গত রবিবার বিকেলে ত্রিকূট পাহাড়ে মাঝপথে আটকে পড়ে প্রায় ১২টি কেবল কার। ১১ এবং ১২ এপ্রিল ভারতীয় সেনাবাহিনী, ITBP এবং NDRF-এর সহায়তায় দীর্ঘ উদ্ধারকাজ চালানো হয়। ৬০ জন পর্যটককে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান হয়। ঘটনার পরই ঝাড়খণ্ডের রাজ্য সরকার FIR দায়ের করেছে এবং দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি উচ্চ-স্তরের তদন্তের সুপারিশ করেছে। যদিও কেন্দ্রে দিকে দায় ঠেলে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন (Hemant Soren) দাবি করেছেন, দেশে রোপওয়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় আইন নেই। তার ফলে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
advertisement
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মাত্র তিন সপ্তাহ আগে একটি সরকার-পোষিত একটি সংস্থা ত্রিকূট পাহাড়ের ওই রোপওয়ে-তে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অডিট করে আসে। প্রায় ১,৭৭০ মিটার ওই রোপওয়ের অবস্থা প্রাথমিক ভাবে সন্তোষজনক বলেই জানিয়েছিল অডিট কমিটি। কিন্তু সদস্যরা মোট ২৪টি ত্রুটির কথাও উল্লেখ করেছিলেন। তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সাত বছরেরও বেশি পুরনো দড়িটির উপর। যে দড়ি কেবল কারগুলিকে টেনে নিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, ওই রিপোর্টে স্পষ্ট বলা ছিল যে, দড়িটির উপর নিয়মিত নজরদারি চালাতে হবে। প্রয়োজনে যত শীঘ্র সম্ভব বদলে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন : আরও পড়ুন : হঠাৎ 'নকুলদানা' বিলি করছেন দিলীপ ঘোষ! কিন্তু কেন? 'আসল কারণ' যা বললেন....
ত্রিকূট পাহাড়ে কলকাতা-ভিত্তিক দামোদর রোপওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রা লিমিটেডের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের চুক্তি:
দেওঘরের ওই রোপওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। প্রাথমিক ভাবে, ভারতীয় রেলের অধীনস্থ RITES-ই ছিল ওই রোপওয়ে নির্মাণের উপদেষ্টা। পরে DRIL দরপত্র দিয়ে রোপওয়ে চালানোর চুক্তি লাভ করে। ঝাড়খণ্ড পর্যটনের অধিকর্তা রাহুল সিংহ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, চুক্তির পর থেকে DRIL-ই রোপওয়ের ডিজাইন, নির্মাণ, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। এ জন্য ঝাড়খণ্ড সরকার শুধু বার্ষিক লাইসেন্স ফি নিয়ে থাকে।
DRIL-এর সঙ্গে চুক্তির প্রকৃতি:
২০১৪ সালের ১৬ মে ত্রিকূট পাহাড়ের রোপওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (JTDC) এবং DRIL এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। চুক্তির মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর, যা তিনবার পর্যন্ত বাড়ানো যাবে বলে জানানো হয়। এই চুক্তিতে রোপওয়ে চলাচল এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও দক্ষতার বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল।
আরও পড়ুন : "সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরুন দাদা...", নানুরে অনুব্রতের মঙ্গল কামনায় অভিনব আয়োজন অনুগামীদের
DRIL-এর রোপওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ প্রোটোকল:
রাজ্য সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, DRIL রোপওয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোনও রকম গাফিলতি করতে পারবে না। বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক এবং ত্রৈমাসিক রক্ষণাবেক্ষণের নীতি গ্রহণ করতে হবে। তারই পাশাপাশি রোপওয়ের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করতে দৈনিক পরীক্ষা করা উচিত। প্রতি তিন মাসে পর্যায়ক্রমিক উদ্ধার মহড়ার কথাও বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
DRIL-এর জেনারেল ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) মহেশ মাহোতা দাবি করেছেন যে, উদ্ধার কাজের মহড়া (Rescue Drills) নিয়ম মাফিক পরিচালনা করা হত। যদিও তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসছে অন্য তথ্য। DRIL-এর কিছু কর্মচারীই অভিযোগ করেছেন যে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ট্রলিগুলি খুবই কম ব্যবহার করা হত। উদ্ধার কাজের মহড়া তেমন ভাবে পরিচালিত হতই না।
দেওঘরে রোপওয়ে দুর্ঘটনার কারণ:
ঠিক কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল ত্রিকূট পাহাড়ে? প্রাথমিক তদন্তের পর দাবি করা হয়েছে যে, ১৬ মিলিমিটার ব্যাস যুক্ত ইস্পাতের দড়িটি তার ‘অ্যাক্সেল’ (Axle) বা ঘূর্ণন চাকার খাঁজ থেকে পিছলে গিয়েছিল। আর তারই ফলে দড়িটি কপিকল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার পরেই মাঝ আকাশে আটকে যায় একের পর এক কেবল কার কেবিন। তবে ঠিক কী ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল তা নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে তদন্ত শেষ হলেই।