দিনকয়েক হল Quora-য় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেক ইউজার এক বিশেষ বিষয় নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন এই সোশ্যাল মিডিয়ার; সবারই জিজ্ঞাস্য এক- এই গরমে পকেটে একটা পেঁয়াজ নিয়ে রাস্তায় বের হলে তা কি আমাদের সানস্ট্রোক বা হিটস্ট্রেক থেকে সুরক্ষা দেবে? গুজব কখন কী ভাবে ছড়ায়, তা বলা মুশকিল! তবে এটুকু বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না যে দাবদাহের হাত থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ আঁকড়ে ধরতে চাইছেন কোনও এক উপায়, আর সেই জায়গায় এসে তাঁরা সন্দিহান হয়ে পড়েছেন প্রচলিত বিশ্বাস নিয়ে। কিন্তু এত কিছু থাকতে পকেটে কাঁচা পেঁয়াজ-ই বা কেন? Representative Image
আসলে, প্রত্যেক সমাজেরই নিজস্ব কিছু টোটকা থাকে। তার সবগুলো যে অব্যর্থ, এমনটা নাও হতে পারে। বেশিরভাগক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ব্যাপারটা লাগলে তুক, না লাগলে তাকের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। পকেটে পেঁয়াজ রাখার ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম-ই- কতটা হাতে-নাতে ফল দেয় এই টোটকা, তা অনেকেই বলে উঠতে পারবেন না। তার পরেও কেন দেশের কিছু অংশের এই টোটকায় বিশ্বাস আছে? Representative Image
পেঁয়াজ এবং হিটস্ট্রোক: আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই যে তীব্র গরমে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে, বিতর্কটা আদতে ওই পকেটে রাখা নিয়ে- ডা. ধন্বন্তরি ত্যাগীও সেরকমই বলছেন। তিনি গরমে পকেটে পেঁয়াজ রাখার কোনও জুতসই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, তুলে ধরেছেন কেবল অনুমাননির্ভর তথ্য। তাঁর বক্তব্য- আগেকার দিনে যানবাহনের তেমন সুবিধা ছিল না, মানুষকে হেঁটেই অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হত, তাই হাঁটার সময়ে পেঁয়াজের মতো ছোটখাটো কিছু থাকলে তা পকেটে রাখা হত! পেঁয়াজের তেল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপকারী, এটুকু উল্লেখ করেই ত্যাগী বিতর্কে ইতি টানতে চাইছেন। Representative Image
এরই পাশাপাশি ত্যাগী দেশের কিছু গ্রামে প্রচলিত এক প্রথার কথাও জানিয়েছেন। গরম থেকে বাঁচতে সেই সব এলাকায় সুকতলায় পেঁয়াজের রস লাগিয়ে রাখার প্রথার উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু এটাও সাফ জানাতে ভোলেননি- এর কোনওটারই অব্যর্থ প্রমাণ নেই, অতএব অনুসরণ করারও মানে হয় না। তার চেয়ে বরং এই গরমে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারলে তা অনেক বেশি কাজে দেবে- এই তাঁর অভিমত! একই বক্তব্য শোনা যাচ্ছে আরেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডা. আশুতোষ গৌতমের মুখেও। তিনি ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন পেঁয়াজের শরীর ঠান্ডা রাখার কারণ। বলছেন, পটাসিয়াম-সোডিয়ামে সমৃদ্ধ হওয়ায় পেঁয়াজ আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা ফের পূরণ করে, ফলে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে। পেঁয়াজ খেলে শরীরে হজমের সহায়ক নানা উৎসেচক ক্ষরণ বাড়ে, ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজমও হয়, পেট গরম হয় না, কার্যত শরীর ঠান্ডা থাকে! Representative Image
গরমে কাঁচা পেঁয়াজের উপকারিতা: শরীর ঠান্ডা রাখা, হজমের সুবিধার কথা তো বিশেষজ্ঞরা বলেছেনই! পেঁয়াজের রস রোদে পোড়া দাগ তুলতে সাহায্য করে, সে দিক থেকে দেখলে এই গরমে ব্যবহারের আরেকটা কারণ পাওয়া গেল! একই সঙ্গে রয়েছে ত্বকসংক্রান্ত সমস্যার আরেক দিক- পেঁয়াজের কোয়ারসেটিন নামের যৌগ হিট র্যাশের মোকাবিলায় কাজে আসে। গরমে বা পোকামাকড়ের কামড়ে আমাদের শরীরে র্যাশ বের হয় হিস্টামিন নামের আরেক যৌগের সক্রিয়তায়, কোয়ারসেটিন এই হিস্টামিনের প্রকোপ কমাতে কাজে আসে। সামগ্রিক ভাবেও পেঁয়াজ আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, অনেক দিক থেকেই গরমে পেঁয়াজ শরীরকে আরাম দেয়, যা দেখা যাচ্ছে! Representative Image