#নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাস (Coronavirus) সম্পর্কে কারও আর অজানা নেই। এটি ২০২০ সাল থেকে বিপর্যয় ডেকে এনেছে বিশ্বব্যাপী। কোভিড (Covid-19) মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অতিমারীর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। করোনাভাইরাসের উদীয়মান প্রজাতিগুলি (Variants) বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে সংক্রমিত করছে। NCBI-র একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, কোভিড (Covid-19) অতিমারী হল করোনাভাইরাসের তৃতীয় প্রাদুর্ভাব (Third Recorded Outbreak)। এর আগের দুটি হল সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রম করোনাভাইরাস (Acute Respiratory Syndrome) বা সার্স-সিওভি এবং মধ্য প্রাচ্যের রেসপিরেটরি সিনড্রম (Middle East respiratory syndrome) করোনাভাইরাস বা মার্স-সিওভি। এগুলি মারাত্মক শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি করে।
করোনাভাইরাস প্রজাতি: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস পরিবর্তন হয়। যদিও বেশিরভাগ ভাইরাস তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে না। তীব্রতা, টিকার কার্যকারিতা, থেরাপিউটিক ওষুধ এবং ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামগুলির সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য তাদের ঝুঁকির উপর নির্ভর করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনাভাইরাসকে উদ্বেগের প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। উদ্বেগের প্রজাতিগুলি সংক্রমিত ব্যক্তিদের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন- বুস্টার শটের পরেও কি আবার টিকার ডোজ নিতে হবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
করোনাভাইরাস উদ্বেগের প্রজাতি: এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসের পাঁচটি প্রজাতিকে উদ্বেগের প্রজাতি (Variants Of Concern) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলি হল-আলফা (Alpha), বিটা (Beta), গামা (Gamma), ডেল্টা (Delta) এবং ওমিক্রন (Omicron)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আলফা প্রজাতি (B.1.1.7) প্রথম ব্রিটেনে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পাওয়া গিয়েছিল। বিটা প্রজাতি (B.1.351) ২০২০ সালের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তী অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য প্রজাতি গামা (P.1) ২০২০ সালের নভেম্বরে ব্রাজিলে পাওয়া গিয়েছিল। এই তিনটি প্রজাতির মিউটেশনে কিছুটা মিল রয়েছে। বিশেষ করে স্পাইক প্রোটিনের মূল অঞ্চলে। SARS-CoV-2-তেও স্পাইক প্রোটিন একই মিউটেশনগুলি বহন করে।
করোনাভাইরাসের চতুর্থ প্রজাত ডেল্টা (B.1.617.2) বা সুপার-আলফা ২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতে সনাক্ত করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটি আলফা প্রজাতির তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি সংক্রমণযোগ্য ছিল৷ ডেল্টা সংক্রমিত ব্যক্তিদের শ্বাসনালীতে দ্রুত এবং উচ্চ স্তরে বৃদ্ধি পায়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এড়াতে পারে।
আরও পড়ুন : আপনি উপসর্গহীন কোভিড ক্যারিয়ার নন তো? বুঝবেন কী করে? পড়ুন--
ওমিক্রন (Omicron)-B.1.1.529 প্রজাতি ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল। অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গে তুলনা করলে ওমিক্রনে আরও বেশি মিউটেশন রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের অন্য উদ্বেগজনক প্রজাতিগুলি হল ল্যাম্বডা (Lambda) এবং মু (Mu)।
এর পরের প্রজাতি কি? গবেষণা কী বলছে?
জীববিজ্ঞানী জেসি ব্লুম (Jesse Bloom) একটি প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলেছেন যে করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না। বরং, এটি স্থানীয় হয়ে উঠবে এবং মানুষের মধ্যেই থাকবে সাধারণ রোগ হিসেবে। ভাইরাসের আক্রণামনাত্মক রূপান্তর এবং ওমিক্রনের মৃদু তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু রামবাউট বলেছেন যে পরবর্তী রূপটি আরও হালকা হওয়ার আশা করা একটা মিথ। বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রজাতিগুলি থেকে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করার জন্য কোভিড উপযুক্ত আচরণ অনুসরণ করার কথা জানিয়েছে।
প্রজাতি-নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের ভূমিকা: ওমিক্রন প্রজাতির (Omicron Variant) উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কোভিড টিকার (COVID Vaccine) কার্যকারিতা হ্রাসের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। এটা মনে করা হচ্ছে যে কোভিড টিকার দুটি স্ট্যান্ডার্ড ডোজ ভাইরাসের পরিবর্তিত রূপের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সুরক্ষা প্রদান করে না, যা বিশাল উদ্বেগের কারণ। এই ধরনের আশঙ্কার আবহে বিজ্ঞানীরা এবং চিকিৎসা পেশাদাররা টিকাগুলিকে আপডেট বা প্রজাতি নির্দিষ্ট টিকা তৈরির কথা বলেছেন। যা নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হবে। উপরন্তু, এটি পাওয়া গিয়েছে যে টিকার বুস্টার ডোজগুলি (Booster Dose) অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য প্রজাতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানে কার্যকর। ভারতও এই বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে সতর্কতামূলক ডোজ (Precaution Dose) দেওয়া শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন : এড়িয়ে যাবেন না এই ছোটো উপসর্গগুলি, অজান্তেই বাড়তে পারে আপনার কোলেস্টেরল!
যাই হোক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থামূল টিকা কম্পোজিশনের বুস্টার ডোজ বারবার দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তাদের দাবি, এই টিকা দেওয়ার কৌশল উপযুক্ত বা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। নতুন ভাইরাল স্ট্রেনের প্রাথমিক রিপোর্ট বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনে তিরিশের বেশি মিউটেশন রয়েছে, তাই এটি মনে করা হয় যে এই প্রজাতি টিকা থেকে প্রাপ্ত অনাক্রম্যতা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এর ফলে বিদ্যমান কোভিড টিকাগুলি আপডেট করা বা প্রজাতি-নির্দিষ্ট টিকা (Omicron Specific Vaccines) তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মডার্না (Moderna) প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ছিল যারা দাবি করেছিল যে বর্তমানে চালু থাকা টিকাগুলি নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে কম কার্যকর হতে পারে, একই সঙ্গে এটাও ঘোষণা করেছিল যে তারা নির্দিষ্টভাবে ওমিক্রন প্রজাতির জন্য এই বছরের প্রথম দিকে টিকা আনতে চলেছে।
ওমিক্রন নির্দিষ্ট টিকাগুলি বিশেষভাবে ওমিক্রন প্রজাতিকে টার্গেট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি, ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার-বায়োএনটেক (Pfizer-BioNtech) এবং মডার্না (Moderna) ঘোষণা করেছে যে তারা ওমিক্রন নির্দিষ্ট টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে। দুটি টিকাই একই এমআরএনএ (mRNA) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।