বর্তমানে, করোনাভাইরাসের ওমিক্রন প্রজাতি কোভিডের মারাত্মক সংক্রমণের কারণ। গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মিলেছিল ওমিক্রন প্রজাতির। ডিসেম্বরের প্রথম ভাগের মধ্যেই বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল এই ভ্যারিয়েন্ট। গত ১০ সপ্তাহ আগেই সেই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই খোঁজ মেলে ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্টেরও। ইতিমধ্যেই তা বিশ্বের একাধিক দেশে ডমিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্টে পরিণত হচ্ছে। এখন এই সুপারস্প্রেডার প্রজাতিটির অন্য একটি মারাত্মক স্ট্রেনের উত্থান মানুষের মধ্যে একটি নতুন আগ্রহ জাগিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যে ফিলিপাইনস, নেপাল, কাতার, ভারত এবং ডেনমার্কে (Denmark) প্রভাব বিস্তার করেছে। সাব ভ্যারিয়েন্টটি ইতিমধ্যে বিশ্বের ৫৭টি দেশে সনাক্ত করা হয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: যেমন রং, তেমনই পুষ্টিগুণ, কিন্তু কোন রঙের ফুলকপির কী গুণ জানেন?
সমীক্ষায় কী জানা গিয়েছে:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) কোভিড রেসপন্স টিমের বরিস পাভলিন (Boris Pavlin) বলেছেন, ওমিক্রন প্রজাতির উদীয়মান বিএ.২ ফর্মটি আসল বিএ.১ ফর্মের চেয়ে বেশি গুরুতর বলে মনে হচ্ছে না। টিকাগুলিও ওমিক্রনের বিভিন্ন রূপের বিরুদ্ধে একই রকম সুরক্ষা প্রদান করে চলেছে। গবেষণা ও সমীক্ষা টিকাদানের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কেও কথা বলেছে।" সমীক্ষায় বলা হয়েছে, টিকাপ্রাপ্ত এবং বুস্টার ডোজ নেওয়া লোকজনের তুলনায় টিকা (Vaccine) না নেওয়ার ব্যক্তিদের মধ্যে বিএ.২ এবং বিএ.১-তে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি ছিল, যা এটা নিশ্চিত করে যে উভয় ওমিক্রন প্রজাতির প্রতি টিকাকরণের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে নতুন তথ্য আসার পরই এটি বিপজ্জনক কি না বা কতটা বিপজ্জনক বা উদ্বেগজনক কি না তা নিয়ে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। ডেনমার্কের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাভলিন বলেছেন যে রোগের তীব্রতার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই বলেই মনে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সাব ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ হলে তা গুরুতর রোগের কারণ হবে না। তিনি বলেন, "যদিও সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বিএ.২-র বিএ.১-কে টেক্কা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে বিএ.২ ছড়িয়ে পড়েছে সেই দেশগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে যে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্য়া আশঙ্কার চেয়ে কম। ডব্লিউএইচও-র বিশেষজ্ঞ বলেন, "টিকাকরণ ওমিক্রন সহ গুরুতর রোগের বিরুদ্ধে গভীরভাবে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ। বিএ.২ দ্রুত বিএ.১-কে প্রতিস্থাপন করছে। এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম, যদিও এই বিষয়ে আরও তথ্যের প্রয়োজন আছে।"
আরও পড়ুন: তখন মাঝরাত, হুড়মুড় করে বাড়িতে ঢুকে পড়ল 'দানব'! মৃত্যু মিছিল মালদহে
ওমিক্রনের জন্য টিকা কি অন্যদের থেকে আলাদা হবে? কী জানা যাচ্ছে?
