কী ভাবে জালিয়াতি করত প্রতারকরা?
বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে জালিয়াতরা এবং নিজেদেরকে কোনও ব্যাঙ্কের কর্মী বা অফিসার বলে পরিচয় দেয়। এর পর জালিয়াতদের তরফে যে ব্যক্তিকে ফোন করা হয় তাঁকে ভয় দেখানো হয়। বলা হয় কার্ড বন্ধ হয়ে যাবে অথবা বলা হয় কার্ড আপডেট করে নতুন কার্ড দেওয়া হবে। এই অছিলায় গোপন নম্বর জেনে নিয়ে সেই ব্যক্তির অ্য়াকাউন্ট থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে নিত প্রতারকরা। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে টোকেনাইজেশন (Tokenisation) প্রযুক্তি নিয়ে এল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এতদিন পর্যন্ত যাঁরা শুধুমাত্র স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহার করতেন তাঁরাই টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু এবার থেকে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ ব্য়বহারকারীরাও এর সুবিধা পাবেন।
advertisement
আরও পড়ুন: Stock SIP-তে বিনিয়োগ করলে সুবিধা কী? রইল বিশেষজ্ঞের মতামত!
RBI-এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও সংস্থা তাঁদের কার্ড ব্যবহারকারীদের টোকেনাইজেশন-এর সুবিধা দিতে পারেন। কারণ বর্তমানে টোকেনাইজড কার্ডের ব্যবহার বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। আর সেই কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে RBI। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য় একটি বিশেষ ফ্রেমওয়ার্ক গঠন করেছ তারা। টোকেনাইজেশনের ফলে শুধুমাত্র যে কার্ড খুব সহজেই ব্য়বহার করা যাবে তা-ই নয়, নিরাপত্তা আরও জোরদার থাকবে এবং অনলাইন প্রতারণার সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে। এর পাশাপাশি অনেক সময়ে ই-কমার্স সাইটগুলি কার্ডের ডিটেলস সেভ করে রাখে। এতে প্রতারণার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়ে। কিন্তু নতুন এই প্রযুক্তিতে তা একধাক্কায় অনেকটা কমানো সম্ভব হবে। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে টোকেনাইজেশনের সুবিধা পাওয়া যাবে।
টোকেনাইজেশন কী?
খুব সাধারণ একটা বিষয়। প্রতিটা কার্ডের আলাদা আলাদা ডিটেলস থাকে। অর্থাৎ সিভিভি নম্বর আলাদা, কার্ড নম্বর আলাদা। নতুন প্রযুক্তির ওই কার্ডে ডিটেলসের পরিবর্তে থাকবে একটি করে টোকেন। অর্থাৎ প্রতিটি কার্ডে একটি করে ইউনিক ক্যারেক্টার কম্বিনেশন থাকবে। যা কার্ড পেমেন্টের ক্ষেত্রেও কোনও ডিটেলস জানাবে না। অর্থাৎ নতুন প্রযুক্তির ওই কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করলে ব্য়ক্তিগত কোনও তথ্য় প্রকাশ পাবে না।
একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। বর্তমানে সব কার্ডে থাকে একটি ১৬ সংখ্য়ার নম্বর। কিন্তু নতুন টোকেনাইজেশন প্রযুক্তির কার্ডে থাকবে কয়েকটি বিশেষ ক্য়ারেক্টার। যার মধ্য়ে লোকানো থাকবে ওই ১৬ সংখ্যার নম্বরটি। যখন ওই কার্ড দিয়ে কোথাও পেমেন্ট করা হবে তখন ওই ক্যারেক্টারগুলি নিজে থেকে নম্বরে রিপ্লেস বা কনভার্ট হয়ে যাবে। ফলে কেউ জানতে পারবে না ওই কার্ডে আসলে ১৬ ডিজিটের সংখ্য়া কী কী আছে।
এই প্রক্রিয়ায় কি সত্যিই জালিয়াতি কমানো সম্ভব?
