TRENDING:

Opinion: অসাধারণ বক্তা, জনতার অনুপ্রেরণার উৎস; প্রধানমন্ত্রী মোদির সব কাজেই রয়েছে মানবিকতার স্পর্শ

Last Updated:

কাজই হোক অথবা ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনাই হোক, সব ক্ষেত্রেই তাঁর মধ্যে রয়েছে মানবিকতার একটা ছোঁওয়া। যা তাঁকে শীর্ষ স্থানে বসিয়েছে।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
Japan Pathak
File Photo
File Photo
advertisement

#আহমেদাবাদ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) জীবনে গত ৭ অক্টোবর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। কারণ সরকারের প্রধান হিসেবে এই দিনেই তিনি কুড়ি বছর পূর্ণ করলেন। আমরা যাঁরা গুজরাতে রয়েছি, তাঁরা খুব কাছ থেকে মোদির উত্থান দেখেছি। আর কী ভাবে তিনি গুজরাতের ভোলই বদলে দিয়েছিলেন, সেটাও আমরা চাক্ষুষ করেছি। অনেকেই জানতে চান যে, কোন বিষয়টায় নরেন্দ্র মোদি সকলের থেকে আলাদা। মানবিক দিক থেকে মোদি আমার কাছে সব থেকে আলাদা। কাজই হোক অথবা ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনাই হোক, সব ক্ষেত্রেই তাঁর মধ্যে রয়েছে মানবিকতার একটা ছোঁওয়া। যা তাঁকে শীর্ষ স্থানে বসিয়েছে।

advertisement

১৯৮০ সাল নাগাদ গুজরাতের রাজনীতিতে একটা অদ্ভুত সময় দেখা গিয়েছিল। সেই সময় রাজ্য ও কেন্দ্র- উভয় জায়গাতেই নিজেদের ক্ষমতা নিশ্চিত করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের নিষ্প্রভ পরিচালনা, তিক্ত দলাদলি এবং ভুলভাল জায়গায় অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও সেই সময় অন্য কোনও দল যে ক্ষমতায় আসবে, সেটা একেবারেই কল্পনা করা যেত না। এমনকী কট্টর বিজেপি (BJP) কর্মী-সমর্থকেরাও এ ব্যাপারে অনিশ্চিত ছিলেন।

advertisement

আরও পড়ুন- শরীরে থাবা বসিয়েছে থাইরয়েড; সমস্যা কী ভাবে বুঝবেন জেনে নিন বিশদে

আর ঠিক সেই সময়ই নরেন্দ্র মোদি আরএসএস (RSS) থেকে বিজেপি-র মতো রাজনৈতিক দলে চলে আসেন। আর দলে এসেই তিনি আহমেদাবাদ কর্পোরেশনের (AMC) ভোটে লড়াই করার জন্য নিজের দলকে প্রস্তুত করার চ্যালেঞ্জ নেন। এর জন্য প্রথমেই তিনি বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বিজেপি দলের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর এটাই ছিল মোদির প্রথম দিককার পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম। এলাকার নামকরা ডাক্তার, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ার এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন, তার জন্য আর্জি জানান বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। একই ভাবে নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালন সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা বোঝান। আসলে কী ভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন বদলে দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে সব সময় উদ্ভাবনীমূলক পন্থা খুঁজে বার করার চেষ্টা করে গিয়েছেন মোদি।

advertisement

একাধারে বক্তা হিসেবে আসাধারণ নরেন্দ্র মোদি, আবার মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদির একটি নির্দিষ্ট বক্তৃতার কথা আমার মনে পড়ে যাচ্ছে। আহমেদাবাদের ধরণিধরে নির্মল পার্টি প্লটে একটি মাঝারি জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি। আর মোদির কথাবার্তার মধ্যে বরাবরই একটা সরসতামিশ্রিত বুদ্ধিমত্তার ছাপ রয়েছে। তো সেই বক্তৃতার সময় তাঁর এমন বক্তব্যে বেশ কয়েক মিনিট মানুষের মধ্যে হাসির রোল উঠেছিল বলে আমার মনে পড়ে। এই হাসাহাসির মধ্যেই হঠাৎ ভিড়ের মাঝে মোদি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “আমরা কি হাসাহাসিই চালিয়ে যাব, না আমাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করব”? আমি জানি না, এই প্রশ্ন শুনে আমার কী হয়েছিল। আমি সাহস জড়ো করে চেঁচিয়ে জবাব দিয়েছিলাম, “দুটোই!” এটা শুনে তিনি আমার দিকে ফিরে বলেছিলেন, “না, আমরা কখনওই দুটো একসঙ্গে করতে পারব না।” এর পর মোদি বিজেপির পরিচালন সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি, আর্টিকল ৩৭০, শাহ বানো মামলা-সহ আরও নানা বিষয়ে নিজের বক্তব্য রেখেছিলেন। তাঁর মধ্যে মতাদর্শগত স্বচ্ছতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল।