নতুন ভাইরাল স্ট্রেনের প্রাথমিক রিপোর্ট বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনে তিরিশের বেশি মিউটেশন রয়েছে, তাই এটি মনে করা হয় যে এই প্রজাতি টিকা থেকে প্রাপ্ত অনাক্রম্যতা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এর ফলে বিদ্যমান কোভিড টিকাগুলি আপডেট করা বা প্রজাতি-নির্দিষ্ট টিকা (Omicron Specific Vaccines) তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মডার্না (Moderna) প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ছিল যারা দাবি করেছিল যে বর্তমানে চালু থাকা টিকাগুলি নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে কম কার্যকর হতে পারে, একই সঙ্গে এটাও ঘোষণা করেছিল যে তারা নির্দিষ্টভাবে ওমিক্রন প্রজাতির জন্য এই বছরের প্রথম দিকে টিকা আনতে চলেছে। এখন ফাইজার (Pfizer) এবং মডার্না (Moderna) উভয় সংস্থারর সিইও-র মতে, ওমিক্রন প্রজাতিকে টার্গেট করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা দুটি নতুন টিকা শীঘ্রই প্রস্তুত করা হবে।
ওমিক্রন-নির্দিষ্ট বনাম আসল কোভিড টিকা: ওমিক্রন নির্দিষ্ট টিকাগুলি বিশেষভাবে ওমিক্রন প্রজাতিকে টার্গেট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি, ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার-বায়োএনটেক (Pfizer-BioNtech) এবং মডার্না ঘোষণা করেছে যে তারা ওমিক্রন নির্দিষ্ট টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে। দু'টি টিকাই একই এমআরএনএ (mRNA) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ওমিক্রন প্রজাতিতে অন্তত ৫০টি মিউটেশন রয়েছে, যা এটিকে প্রথম দিকের করোনাভাইরাসে থেকে আলাদা করে। প্রজাতি-নির্দিষ্ট টিকা তাই মূল টিকা থেকে কিছুটা আলাদা বলে মনে করা হয়। মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) টিকা মারাত্মক রোগজীবাণুগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোষগুলিকে সক্রিয় করে একটি ইমিউন প্রতিক্রিয়া শুরু করে। এগুলি কোষকে প্রোটিন বা করোনাভাইরাস স্পাইক প্রোটিনের টুকরো তৈরি করতে নির্দেশ দেয়, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এই কৃত্রিমভাবে তৈরি স্পাইক প্রোটিনগুলো মূল ভাইরাসের মতো প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না। বর্তমানে ভারতে পরিচালিত কোভিড টিকাগুলি Pfizer এবং Moderna দ্বারা তৈরি করা ভ্যাকসিনগুলির থেকে খুব আলাদা৷ যদিও উভয়ই SARs-COV-2 ভাইরাসকে লক্ষ্য করে, তারা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা খুব আলাদা।
আরও পড়ুন: ভিড় দোকানে সন্তানকে অন্য মহিলার কোলে দিলেন মা, তারপরই যা ঘটল...ভদ্রেশ্বরে মারাত্মক ঘটনা
ওমিক্রন-নির্দিষ্ট টিকা কি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর প্রমাণিত হবে?
ওমিক্রন প্রজাতি সামনে আসার পরই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই প্রজাতির টিকার অনাক্রম্যতাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা তুলে ধরেন। এটি তখনই প্রজাতি-নির্দিষ্ট টিকা তৈরি করা দরকার কি না, তা নিয়ে আলোচনার জন্ম দেয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে এটি জানা গিয়েছে যে ওমিক্রন সংক্রমণের অ্যান্টিবডিগুলি ডেল্টাসহ অন্যান্য প্রজাতির সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। তাই স্বাস্থ্য আধিকারিকরা ওমিক্রন নির্দিষ্ট টিকার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তবে, অনেক বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারণা উপস্থাপন করেছেন। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন যে এটি সময় এবং প্রচেষ্টার অপচয়। ভাইরাসের নতুন নমুনা এবং স্ট্রেন বারবার আবির্ভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে এটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা অত্যন্ত কঠিন। যখন টিকা প্রকৃতপক্ষে চালু হবে ততক্ষণে ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে, এই অর্থে যে সংক্রমণের হার কমে যেতে পারে। কোভিডের ওমিক্রন অত্যন্ত সংক্রামক এবং বেশ কয়েকটি দেশকে প্রভাবিত করেছে। তবে রোগটি এখনও পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি তৈরি করেনি যা হাতের বাইরে।