লেবু সারা দেশে মোট ৩.১৭ লাখ হেক্টর বাগানে চাষ করা হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ হল বৃহত্তম লেবু উৎপাদক রাজ্য। এই রাজ্যে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। অন্যান্য প্রধান লেবু উৎপাদনকারী রাজ্যগুলি হল মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ওড়িশা এবং তামিলনাড়ু। লেবু গাছে বছরে তিনবার ফুল ফোটে এবং ফল ধরে। আর এই চক্রের মধ্যেই কৃষকরা এবছর উৎপাদনে সমস্যায় পড়েছেন।
advertisement
লেবু চাষিরা বছরে তিনটি সময় ফসল ফলায়:
অম্বে (Ambe): জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ফুল ফোটা শুরু হয়, এপ্রিলে ফসল তোলা শুরু হয়।
মৃগ (Mrig): জুন-জুলাই মাসে মৃগ বাহারের সময় বাগানে ফুল ফোটে এবং অক্টোবর মাসে ফসল তোলা হয়।
হস্ত (Hasta): হস্ত বাহার ফুলের মরসুম সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয়, মার্চের পর ফসল তোলা হয়।
ফলন এবং সরবরাহ:
অম্বে বাহার (Ambe Bahar) লেবু প্রায় ৬০ শতাংশে বাজারে সরবরাহে অবদান রাখে, যেখানে মৃগ বাহার (Mrig Bahar) ৩০ শতাংশ এবং হস্ত বাহার (Hasta Bahar) বাকি সরবরাহে অবদান রাখে।
আরও পড়ুন : কন্ডোমের জন্য শারীরিক সম্পর্ক সঙ্গিনীর কাছে ভয়ের ও যন্ত্রণাদায়ী হয়ে উঠেছে?
কিন্তু এবার হস্ত বাহারের ব্যর্থতা এবং পরবর্তীতে অম্বে বাহার কৃষকদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে। গত বছরের বর্ষা সারা দেশে ব্যতিক্রমীভাবে ভাল ছিল, কিন্তু সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ব্যতিক্রমীভাবে অকাল ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা লেবুর জন্য ক্ষতিকর, তাই ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চাষে ক্ষতি হয়েছে এবং গাছে ফুল ফোটেনি। এই ফলটি সাধারণত হিমঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হয় এবং পরবর্তী অম্বে বাহার ফল না আসা পর্যন্ত বাজারজাত করা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে লেবুর কম উৎপাদনের কারণে হিমঘরেও কম পরিমাণে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন : এক গাল মুড়িই পারে গরমে আপনাকে সুস্থ রাখতে
অসময়ের বৃষ্টিতে অম্বে বাহার ফলেরও ক্ষতি হয়েছে, কৃষকরা প্রাথমিক পর্যায়ে ফুল ফোটা কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাও ফসলের উপর প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে কচি ফল ঝরে গিয়েছে। গ্রীষ্মে যখন লেবুর চাহিদা বাড়তে থাকে, তখন মজুত থাকা হস্ত বাহার এবং তাজা অম্বে বাহার ফল বাজারে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তাপমাত্রার কারণে প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে।
আরও পড়ুন : স্কুলফেরত বাচ্চার ক্লান্তি থেকে আপনার মাইগ্রেন, গরমের কষ্ট দূর করে মিছরির পানা
পরিবহন খরচ বৃদ্ধি:
ফলন তো কম আছে, সেই সঙ্গে এবার কিন্তু পরিবহন খরচও (Transportation Costs) বেড়েছে। পেট্রল, ডিজেল এবং গ্যাসের দাম বেড়েছে, যার ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে, যার ফলে সবজি ও ফলের দাম বেড়েছে। ২২ মার্চ থেকে ভারতে জ্বালানির দাম ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিবহন খরচ বাড়িয়েছে। সবজি বিক্রেতাদের দাবি, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং ক্রয়মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাহিদাও বাড়িয়ে তুলেছে দাম:
কিন্তু আরেকটি কারণ আছে লেবুর দাম বাড়ার পিছনে। সেটি হল প্রচুর চাহিদা। ভারত বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাই টক ফলের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়াও এই সময়কালে লেবু বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। যার জন্য চাহিদা বেশি থাকে। বিয়ের মরসুম শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠানের জন্য লেবুর চাহিদা আরও বেড়েছে। তা ছাড়া বর্তমান রমজান ও সদ্যোতীত নবরাত্রির জন্যও চাহিদা ছিল তুঙ্গে। উৎপাদন কম ও চাহিদা বেশি থাকায় লেবুর দামও বাড়ছে। গ্রীষ্মকালে লেবুর প্রয়োজন বেশি হয়। ফলে দাম বাড়ায় সমস্যা বাড়ছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদেরও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে চট করে লেবুর দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ব্যবসায়ীরা এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে। পরবর্তী ফসল, যা অক্টোবরের পরে বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, তার পরেই দাম কমতে পারে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, কিছু অম্বে বাহারের আগমনের আশা করা হচ্ছে এমন এলাকা থেকে যেখানে গাছ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবুও, এটা আশা করা যায় না যে তাতে সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও দাম পড়তে পারে- সেই সম্ভাবনা খুবই কম।