advertisement

আরও পড়ুন-স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের পরিকল্পনা? আগে যা জানা দরকার...

যাঁরা গুজরাতের বাইরে থেকেছেন, তাঁরা হয় তো জানেন না যে, ১৯৯০ সাল নাগাদ মোদির বক্তৃতার ক্যাসেটগুলি গুজরাতের শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। রাজ্যের আনাচে-কানাচে দেওয়া মোদির বক্তৃতার কিছু অংশ তুলে দেওয়া থাকতো ওই সব ক্যাসেটে।

লাতুরের ভূমিকম্পের ঠিক পরেই ১৯৯৪ সালে নরেন্দ্র মোদির একটা বক্তৃতা বেশ সাড়া জাগিয়ে দিয়েছিল। মনে আছে, ভূমিকম্পের পরে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক লাতুরের উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন। সেই সময় মোদি একটি তাৎক্ষণিক বক্তব্য রেখেছিলেন। আর তাঁর সেই বক্তৃতা শোনার পরেই অন্তত ৫০ জন মানুষ তক্ষুণি লাতুরের উদ্দেশে রওনা হতে চেয়েছিলেন। আসলে মোদির বক্তব্য তাঁদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তবে সেই সময় নরেন্দ্র মোদি তাঁদের বিরত করেন এবং জানান যে, মানুষের পৌঁছনোর আগে ত্রাণ পৌঁছনো বেশি জরুরি। আর নিজের জায়গায় থেকেই দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে।

সমাজের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে তিনি সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পারতেন। ২০১৩-১৪ সালেই তো গোটা বিশ্ব দেখেছে তাঁর ‘চায় পে চর্চা’ (Chai Pe Charcha)। আমি এখনও ভুলতে পারি না, কী ভাবে নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি মিশে যেতেন। এমনকি প্রাতর্ভ্রমণকারীদের সঙ্গেও অনায়াসে বাক্যালাপ করতেন। ১৯৯০-এর আশপাশে আহমেদাবাদের বিখ্যাত পরিমল গার্ডেনে মোদির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। সেখানে দেখেছিলাম, তিনি এক দল প্রাতর্ভ্রমণকারীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি যে অনায়াসে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারেন, আমার কাছে তা সে দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমার এক পরিচিত ডাক্তারবাবুও মোদির সঙ্গে এমনই এক বাক্যালাপের বিষয়ে আমায় জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘নরেন্দ্র ভাইয়ের সঙ্গে এই ধরনের বাক্যালাপ ভীষণই উপযোগী। এর ফলে আশপাশের অবস্থা, পরিস্থিতি, ঘটে যাওয়া ঘটনা ইত্যাদির একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়।”

এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদির মানবিক দিকের বিষয়ে দু’টি গল্প মনে পড়ছে। তার মধ্যে একটা ২০০০ সাল নাগাদ ঘটেছিল। মনে পড়ে, গুজরাতি সাহিত্যের চূড়ামণি এবং সংঘের অভিজ্ঞ কেকা শাস্ত্রীর কিছু কাজের নথি বানাচ্ছিলাম আমি এবং ইতিহাসবিদ রিজওয়ান কাদরি। সেই সময় আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর গিয়েই বুঝেছিলাম যে, কেকা শাস্ত্রীর শরীর ভালো নেই। আমরা তাঁর একটা ছবি তুলে নরেন্দ্র মোদির দফতরে পাঠিয়ে দিই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কেকা শাস্ত্রীর দেখভালের জন্য এক জন নার্স নিয়োগ করা হয়েছিল।

