করোনা পরিস্থিতিতে আরও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুধু করোনা নয়, আরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। বর্তমানে যেহেতু আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে তাই জ্বর, সর্দি সহ একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে আবার তাঁরা সাধারণ জ্বরকে করোনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছেন। তবে এই পরিস্থিতিতে আরও একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা বেড়েছে বিশেষজ্ঞদের। তা হল ডেঙ্গু (Dengue)। করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেক রাজ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠলেও ডেঙ্গুর নতুন একটি স্ট্রেনের জন্যই (Strain) বাড়ছে চিন্তা।
advertisement
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে-
বর্ষাঋতু মানেই মশার প্রকোপ বৃদ্ধি। বিভিন্ন এলাকার জমা জমে মশার বংশ বৃদ্ধি হয়। যার ফলে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন হাজার হাজার মানুষ। শুধু ডেঙ্গু নয়, ম্যালেরিয়া (Malaria), টাইফয়েড (Typhoid), এনকেফেলাইটিসের (Encephalitis) মতো রোগেও আক্রান্ত হন অনেকে। এছাড়াও মশার কামড়ের ফলে আরও অনেক রোগে ভোগেন অনেকে। তবে এবছর পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। অন্য বছরের তুলনায় এবছর ডেঙ্গুর একটি নতুন স্ট্রেন চিন্তা বাড়িয়েছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন এই স্ট্রেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশের ১২ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নতুন এই স্ট্রেন এখনও পর্যন্ত দেশের ১১টি রাজ্যে আক্রমণ করেছে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে আরও কয়েকটি রাজ্য সমস্যায় পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা হলে কি শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে? যা জানা জরুরি...
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখনই হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়নি। পুরো পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার বার্তার দিয়েছেন। ডেঙ্গুর নতুন স্ট্রেন আক্রমণ করলে প্রবল মাত্রায় জ্বর আসছে। পাশাপাশি আরও কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ডেঙ্গুর নতুন স্ট্রেন আক্রমণ করলে কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
ডেঙ্গুর অনেকগুলি স্ট্রেন রয়েছে। সেগুলি হল DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। এই সমস্ত স্ট্রেনগুলির মধ্যে মারাত্মক রূপ নেয় DENV-2 অথবা ডেঙ্গুর দ্বিতীয় স্ট্রেন। এই স্ট্রেনটি সব থেকে মারাত্মক রূপ ধারণ করে। DENV 2-এর আক্রমণের ফলে শরীরের ভিতরে ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ হতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (Indian Council of Medical Research)-এর ডিরেক্টর জেনারেল ডক্টর বলরাম ভার্গভ (Balram Bhargava)। তিনি জানিয়েছেন, এই স্ট্রেনটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে সক্ষম। এবং কারও উপর আক্রমণ করলে সেই ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম এলাকায় এই স্ট্রেনটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মূলত, আগ্রা, ফিরোজাবাদ, মথুরা, আলিগড়ের বিভিন্ন এলাকায় এই স্ট্রেনে আক্রান্তদের সন্ধান মিলেছে। গত মাসে এই স্ট্রেনে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনার একটা টিকাতেই কাবু হবে সব ভ্যারিয়ান্ট, জেনে নিন মাল্টিভ্যারিয়ান্ট ভ্যাকসিন নিয়ে!
আবার, সংবাদ সংস্থা আইএএনএস (IANS)-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে RGSS হাসপাতালের ডিরেক্টর ডক্টর বি এল শেরোয়াল (B.L. Sherwal) জানিয়েছেন, সাধারণ ডেঙ্গু দমনে যে ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় এক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন নিতে হবে। কারণ, দু'টিই মশা বাহিত রোগ। পার্থক্য শুধুমাত্র স্ট্রেনের ক্ষেত্রে। তাঁর কথায়, বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেওয়া যাবে না। কোনও স্থানে জল জমলে তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাড়ির ভিতরেও ফুলদানি বা অ্যাকোরিয়াম জাতীয় কিছু থাকলে (যেখানে মূলত জল জমার সম্ভবনা থাকে) সেই জল নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে। ব্লিচিং জাতীয় কোনও কিছু বাড়ির আশপাশে ছড়াতে হবে। এছাড়া বাড়িতে থাকলেও সব সময় ফুলহাতা জামা পরে থাকতে হবে যাতে করে মশা না কামড়ায়। এই বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। সুতরাং দিনের বেলায় আরও সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গুর নতুন স্ট্রেনের উপসর্গ নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান, সাধারণ ডেঙ্গুর মতোই ডেঙ্গির নতুন স্ট্রেনে একই উপসর্গ দেখা দেয়। যে সব উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে সেগুলি হল- প্রবল জ্বর। তার সঙ্গে গা হাত পায়ে ব়্যাশ দেখা দিতে পারে। কাশি এবং ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে।
এই স্ট্রেনটি কেন মারাত্মক?
ডেঙ্গুর সাধারণ স্ট্রেনের থেকে এই স্ট্রেনটি আরও বেশি মারাত্মক। কারণ হিসেবে PSRI হাসপাতালের চিকিৎসক বিনীতা সিং টন্ডন (Vineeta Singh Tando) জানিয়েছেন, D2 স্ট্রেনে প্রবল জ্বরের পাশাপাশি বমি, জয়েন্টে ব্যথা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমনকী ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। যদি কোনও ব্যক্তি অতীতে সেরো (Sero) টাইপ ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং পরবর্তী সময়ে ফের সেরো টাইপ ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে তাঁর ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর D2-এর আক্রমণের ফলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (Dengue Hemorrhagic Fever) দেখা দিতে পারে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অবশ্যই চিকিৎসকেরও পরামর্শ নিতে হবে। অ্যাসপিরিন জাতীয় কোনও ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না।
মশা বাহিত রোগ থেকে কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
বর্ষাকালে যেহেতু বৃষ্টির জেরে বিভিন্ন এলাকায় জল জমে তাই মশার বংশবৃদ্ধি হয়। আর মশার বংশবৃদ্ধি মানেই মশাবাহিত রোগের বৃদ্ধি। তাই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমাতে সচেতন থাকতে হবে। বাড়ির আশপাশে জল জমলে তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি লম্বা লম্বা ঘাসের মাঝখানেও মশা বসবাস করে এবং বংশবৃদ্ধি হয়। তাই ঘাস এবং আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে জীবানুনাশক স্প্রে করা যেতে পারে। বাড়ির জানলা বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজনে জানলা ও দরজায় মশার জাল লাগানো যেতে পারে। এতে মশা কম ঢোকার সম্ভাবনা। প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। এছাড়াও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। সবজি খাওয়ার প্রয়োজন। পাশাপাশি বাইরের খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করতে হবে।
আরও পড়ুন: সুস্থ হৃদয়ের পথে বড় বাধা! কী ভাবে এই পাঁচ অভ্যাস হৃদযন্ত্রে চাপ ফেলে?