এই প্রযুক্তিতে যেটা হবে তা হল কোনও মার্চেন্ট কার্ডের আসল ডেটা জানতে পারবে না। এমনকী সেই মার্চেন্টের পেমেন্ট ডেটাবেস থেকে কার্ডের তথ্য় চুরি হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম। এমনকী এই প্রযুক্তিটি কার্ডের ব্য়বহারকারীদের জন্য়ও অনেক সুবিধার। কারণ, কোনও ব্য়বহারকারীকে নিজের কার্ডের বিস্তারিত তথ্য মনে রাখতে হবে না। এবং রেকারিং পেমেন্টের ক্ষেত্রেও খুব সহজেই ব্য়বহার করা যাবে এই প্রযুক্তি।
যদিও কোনও হ্য়াকার বা জালিয়াত কার্ডের টোকেন অর্থাৎ কয়েকটি ক্যারক্টার জানতে পারে তাতেও কোনও সমস্য়ার কারণ হবে না। কারণ কার্ডের তথ্য় জানতে পারবে না সে। ফলে চুরি হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম।
কারা কার্ড টোকেনাইজ করতে পারবেন?
যাঁরা কার্ড ইস্য়ু করেন তাঁরাই যে কোনও কার্ডকে টোকেনাইজ করাতে পারেন। তাঁদের বলা হয় টোকেনাইজ সার্ভিস প্রোভাইডার (TSP)। RBI-এর তরফে জানানো হয়েছে, TSP-রা টোকেনাইজ এবং ডি-টোকেনাইজ করতে পারবেন।
কী ভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি?
যাঁরা টোকেনাইজইড কার্ড ব্য়বহার করবেন তাঁরা একটি বিশেষ অ্যাপ পাবেন। যখন কোনও মার্চেন্টের কাছে টোকেনাইজড কার্ড ব্য়বহার করা হবে তখন সেই কার্ডটি থেকে যাবতীয় তথ্য কার্ডের নেটওয়ার্কে যাবে। তার পর তা যাবে কার্ডটি যে সংস্থা ইস্যু করেছে তাদের কাছে। এর পর টোকেন রিকোয়েস্টারের কাছে একটি টোকেন রিকোয়েস্টের জন্য় পৌছবে। এবং সব শেষে ওই কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্য়বহারীর ফোনে পৌঁছবে। এর পর সেটি সেই অ্য়াপের মাধ্য়মে কনফার্ম করতে হবে অথবা কিউআর কোড (QR) রিড করে তা সাবমিট করতে হবে।
আরও পড়ুন: RBI-র তৈরি ডিজিটাল মুদ্রা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন এটা Bitcoin-র মতো তৈরি করা হবে না?
যে সব সংস্থা টোকেন জেনারেট করতে পারবে তারা হল ভিসা, মাস্টারকার্ড। তাদেরকেই মূলত টোকেন সার্ভিস প্রোভাইডার বলা হচ্ছে। মোবাইল পেমেন্ট, ই-কমার্স পেমেন্টের ক্ষেত্রে টোকেন সার্ভিস করে থাকে তারা।
যখন কোনও ব্যবহারকারী গুগল পে (Google Pay) বা ফোন পে-র (PhonePe) মতো সংস্থার সঙ্গে নিজেদের ভার্চুয়াল ওয়ালেট তৈরি করে, তখন সেই সব সংস্থাগুলি সর্বপ্রথম টোকেনাইজেশন সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে টোকেনের জন্য় আবেদন করে। এর পর সংশ্লিষ্ট টোকেন সার্ভিস প্রোভাইডার কাস্টমারের ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে পুরো বিষয়টি ভ্যালিডেশন করে এবং কাস্টমারের যাবতীয় তথ্য় ভেরিফাই করে। ভ্যালিডেশন বা ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে কাস্টমারের ফোনে একটি কোড পাঠায় টোকেনাইজেশন সার্ভিস প্রোভাইডার। সেই কোডটি নির্দিষ্ট ভার্চুয়াল ওয়ালেটে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ব্যবহারকারীর ডিভাইজের সঙ্গে নির্দিষ্ট ভার্চুয়াল অ্য়াকাউন্টের একটি লিঙ্ক হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়ার ফলে অনলাইন লেনদেন অনেক সুরক্ষিত থাকবে। কারণ হিসেবে তাঁরা জানিয়েছেন, পেমেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তা ব্যবহারকারীর উপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট অ্যাপে সাবমিট করলে তবেই পেমেন্ট কনফার্ম হবে। ফলে জালিয়াতি অনেকটা কমবে।