আর একটা ঘটনা রয়েছে। সেটা আবার লেখক প্রিয়কান্ত পারিখের বিষয়ে। তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর ১০০-তম কাজ নরেন্দ্র মোদির হাত দিয়েই প্রকাশিত হোক। কিন্তু তার মধ্যেই একটা গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছিল। লেখক একটা মারাত্মক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। আমার মনে আছে, সেই সময় প্রিয়কান্ত পারিখের ইচ্ছেপূরণ করতে তাঁর আশ্রম রোডের বাসভবনে গিয়ে তাঁর লেখা বইটি প্রকাশ করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক জন অসুস্থ লেখকের বই প্রকাশ করার জন্য তাঁর বাড়ির বৈঠকখানায় এক জন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং উপস্থিত, এই দৃশ্য দেখে যারপরনাই অভিভূত হয়েছিল গুজরাতি সাহিত্যচক্র।

মোদির যে দু’টো সব থেকে ভালো লাগে, সেগুলি হল- মন দিয়ে অন্যের কথা শোনা এবং প্রযুক্তির জন্য তাঁর আলাদা একটা ভালোবাসা। তবে প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে মোদির একটা আক্ষেপও রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, প্রযুক্তি এসেছে বলে ফোন নম্বর মনে রাখার প্রয়োজনীয়তাটাও ফুরিয়ে যাচ্ছে!

নিজের গোটা রাজনৈতিক কেরিয়ারে দলের শিষ্যরাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে নরেন্দ্র মোদির কাছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা কখনওই তাঁকে ছুঁতে পারেনি। দলের নীতিগত কৌশল সমন্বয়ের ভার যত বারই মোদির উপর এসেছে, তত বারই একটাও নির্বাচনে হারেনি বিজেপি। সেটা লোকসভা ভোটই হোক অথবা বিধানসভা ভোট! তবে ২০০০ সালে নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছিল বিজেপি। কারণ সেই সময় মোদি রাজ্যে ছিলেন না।

সাংবাদিক হিসেবে আমাদের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে কাজের শুরুর দিকে নরেন্দ্র মোদি এক বার আমায় বলেছিলেন, “এটা যেন একেবারেই লেনদেন সংক্রান্ত সম্পর্ক না-হয়, বরং এই সম্পর্ক যেন সারা জীবনের জন্য থাকে।” আবার মনে পড়ে, ১৯৯৮ নাগাদ হোলি উৎসবের সময় আমি দিল্লিতে ছিলাম। সেই সময় নরেন্দ্র মোদি আমাকে একটা কথা বলেছিলেন, যা আমি কখনওই ভুলব না। তিনি বলেছিলেন, “তোমার টেলিফোন ডায়েরিতে পাঁচ হাজার ফোন নম্বর থাকবে। তার মানে তাঁদের সকলের সঙ্গেই অন্তত এক বার তোমার দেখা হয়েছে। তবে সেই সাক্ষাৎ যে শুধুমাত্র নিয়মমাফিক, তা কিন্তু একেবারেই নয়। দেখা হওয়া মানুষগুলো শুধুমাত্র তোমার সোর্স নয়, বন্ধু হিসেবেই সারা জীবন থেকে যাবে।” যদিও মোদির কথা অনুযায়ী পাঁচ হাজার মানুষের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি, তবে মোদির সে দিনের কথায় মানবিক স্পর্শের উপযোগিতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েছিলাম। আসলে এই মানবিকতার ছোঁওয়াটাই রয়েছে নরেন্দ্র মোদির মধ্যে, যার জন্যই তিনি আজ এতটাই সফল… ৷

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
কালীপুজো বাজারে এবার নতুন চাপ! ফুল কিনতে গিয়ে নাকানিচোবানি না খেতে হয়
আরও দেখুন

(Japan Pathak is a journalist based in Ahmedabad)

বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Opinion: অসাধারণ বক্তা, জনতার অনুপ্রেরণার উৎস; প্রধানমন্ত্রী মোদির সব কাজেই রয়েছে মানবিকতার স্পর্শ
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল