বর্তমানে নার্সারি ব্যবসায় ভাল আয়ের সুযোগ আছে। এই ব্যবসা গ্রামীণ এলাকাতে আরও সহজ। খাটার ইচ্ছে এবং গাছের চাহিদা সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সহজেই নার্সারি ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব। কাটিং, গ্রাফটিং বা পটিং করার মতো বিষয়গুলি অবশ্য শুরুতেই জেনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে কোন গাছকে কেমন মাটি দিতে হবে, কতটা জল দেওয়া প্রয়োজন, কী সার ব্যবহার করবেন এই বিষয়েগুলি বিজ্ঞানসম্মতভাবে জেনে নেওয়া দরকার। এর জন্য অনেক জায়গায় ট্রেনিং দেওয়া হয়। কোনও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে নার্সারি ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
advertisement
আরও পড়ুন: কম্বল কাণ্ডে চৈতালীকে আগাম জামিন সুপ্রিম কোর্টের
গার্ডেনিংয়ের এই নেশা অনেকটা সংক্রামকের চেহারা নিয়েছে। কোনও বন্ধু বা প্রতিবেশীকে বাগান করতে দেখে অন্যরা একইভাবে গাছ কিনে এনে বাড়ির ছাদ বা সামনের এক ফালি জমিতে দুর্দান্ত সব ফুল, ফল ফলাচ্ছেন। অনেকে আবার বাড়ির বারান্দার টবে বা সামনের ছোট্ট লনে নানান মরশুমি সবজি চাষ করছে।
সাধারণত দেখা যায় গ্রামীণ নার্সারিগুলো থেকে শহরে ছোট ছোট দোকান পাইকারি গাছ কিনে থাকে। তার বিনিময়ে ভাল দাম পান নার্সারি ব্যবসায়ীরা। তবে চারা গাছের চাহিদা শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে ভাবলে ভুল হবে। গ্রামেও অনেকে এইভাবে গাছ কিনে বাগান করছেন। আগে মূলত রথের দিন সহ বছরের কয়েকটি নির্দিষ্ট সময়ে চারা গাছের কেনাকাটা বেশি হতো। তবে এখন সারা বছরই বেচাকেনা চলে। তাছাড়া বহু সংগঠন উপহার হিসেবে মানুষজনকে আজকাল গাছের চারা দিচ্ছে। রক্তদান শিবিরগুলোয় এই প্রবণতা অনেক বেশি মাত্রায় দেখা যায়। তার ফলেও লাভবান হন নার্সারি ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্কে প্রথমবার লকার খুলছেন? তাহলে মাথায় রাখতে হবে এই বিষয়গুলি!
শীতের মরশুমে নানান বাহারী ফুল গাছের চাহিদা থাকে। অন্যদিকে বর্ষায় লেবু, আম, পেয়ারা, জামরুলের মতো নানান কলমওয়ালা ফল গাছের চারার চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। সারা বছরই ভাল চাহিদা থাকে ক্যাকটাস জাতীয় গাছের। এগুলো বিক্রি করে নার্সারি মালিকরা ভাল দাম পান।
গ্রামীণ এলাকায় নার্সারি তৈরি করা তুলনায় অনেকটাই সহজ। এখানে সহজে বড় গাছ লাগিয়ে তার কলম থেকে চারা তৈরি করা যায়। জায়গাও পাওয়া যায় অনেকটা। তাছাড়া প্রয়োজনীয় সার, মাটি, জল ইত্যাদিরও পর্যাপ্ত যোগান থাকে। হাওড়ার এক নার্সারি মালিক রুপালী ঘুকু এই প্রসঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, তিনি ২০-২৫ বছর নার্সারির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সারা বছরই কম বেশি চাহিদা থাকে গাছের। শীতে এবং বর্ষায় চাহিদা বাড়ে। প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা সময় দিলে ভালোভাবেই নার্সারির ব্যবসা সামলানো যায়। তবে সময় যত বেশি খরচ করবেন নার্সারি তত সমৃদ্ধ হবে। যত বিভিন্ন ধরনের ও প্রজাতির গাছ রাখবেন ততই ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। তবে ব্যবসায় সৎ থাকতে হবে। ক্রেতার অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে ঠকিয়ে অতিরিক্ত দাম নিলে তিনি আর ফিরে আসবেন না। পাশাপাশি নার্সারি ব্যবসাতে ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব কিছুতে টাকার কথা না ভেবে কী করলে একজন ক্রেতার বাগান আরও ভাল হবে, সুন্দর দেখতে লাগবে, কোন মাটিতে কী ধরনের গাছ লাগালে ভাল এই সংক্রান্ত পরামর্শগুলি যদি বন্ধুত্বের মোড়কে দেওয়া যায় তবে ক্রেতাদের মধ্যে নার্সারি মালিক সম্বন্ধে আস্থার জায়গা তৈরি হয়। যা মূল ব্যবসার সমৃদ্ধিতে অনেকটা সাহায্য করে।
রাকেশ মাইতি