বিধিনিষেধ জারি হয়েছিল কবে?
ঠিক দু'বছর আগে অর্থাৎ বিগত ২০২০ সালের ২৪শে মার্চ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য আদেশ এবং নির্দেশিকা জারি করে। এ বিষয়ে ভারত সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের আওতায় ২০০৫-এর অধীনে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিএমএ) এর মাধ্যমে এমএইচএ রাজ্যগুলিকে নির্দেশ জারি করে। এরই মধ্যে দুবছর পর চলতি বছরের মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণের মাত্রা দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় বর্তমানে এমএইচএ(MHA) রাজ্যগুলিকে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকাগুলিকে যথাযথভাবে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু করোনা নিয়ে কেন্দ্র সরকার যতই অভয় দিক দেশের মানুষের মনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন নিয়ে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। জেনে নেওয়া যাক সেই বিষয়ে।
advertisement
ভারত সরকারের তরফ থেকে জারি করা 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন' ২০০৫ ঠিক কী?
এ বিষয়ে এক কথায় বলতে গেলে যে কোনও প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনও রোগের প্রকোপ মহামারীর রূপ নিলে তা প্রতিহত করতে, পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে দুর্যোগের কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য সংসদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রয়োগ করে। এই আইনটি দেশের সংসদে ২০০৫ সালে গৃহীত হয়। দেশের সংবিধান মোতাবেক এই আইনটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহ নতুন করে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং দুর্যোগ ও মহামারী কবলিত এলাকার মানুষের তদারকি করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে। এই আইনটি প্রয়োগ করে দ্রুত বিপর্যয় প্রতিরোধ এবং প্রশমন, তৎসহ দুর্যোগ পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ার উপর সরকারি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৫-এর কোন ধারার অধীনে করোনাকালে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়?
এই আইনের অধীনে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠন করা করেছে। এটি একটি জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। এই কমিটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব থেকে শুরু করে এবং দেশের বিভিন্ন মন্ত্রকের সদস্যরাও যুক্ত রয়েছেন। এই কমিটি এনডিএমএ-কে (NDMA) সহায়তা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ১০ নম্বর ধারায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করে। গত দু'বছর আগে এই ধারার অধীনেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কোভিড ১৯-এর নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশিকা জারি করে ।
আরও পড়ুনঃ সুদের হার বাড়লে ব্যাঙ্কের কি আদৌ কোনও লাভ হয়? সত্যি জানলে অবাক হবেন
করোনাকালে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে দেশের সমস্ত জেলাশাসকদের কী নির্দেশ দেওয়া হয়?
এ বিষয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে, করোনাভাইরাসটির অত্যন্ত সংক্রামক ওমিক্রন (Omicron) রূপের উত্থানের পটভূমিতে এমএইচএ (MHA) জেলা কর্তৃপক্ষকে সংক্রমিত এলাকায় প্রমাণ-ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ণের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি সংক্রমণ দ্রুত প্রতিহত করতে সংক্রমিত এলাকার মানুষের সামাজিক দূরত্ব প্রয়োগের বিষয়েও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেয়। ভারতীয় সংবিধানের ১৪৪ ধারা প্রয়োগের নির্দেশও দেওয়া হয়। পরে অবশ্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় ১৪৪ ধারা এবং রাতের কারফিউ শিথিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
আরও পড়ুনঃ পরোক্ষে ধূমপানেও নজিরবিহীন অসুস্থতা; দেশের অর্থনৈতিক বোঝার সমীক্ষা আতঙ্ক জাগাবে!
'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন' ২০০৫-এর সর্বশেষ তাৎপর্য কী?
সাম্প্রতিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলতি মাসের ২৩ তারিখ কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা আদেশে, এমএইচএ সমস্ত রাজ্যকে আগামী ৩১ মার্চের পরে কোভিড ১৯ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য জেলাশাসকদের জারি করা নির্দেশিকাগুলিকে যথাযথভাবে বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশটি সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর হলে আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেশের জনজীবন ফের স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এই নির্দেশিকার অর্থ হল যে কোনও শপিং কমপ্লেক্স এবং সিনেমা হলগুলিকে পূর্ণ ক্ষমতায় পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। রাজ্যগুলির তরফ থেকে সামাজিক জমায়েত এবং সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অফলাইন ক্লাস পুনরায় চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেষের পথে করোনা, এই সময় সরকারের পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত?
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, দেশের প্রত্যেকটি এলাকাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। পাশাপাশি গোটা দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টিকে অতি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। সে লক্ষ্যে দেশের প্রত্যেকটি হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরি কাঠামোর ওপর অবশ্যই নজর দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ (ICU) চিকিৎসাব্যবস্থা চালু এবং হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সাম্প্রতিক কেন্দ্র সরকারের ওই নির্দেশিকায় নিয়ম বিধি শিথিল করার নির্দেশ দেওয়া হলেও রাজ্য সরকারকে করোনার প্রাথমিক সতর্কতা সংকেতের জন্য নিয়মিতভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকেই প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।