কারণ জলের উৎপত্তি থেকেই জানা যাবে পৃথিবী (Earth) সৃষ্টির আদি রহস্য। মহাকাশের উল্কা বৃষ্টি থেকেই নাকি পৃথিবীতে জলের উৎপত্তি। বিগত কয়েক দশক আগে গবেষকরা নানান পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় পৃথিবীতে জলের সৃষ্টির এই ধারণাকে উলটপালট করে দিয়েছে এক নিমেষে। এবার দেখে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক গবেষণায় পৃথিবীতে জলের উৎপত্তি নিয়ে গবেষকরা ঠিক কী মত পোষণ করেছেন।
advertisement
আরও পড়ুন- আমাদের কি প্রতি বছর অন্তর কোভিড টিকা নিতে হবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
তাঁদের দাবি, উল্কাপিণ্ড বা মহাকাশের গ্রহাণুদের মধ্যে সংঘর্ষে নয়, মূলত সৃষ্টি থেকেই পৃথিবীতে জল রয়েছে। সম্প্রতি লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একদল গবেষকের গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে পিএনএস(PNAS)-এ।
ওই গবেষণা পত্রে দাবি করা হয়েছে, কোটি কোটি বছর আগে থেকে চাঁদের (Moon) গায়ে লেগে থাকা পাথর থেকেই জানা যাবে পৃথিবীতে জল সৃষ্টির ইতিহাস। তবে ওই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য রসায়নবিদ গ্রেগ ব্রেনিকা বলেছেন, পৃথিবীতে জল আগে থেকেই ছিল, উল্কাপাত বা মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে সংঘর্ষ বা বিচ্ছুরণের মাধ্যমে জলের সৃষ্টির ধারণা একেবারেই সঠিক নয় বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন ওই গবেষকদল। তাঁরা বলেছেন, পৃথিবীতে জলের উৎপত্তি নিয়ে একাধিক ধারণা রয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই।
এ বিষয়ে বিগত কয়েক দশক আগে গবেষকদের ধারণাকে উল্লেখ করে তাঁরা জানিয়েছেন, আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন মূলত মহাকাশের উল্কাপিণ্ড (Meteorites) এবং পৃথিবীর বাইরের কোনও গ্রহাণু থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাতের মাধ্যমেই পৃথিবীতে জলের সৃষ্টি হয়েছে।
আবার কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে, একেবারে সৃষ্টি থেকেই পৃথিবীতে জলের অস্তিত্ব রয়েছে। সম্প্রতি গবেষকরা এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন বলে জানা গিয়েছে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে।
আরও পড়ুন- Coronavirus: বিটা, গামা, ডেল্টা, ওমিক্রন... পরবর্তী করোনাভাইরাস প্রজাতি আসবে?
পাশাপাশি ওই গবেষণা পত্রে দাবি করা হয়েছে, বাইরে থেকে নয়, সৃষ্টি থেকেই পৃথিবীতে জল ছিল এবং পৃথিবী সৃষ্টির সময় যে বস্তুটির সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়েছিল, তাতেও জল ছিল বলে দাবি হয়েছে গবেষণা পত্রে। তবে উল্কাপিণ্ড থেকে পৃথিবীতে জল আসতে পারে না বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা।
কিন্তু কেন এমন দাবি করলেন বিজ্ঞানীরা?
এই বিষয়ে ওই গবেষক মহল দাবি করেছেন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ কোটি বছর আগে মহাকাশে সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী এবং চাঁদ থেকে অনেক বস্তু অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। সংঘর্ষের ফলে মহাকাশের অন্যান্য কিছু গ্রহাণু থেকে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে গিয়েছে চাঁদ। পাশাপাশি ওই সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীও শুষ্ক হয়ে যায় বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
এই গবেষণাটি চালাতে গবেষকরা ওই সংঘর্ষের সময় কালের চাঁদের গায়ে লেগে থাকা (Rocks from Moon) পাথরের পরীক্ষা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি গবেষকরা তাঁদের দাবির সমর্থনে বলেছেন, চাঁদে পৃথিবীর মতো ঋতু ও টেকটনিক পরিবর্তন হয় না। তাই কোটি কোটি বছর আগে থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠের গায়ে লেগে থাকা পাথর থেকেই জানা যাবে, পৃথিবীতে জলের উৎপত্তির ইতিহাস।
এই জন্য বিগত কয়েক দশক আগে চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথর গুলি নিয়ে পরীক্ষার পাশাপাশি সেগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
এ ছাড়াও বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, শুধুমাত্র জলের উৎপত্তিই নয়, চাঁদের পাথর পরীক্ষা করলেই পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস সামনে উঠে আসতে পারে। কারণ কোটি কোটি বছর আগে মহাকাশে লাগাতার সংঘর্ষের পরেও চাঁদের পাথরগুলি অপরিবর্তিত রয়ে গিয়েছে। আগামীতে চাঁদের ওই অপরিবর্তিত পাথর থেকেই পৃথিবীতে জলের উপস্থিতি ও উৎপত্তির ইতিহাস মিলবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।