করোনা নিয়ে সবথেকে বেশি ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। Facebook, Twitter সহ একাধিক সোশাল মিডিয়ায় প্রতিদিন অবৈজ্ঞানিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে সামাজিক মাধ্যম কর্তৃপক্ষ। ভুয়ো তথ্য ঠেকাতে আলাদা করে টিম তৈরি করা হয়েছে, এমনকী বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনাকালে কী কী করণীয় এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতও জানাতে উদ্যোগী হয়েছে বিভিন্ন সংস্থা।
advertisement
চিকিৎসক বিকাশ ভাটিয়ার সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের কিছু অংশ-
প্রশ্ন- কিউবা কেন শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু করেছে?
বিকাশ ভাটিয়া: UNICEF-এর একটি রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কিউবার পড়ুয়ারা প্রায় ৪ গুণ বেশি সময় স্কুলের পঠনপাঠন থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সেখানে উন্নত ইন্টারনেট ব্যবস্থাও নেই। টিভি দেখে পড়াশোনার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেখানকার পড়ুয়াদের। তাই সেখানে জরুরি ভিত্তিতে ২ বছর থেকে ১৮ বছরের পড়ুয়াদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তাদের যে টিকা দেওয়া হচ্ছে তার নাম সোবেরানা ২ (Soberana 2)। WHO-র তরফে এখনও ওই টিকায় সিলমোহর দেওয়া হয়নি। তবে সেখানকার সরকার ও সেখানকার মেডিসিন রেগুলেটরি এজেন্সি ওই টিকার উপর সিলমোহর দিয়েছে। পাশাপাশি সেখানকার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শিশুদের উপর ওই টিকা প্রয়োগে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যদিও বিভিন্ন দেশ কিউবা সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছে।
আরও পড়ুন - Snakes নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেলেন বিজ্ঞানীরা, Dinosaursদের অবলুপ্তির পরেই কীভাবে এল সাপ
গলব্লাডার গ্যাংগ্রিন (gallbladder Gangrene) কী? কোভিড মুক্তির পর রোগীরা কেন এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন?
বিকাশ ভাটিয়া: গল ব্লাডারে কোনও ইনফেকশন হলে এই সমস্যা হতে পারে। মূলত গলব্লাডারে গল স্টোন থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা করানো দরকার। যদি কারও কোভিড ১৯-এর হিস্টরি থাকে তাহলে সেই রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রোগের লক্ষণগুলি হল জ্বর, বমি ভাব, দূর্বলতা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন - Masik Durga Ashtami 2021: বড় কঠিন ব্রত মাসিক দুর্গাষ্টমী, বিধি মেনে পুজোয় হয় মনোবাঞ্ছা
প্রশ্ন- কোভিডে আক্রান্ত রোগীরা সেরে ওঠার পরেও ক্লান্তিতে ভোগেন। ক্লান্তি কাটাতে কি কোনও ওষুধ আছে?
বিকাশ ভাটিয়া: যে কোনও রোগে আক্রান্ত হলেই শরীরে দুর্বলতা আসে। এটা স্বাভাবিক। কোভিডের ক্ষেত্রে যেহেতু শরীরে প্রচণ্ড প্রভাব পড়ে তাই অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা একটু বেশি অনুভূত হয়। তাই ক্লান্তি দূর করতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। প্রতি দিন খুব অল্প পরিমানে কিছু ওয়ার্ক আউট করা দরকার। প্রচুর পরিমানে জল পান করা দরকার। এবং মানসিকভাবে নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। সঙ্গে খাবারের দিকেও নজর দিতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে নিয়মিত। এমন কিছু কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে যা শরীরে খুব প্রভাব ফেলে। দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে। এই নিযমগুলি মেনে চললেই ক্লান্তি দূর করা সম্ভব।
প্রশ্ন- কোভিড ১৯ কি মানসিক চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলতে পারে?
বিকাশ ভাটিয়া: কোভিড ১৯ আসার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এবং বর্তমানেও চলছে। তাতে দেখা গিয়েছে কোভিডের ফলে মস্তিষ্কে খুব অল্প মাত্রায় প্রভাব পড়তে পারে। যা বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাভাবনায়, মানসিক ভাবে এবং ব্যবহারিক ভাবে প্রভাব ফেলে। অনেকেই এবিষয়ে বলেছেন, কোভিডের প্রভাবে যেহেতু অক্সিজেনের হ্রাস দেখা যায় তাই তা ব্রেনের উপর প্রভাব ফেলে। তবে ব্রেন ইনজুরি হওয়ার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন- হাইব্রিড ইমিউনিটি কী? কোভিড ১৯ থেকে সেরে ওঠার পর কেউ ভ্যাকসিন নিলে কি হাইব্রিড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব?
বিকাশ ভাটিয়া: করোনায় আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি সেরে ওঠার পর তাঁর শরীরে নিজে থেকেই তৈরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে ওঠে। এর সঙ্গে ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলেও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আরও কিছুটা বেড়ে যায়। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সাধারণ মানুষের যে পরিমাণ রোগ প্রতিরাধ ক্ষমতা থাকে তার থেকে করোনা আক্রান্তদের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশিই থাকে।
প্রশ্ন- করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কী ধরনের শরীরচর্চা করা দরকার?
বিকাশ ভাটিয়া: যে কোনও রোগ থেকে সেরে ওঠার পর শরীরচর্চা করা ভীষণ দরকার। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর প্রথম ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ কোনও শরীরচর্চার দরকার নেই। ওই সময়ে শুধু বিশ্রাম নিতে হবে। এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। কোভিড থেকে সেরে ওঠা কোনও ব্যক্তি যদি বুঝতে পারেন তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের কোনও সমস্যা হচ্ছে না সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি ধীরে ধীরে অল্প কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। তবে সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে নজর রাখা।
প্রসঙ্গত, দেশ জুড়ে চলছে করোনার টিকাকরণ। এই পরিস্থিতিতেও নিজেদেরকে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিকাশ ভাটিয়াও জানিয়েছেন, করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার অর্থ এটা নয় যে আর মাস্ক পরার দরকার নেই বা হাত ধুতে হবে না। এই নিয়মগুলি আগের মতোই মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি আর কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে দুর্গা পূজার উৎসবের মরসুম। উৎসবের মরসুমে অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে সকলকেই সতর্ক থাকতে আর্জি জানাচ্ছেন তিনি।
পাশাপাশি, পুজোর মধ্যে যাতে অতিরিক্ত ভিড় না হয় তার জন্য ক্লাবগুলির কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। সরকারের তরফেও পুজোর মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে টিকা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিকাশ ভাটিয়ার অমূল্য উপদেশ সঙ্গে রাখলে লাভ বই ক্ষতি নেই!
