১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে আমাদের দেশ তথা ভারত বর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে প্রতি বছর ১৫ অগাস্ট দেশজুড়ে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস। এবার বছর ভোর উৎসব, ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশজুড়ে 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব' পালিত হল। প্রধানমন্ত্রী বার্তা দেন 'হর ঘর তেরাঙ্গা' সেই মতো দেখা যায় হাওড়া জেলার গ্রাম শহর প্রায় সর্বত্রই এ বছর স্বাধীনতা দিবস দেশবাসীর কাছে আরও উৎসব উন্মাদনার। প্রতি বছর এই বিশেষ দিনে, যেমন জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় সেই সঙ্গে পতাকা উত্তোলন প্রাঙ্গণ বিভিন্ন সাজে সাজানো হয় রঙ্গলি তেরঙায় রাঙিয়ে দেওয়া হয় পতাকা উত্তোলন স্থল। এর পাশাপশি প্রতীকি পতাকা এবং ছোট বড় পতাকা দিয়ে সাজিয়ে তুলতেও দেখা যায় বিভিন্ন স্থান।
advertisement
আরও পড়ুন: হুমকি চিঠি নিয়ে বিচারকের কাছেই মুখ খুললেন অনুব্রত মণ্ডল, তোলপাড় পড়ল বাংলায়
একাধারে ১৫ অগাস্ট অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে দেশবাসীর মধ্যে ভারতমাতাকে অর্থাৎ দেশের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা জানানোর ছবি ফুটে ওঠে। তবে সেই মুহূর্ত পার হলে, কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে বা রাত পোহালেই দেশের জাতীয় পতাকা জরে থাকে মাটিতে, শুরু হয়মায়ের অবমাননা ! বলছেন হাওড়া বালির ফ্ল্যাগম্যান 'মনু'। এই ফ্ল্যাগম্যান একজন সাধারন মানুষ তার মা তাকে এই নাম দেননি। তার কর্মের দ্বারা দেশবাসীর কাছে হাওড়া বালির প্রিয়রঞ্জন ওরফে মনু পরিচিতি পেয়েছে ফ্ল্যাগম্যান নামে।
আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা উৎসাহ ভাতা, চমকে দিল নবান্ন! আশাকর্মীদের জন্য বিরাট ঘোষণা
শৈশবে মা আভা দেবীর কাছে দেশ ভক্তি অর্থাৎ দেশ মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান জানানোর অনুপ্রেরণা। মনু জানায় মা বারবার বলতেন, তার এই মায়ের মতই ভারত মাতা আরও একজন মা। মাকে যেভাবে সম্মান জানানো প্রয়োজন দেশ মাতাকেও সেই ভাবেই সম্মান জানাতে হয়। সেই মন্ত্রই পাথেয় করে এগিয়ে চলা ভারত মায়ের সম্মান রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে সময়ের শিশু আজকের ফ্ল্যাগম্যান, মনু। যখন ১৫ অগাস্ট দেশজুড়ে উৎসব চলছে। তখন ফ্ল্যাগম্যানের বাড়িতে প্রস্তুতি চলছে, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের রেশ একটু ক্ষীণ হলেই বেরিয়ে পড়তে হবে।রাস্তাঘাট নালা নর্দমা পথপান্তরে পড়ে থাকা জাতীয় পতাকা কুড়োতে।
দেশ অর্থাৎ ভারত মাতাকে ভক্তি রেখে এই কাজ, কয়েক বছর আগে শুরুতে বহু মানুষ মোটেই ভালোভাবে নেননি! তাকে শুনতে হয়েছিল কাগজ কুড়ানি , হাবা, বোবা, উন্মাদ আরো কত কি! তবে একান্তে তার মা সাহস যুগিয়েছেন। মা বলতেন, এই কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলো অন্য কিছু ভেবোনা। তোমার এই কাজ এক সময় ইতিহাস গড়বে! লোকের কথায় মন খারাপ হতো তবে, ব্যথিত হৃদয় নিয়ে, এগিয়ে চলেছে। তার বেশি মন খারাপ বা কষ্ট হতো, যখন কেউ তাকে হাবা বা বোবা বলত। আবার নিমিষেই সে ব্যথা যন্ত্রণা ঝেড়ে ফেলত মনু! কারণ মায়ের মন্ত্রকে শিরোধার্য করেছিল সে।
প্রিয় রঞ্জন সরকার ওরফে মনু, এখন তার পরিচিতি ফ্লাগম্যান নামে। তার এই ফ্ল্যাগম্যান নামের ডাক তার পক্ষে যতটা আনন্দের, তার থেকেও ঢের আনন্দের তার মায়ের নামে দেবী যুক্ত হওয়াটা! 'আভা দেবী ' নামে তার মাকে যখন সন্মান দেওয়া হয়, মায়ের নামে দেবী দেখে আনন্দে বুক ভোরে ওঠে তার জানায় ফ্ল্যাগম্যান।
২০০৮ সালে মায়ের নির্দেশে ওপর এক মায়ের সম্মান জানাতে বেরিয়ে পড়া পথে ঘাটে, সে সময়ে একাকী অনেক লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল মনুকে। প্রথম কয়েকটা বছর বাধা-বিপত্তি কটাক্ষের মধ্যে দিয়ে পার হয়। তবে কোন কিছুতেই ভাঙতে পারেনি তার মনোবল। ধীরে ধীরে এক এক করে তার সঙ্গে যুক্ত হয় মানুষ! একসময় সে ভেবেছিল এ কাজ তার একার পক্ষে সম্ভব নয় তাই ২০১৬ সালে সে ' মায়ের প্রেরণা ' নামের সংগঠন তৈরি করেন। আজ হাওড়া জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলাতেও তার সংগঠন \" মায়ের প্রেরণা" সদস্যরা ভারত মাকে সম্মান জানাতে কাজ করে চলেছে।
সে জানায় একসময় একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না সম্ভাব নয় দেশজুড়ে কাজ করা, তাই মাকে সম্মান জানাতে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া একটি সংগঠন গড়ার চিন্তাভাবনা। মনু সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই "মায়ের প্রেরণা" সংগঠন গড়ে ফেলেছে। বর্তমানে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছে তার সংগঠনে। এ বছর দেশজুড়ে ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হল, সেই উৎসবে মনু অর্থাৎ ফ্লাগম্যান ও তার সংগঠন শামিল হল ১৫ অগাস্ট মাঝ রাত থেকে ঝাঁপিয়ে পড়লো দেশ মাকে সম্মান জানাতে। পড়ে থাকা অবহেলিত তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা সংগ্রহ করতে।ফ্ল্যাগম্যানের কথায় মা অর্থাৎ জাতীয় পতাকা সর্বদা মাথার উপরে থাকে মাকে সম্মান জানাতে মাথা উঁচু করে তাকাতে হবে।
ফ্ল্যাগম্যান জানায়, ফেলে দেওয়া পড়ে থাকা অবহেলিত জাতীয় পতাকা কুড়াতে তার জন্ম, এভাবেই দেশ মায়ের সম্মান রক্ষা করা তার কাজ। এবার বহু জায়গায় পতাকা উত্তোলনের ডাক পড়েছিল তার, সে মনে করে,পতাকা উত্তোলন করা তার কাজ নয়। তাই আমন্ত্রণে সারা দিয়ে সেখানে পৌঁছতে পারেনি 'ফ্ল্যাগম্যান '।
রাকেশ মাইতি