হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শিবাজী চট্টোপাধ্যায় পেশায় একজন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। সাংসারিক কারণে তার কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। তাই তিনি অগাস্টের ১০ তারিখে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ওয়েল ক্রেডিট নামক একটি কোম্পানি থেকে সাত হাজার টাকা লোন নেন। লোনটি অ্যাপ্লাই করার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিবাজীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৭০০০ টাকা চলে আসে। প্রথমে তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি পরে ঠিক তিনদিনের মধ্যেই তার কাছে ওই সংস্থা থেকে মেসেজ আসে অগাস্টের ১৯ তারিখের তাকে লোনের সুদ সমেত ১২ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে। ওই সংস্থার কথা মতো তিনি ১২০০০ টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। তারপর থেকেই শুরু হয় টাকা দেওয়া ও তোলার জুলুম কান্ড।
advertisement
১২ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া মাত্রই তার অ্যাকাউন্টে আবারও ওই সংস্থার থেকে ১৩৫০০ টাকা জমা পড়ে তার অ্যাকাউন্টে। তখনই শিবাজী চক্রবর্তী ওই কোম্পানিকে ইমেইল মারফত জানায় তার টাকার প্রয়োজন নেই তারপরও তাকে কেন টাকাটি ওরা পাঠিয়েছেন। তার উত্তরে মেলে একটি হোয়াটসঅ্যাপ কল। সেই ফোনে তাকে জানানো হয় অগাস্টের ২৮ তারিখের মধ্যে তাকে ১৭ হাজার টাকা জমা করতে হবে ওয়েল ক্রেডিট কোম্পানিতে। রীতি মতো হোয়াটসঅ্যাপ কল করে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে প্রতারক কোম্পানিটি থেকে। ভয় পেয়ে শিবাজী চক্রবর্তী ১৭ হাজার টাকা আবারও জমা করে দেন। টাকা জমা দেওয়ার পরক্ষণেই আবারও তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৮৫০০ টাকা চলে আসে। আবারও শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপ কল। একইসঙ্গে চলে ব্লাক মেইলিং। শিবাজী চক্রবর্তীর সমস্ত কন্টাক্ট ডিটেলস নিজেদের কবজায় করে নেয় প্রতারক কোম্পানিটি। তার পর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শিবাজী এবং তার স্ত্রীর ছবি নিয়ে তা বিকৃত করে তাদের সন্মান হানির চেষ্টা করে ওই সংস্থা।
শিবাজী চক্রবর্তী জানান, রীতি মতো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে প্রতারক লোন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। টাকা জমা দেওয়ার জন্য রীতিমতো হুমকি দিতে থাকে । এক কথায় বলা চলে টাকা জমা দিতে বাধ্য করে প্রতারক কোম্পানিটি। ভীত এবং সন্ত্রস্ত হয়ে শিবাজী চক্রবর্তীর দ্বারস্থ হন উত্তরপাড়া পুলিশ থানার। সেখান থেকেই তাকে সাইবার ক্রাইম থানায় পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: ২০০ বছর আগের জল এখনও আছে ঘটে! বর্ধমানের এই দুর্গাপুজোর কাহিনি রাজ আমলের!
পুলিশ সূত্রে খবর, যে নাম্বারগুলি থেকে ফোন আসছিল সেগুলি ইন্দোনেশিয়ার নাম্বার। প্রতারণার নতুন জাল বুনছিল প্রতারক লোন কোম্পানিটি। প্রতারক ব্যক্তিকে পুলিশি পরামর্শ দেওয়া হয়, তিনি যেন তার সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনওভাবে জানান যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। আগামীতে যাতে অনলাইনে প্রতারিত হতে না হয় তার জন্য ব্যাংক ডিটেইলস অচেনা কোনও কোম্পানির সঙ্গে শেয়ার করতে বারণ করা হয় পুলিশের তরফ থেকে। কে বা কারা এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত তাদের খোঁজ চালাচ্ছে চন্দননগর সাইবার ক্রাইম থানা।
রাহী হালদার