আরও পড়ুন-পকেটে পেঁয়াজ রাখলে রেহাই মিলবে সানস্ট্রোক থেকে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
অনেকে অফিসে বসে কাজের ফাঁকে সারাদিন টুকিটাকি এটা-সেটা খেতেই থাকেন। আসলে খিদে মেটানোর থেকেও মানসিক চাপ মুক্ত করার জন্য বেশিরভাগ মানুষ সারা দিন মুখ চালিয়ে যান। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর টুকিটাকি খাবারই ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। তবে এতে চিন্তা করার কারণ নেই! সারাদিন টুকিটাকি জলখাবার বা স্ন্যাকস খেতে ভাল লাগলে একটু বুঝেশুনেই খাবার বেছে নিতে হবে (Smart Snacking)। কিন্তু কীভাবে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস (Healthy Snacks) বাছা যায়? আর স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস মানেই তো সেটা সুস্বাদু নয়! তাহলে সেরকম স্ন্যাকস খেয়ে লাভ কী! এই বিষয়েই আলোচনা করছেন অ্যাবট নিউট্রিশন বিজনেস (Abbott's Nutrition business)-এর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্স-এর অ্যাডাল্ট নিউট্রিশন বিভাগের প্রধান ডা. ইরফান শেখ (Dr Irfan Shaikh)।
advertisement
সবার উপরে স্বাস্থ্য:
ডা. ইরফান শেখ জানাচ্ছেন, শরীরে এনার্জি এবং প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টের জোগান দিতে সব থেকে জরুরি হল সঠিক ডায়েট প্ল্যান। শুধু তা-ই নয়, সঠিক সময়ে সঠিক স্ন্যাকস (Right Snacks) খাওয়াও খুবই জরুরি বিষয়। স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস তৈরি করতে সেদ্ধ করা স্প্রাউট স্যালাডের উপরে শসা কুচিয়ে ছড়িয়ে নিতে হবে। সেই সঙ্গে এতে অল্প ছানা এবং টম্যাটো কুচি ছড়িয়ে নিলে খেতে আরও ভাল লাগবে। এই ধরনের স্ন্যাকস আরও সুস্বাদু করে তুলতে সেদ্ধ ছোলা অথবা বিনস এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে দিতে হবে। আবার আর এক ধরনের পুষ্টিকর স্ন্যাকস তৈরির উপায় বলা যাক! সুস্বাদু এই স্ন্যাকস বানাতে এক বাটি দইয়ের সঙ্গে সেলেরি, গাজর, ব্রোকোলি এবং টম্যাটোর মতো কাঁচা সবজি মেশাতে হবে। এই স্ন্যাকস শুধু সুস্বাদুই নয়, এটা প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামেও ভরপুর থাকবে।
আবার স্ন্যাকসের মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যকর বিকল্প হল বিভিন্ন রকম স্মুদি। এগুলি চটজলদি তৈরি করা যায় এবং সুস্বাদুও বটে! পছন্দের কোনও তাজা ফল অথবা সবজি নিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পালং শাক, আমলকি, শসা ইত্যাদি। এই ধরনের ফল বা সবজির স্মুদি বানিয়ে তাতে মিশিয়ে নিতে হবে ডাবের জল। এই স্মুদি প্রোটিন সমৃদ্ধ বানাতে তাতে যোগ করা যেতে পারে কয়েকটা আমন্ড অথবা ওয়ালনাটও। আবার হালকা জলখাবার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে ঘরে তৈরি ইডলি, ধোকলা অথবা ওটসের মতো খাবারও। যা খিদে মেটানোর পাশাপাশি শরীরে পুষ্টিরও জোগান দেবে।
আরও পড়ুন-চালক কোথায়? শোরগোল কলকাতা মেট্রো রেলে
অনেকেই খাবারের পর মিষ্টি খেতে ভালবাসেন। স্বাস্থ্যকর মিষ্টি হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে গুড় দিয়ে তৈরি আতার ক্ষীর এবং নারকেলের দুধ। এছাড়া খাওয়া যেতে পারে রাগির আটা, নারকেল, গুড় এবং বাদামের কুচি দিয়ে বানানো রাগি-নারকেলের লাড্ডু।
সঠিক কারণে জলখাবার:
খিদে মেটানোর থেকেও বেশি ক্রেভিং মেটাতে আমরা সাধারণত স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। আসলে কখনও রাগের ক্ষেত্রে, কখনও বা একঘেয়েমি কাটাতে আমরা স্ন্যাকস বেশি করে খাই। আবার অনেক সময় আনন্দের প্রকাশ অথবা বন্ধুবান্ধব পরিবৃত হয়ে কোনও আড্ডায় আমরা বেশি করে স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খেয়ে ফেলি। এই স্ন্যাকস কতটা খাওয়া হচ্ছে, তার উপর নজরদারি না-চালালে ঘনিয়ে আসবে বিপদ! অনেকেই এক প্যাকেট চিপস অথবা নিমকি জাতীয় খাবার খেয়ে নেন স্ন্যাকস হিসেবে, আর এটাই স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। তাই ডাক্তারবাবু পরামর্শ দিচ্ছেন, স্বাস্থ্যকর খাবার স্ন্যাকস হিসেবে বেছে নেওয়ার অভ্যেস করতে হবে। আর শুধুমাত্র খিদে পেলে তবেই তা খাওয়া উচিত।
স্ন্যাকসে নিয়ন্ত্রণ:
রোজকার স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। স্ন্যাকস খাওয়ার পরিমাণের প্ল্যান:
স্ন্যাকস খাওয়ার পরিমাণ প্রথমেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ঝোঁকের বশে খাবার তাড়না এড়াতে প্রতিদিন কমপক্ষে দু’টো করে স্ন্যাকস খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।
নিজের রোজকার ডায়েট প্ল্যানের নিরিখে পছন্দের স্ন্যাকসের পুষ্টিগুণ বিচার করে নিতে হবে।
বাইরে বেরোলে ব্যাগে ফল এবং বাদামের মতো স্ন্যাকস রেখে দেওয়া উচিত।
কী ধরনের স্ন্যাকস আপনার জন্য উপযোগী, সেই বিষয়ে ডাক্তারবাবু অথবা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যেস করতে চাইলে তাজা ফল এবং সবজি অথবা ফ্লেভারহীন পপকর্ন দারুণ বিকল্প।
আর কর্মক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে স্ন্যাকস খাওয়ার সিদ্ধান্ত কিন্তু শরীর সুস্থ রাখবে এবং মনেও আনন্দ আনবে। খিদে পেলে সঠিক স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যেস বাড়ালে শরীর নীরোগ থাকবে এবং কাজের এনার্জিও বৃদ্ধি পাবে।