশো শতাংশ দিয়েছেন। এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ডিরেক্টর ডাঃ মৃদুময় দাস বলেন, "আমাদের কাছে সবমিলিয়ে ৬০ ইউনিট রক্ত ছিল। কিন্তু কাল রাত থেকে এখনও পর্যন্ত সমস্ত রাজনৈতিক দল বলুন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলুন, সকলেই এসে রক্ত দিচ্ছে। সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছে এর ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। মোটামোটি সমস্ত গ্রুপের কালেকশন করেছি। আমরা প্রস্তুত। আমাদের কাছে এবি নেগেটিভ (AB-) ব্লাডের স্টকও রয়েছে। ১০০জনেরও বেশি রক্ত দিয়েছেন।" (Maynaguri train accident)
এদিন শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার বাসিন্দা রুদ্রপ্রসাদ বসাক, বর্ষা ভৌমিক, কার্তিক দাস, প্রশান্ত আচার্য, পূর্ণা দাস ছুটে আসে রক্ত দিতে। তাদের সকলের কথায়, "মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে না তো কে দাঁড়াবে? আমরা সকলেই একে অপরের সাহায্য করব, এটাই তো স্বাভাবিক। আমরা যখন জানতে পারি যে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রক্তের ভাণ্ডার শেষের পথে, আমরা ফোনে যোগাযোগ করে চলে আসি হাসপাতালে। এসে দেখি শতাধিক মানুষ মানবিকতার পরিচয় দিতে এসেছেন। "
এদিকে জলপাইগুড়িতে রক্ত দিতে এগিয়ে আসেন রেড ভলেন্টিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকরা। জলপাইগুড়ি ব্লাড ব্যাংকে আবার বি-নেগেটিভ রক্ত ছাড়া কিছু ছিল না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে ডাক্তারদের আপাতকালীন পরিস্থিতিতে ডেকে নেওয়া হয়। এক কর্মী বলেন, "কী করব আমরা কেউ বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কোথা থেকে রক্ত জোগাড় করব? কী করব, কাকে বলব? এর মধ্যে দেখি দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে এসেছেন রক্ত দিতে।"
জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, "সবাইকে রক্তদান করার কথা আলাদাভাবে বলতে হয়নি। তাঁরা নিজেরাই এসে রক্ত দিয়ে যান"। এদিন রাতে শীতের কাঁপুনিও থামাতে পারেনি মানবিকতাকে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে রেড ভলেন্টিয়ার, শাসকদলের ছাত্র নেতা এবং বিজেপি, কংগ্রেসের সমস্ত যুব নেতারা ব্লাড ব্যাংকে হাজির হন। তাঁদের উপস্থিতি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, মানবিকতার আগে কিচ্ছু নয়। রাত ৯টার মধ্যেই ব্লাড ব্যাংকে রক্তের ১২০ ইউনিট জমে যায়। জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি, সবাই যেন এদিন এক হয়ে গিয়েছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, উত্তরবঙ্গের মন এক!
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা নাগাদ ময়নাগুড়ির কাছে দোমহনিতে ভয়াবহ দূর্ঘটনার কবলে পড়ে গুয়াহাটিগামী গুয়াহাটি-বিকানের এক্সপ্রেস। লাইনচ্যুত হয় ট্রেনের ১২টি বগি। দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯ যাত্রীর। দুর্ঘটনার পরপরই ভারতীয় রেলের তরফে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর জখম যাত্রীদের ১ লক্ষ ও অল্পবিস্তর আহত যাত্রীদের ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষনা করেছে। ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর।
Vaskar Chakraborty