ভারতে AK ২০৩ রাইফেল তৈরির ক্ষেত্রে কোন কোন সমস্যা ছিল?
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির AK ২০৩ রাইফেল তৈরির প্রস্তাব ২০১৮ সালে প্রথম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার প্রযুক্তি এদেশে আনার ক্ষেত্রে এবং রাইফেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যাই হোক, পরবর্তীতে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে এনিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। জানা গিয়েছে, উত্তর প্রদেশের আমেথিতে এই রাইফেল তৈরি করা হবে।
advertisement
প্রথমিক ভাবে ৬ লাখ AK ২০৩ রাইফেল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তার জন্য ৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। এবং আগামী বছর থেকে রাইফেল তৈরির কাজ শুরু হবে। এদিকে যেহেতু রাশিয়ার সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল তাই চলতি বছরের শুরুর দিকে রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৭০ হাজার AK ২০৩ রাইফেল কিনেছে ভারত।
একটি রিপোর্টে প্রকাশ, রাশিয়ান প্রযুক্তি নিয়ে ভারতে AK ২০৩ তৈরির যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তাতে প্রযুক্তির দাম নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। মূলত প্রাথমিক ভাবে রাশিয়া যে দাম চেয়েছিল তাতে এদেশে AK ২০৩ রাইফেল তৈরির ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হচ্ছিল। তুলনামূলক ভাবে রাশিয়া থেকে AK ২০৩ আনলে তাতে খরচ হচ্ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু ভারতের তরফে রাশিয়ার কাছে আবেদন করার পর রাশিয়া তার নিজের রয়্যালটি ফি বাবদ বড় অঙ্কের টাকা ছেড়ে দেয়। যার ফলে সেই সমস্যা সমাধান হয়েছে। এবং এদেশে তুলনামূলক কম খরচে তৈরি হবে AK ২০৩।
নতুন রাইফেল পেলে ভারতের কী কী সুবিধা হবে?
ভারত বর্তমানে ব্যবহার করে ইনসাস (INSAS- Indian Small Arms System) রাইফেল। কিন্তু তার পরিবর্তে নিয়ে আসা হচ্ছে AK ২০৩ রাইফেল। ইনসাস রাইফেলটি প্রযুক্তিগত ভাবে তৈরি করেছিল DRDO (Defence Research and Development Organisation)। ১৯৯০ সাল থেকে এই রাইফেলটির ব্যবহার শুরু হয়। ব্যবহার শুরুর পর থেকেই একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। এর পর ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইনসাস রাইফেল সম্পূর্ণ বদল করা হবে এবং তার পরিবর্তে নতুন কোনও প্রযুক্তির রাইফেল নিয়ে আসা হবে।
ইনসাস রাইফেলে ম্যাগাজিন বেরিয়ে আসার সময় বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়। অত্যন্ত ঠাণ্ডা এলাকায় ইনসাস রাইফেল ব্যবহার করা হলে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। যাঁরা মূলত নকশাল এলাকায় সন্ত্রাস দমনের কাজ করেন তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন ইনসাস রাইফেলের পরিবর্তে তাঁদের AK 47 বা সমগোত্রীয় কোনও অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হোক। এছাড়াও ইনসাস রাইফেলের গুলির ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এই জাতীয় কোনও সমস্যা AK ২০৩ রাইফেলে থাকবে না বলে জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে রাশিয়ান ডিফেন্স এজেন্সি রসোবোর্নএক্সপোর্ট (Rosobornexport) একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, AK ২০৩-এর ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে গুলি করা যায়। এছাড়াও আধুনিক ডিজাইন, ফোল্ডিং সুবিধা, পিস্তল গ্রিপ সহ একাধিক সুবিধা রয়েছে।
ইনসাস রাইফেলের সঙ্গে AK ২০৩-এর কী কী পার্থক্য রয়েছে?
AK ২০৩ গঠনে অনেকটাই ছোট এবং হাল্কা। তুলনায় ইনসাস রাইফেল বেশ ভারী এবং বড়। AK ২০৩ রাইফেল ওজনে ৩.৮ কেজি এবং ইনসাস রাইফেল ওজনে ৪.১৫ কেজি। ইনসাস-এর দৈর্ঘ্য ৯৬০ mm এবং AK ২০৩-এর দৈর্ঘ্য ৭০৫ mm।
গুলির বিষয়ে তুলনা করলে সেখানেও বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে AK ২০৩। ইনসাস-এ ৫.৫৬X৪৫mm বুলেট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু AK ২০৩-এ ৭.৬২X৩৯ mm বুলেট ব্যবহার করা হবে। ৪০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে গুলি করতে সমর্থ ইনসাস। কিন্তু AK ২০৩-এ ৮০০ মিটার দূরত্বে গুলি করা সম্ভব। এছাড়াও AK ২০৩-এ ৩০টি বুলেট একসঙ্গে ঢোকানো সম্ভব। অন্য দিকে, ইনসাস-এ ২০ রাউন্ড গুলি ঢোকানো সম্ভব।
গুলি ছোড়ার ক্ষেত্রে ইনসাস-এ প্রতিবার ১টি করে গুলি করা সম্ভব। তার পর ফের ম্যাগাজিন রেডি করতে হয়। কিন্তু AK ২০৩ সম্পূর্ণ অটোম্যাটিক এবং সেমি অটোম্যাটিক মোডে কাজ করে। তবে গুলি করার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ইনসাস। ইনসাস-এ প্রতি মিনিটে ৬৫০টি ফায়ার করা সম্ভব। কিন্তু AK ২০৩-এ ৬০০টি ফায়ার করা সম্ভব। কিন্তু AK ২০৩-এ ফায়ারিং অ্যাকিওরেসি অনেক বেশি থাকে।
AK ২০৩ তৈরির চুক্তি কী ভাবে ভারতকে আরও মেন ইন ইন্ডিয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে?
AK ২০৩ রাইফেল তৈরি এবং তা দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে ইন্দো রাশিয়ান রাইফেল প্রাইভেট লিমিটেড ( Indo-Russia Rifles Pvt Ltd)। তারাই সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ভারতে এই রাইফেল তৈরি করছে। এছাড়াও তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড, রসোবরোনএক্সপোর্ট এবং আরও একটি সংস্থা। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ৫০.৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এই প্রকল্পে। এবং রাশিয়ান সংস্থাগুলির মোট ৪৯.৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তিতেই রাশিয়ান প্রযুক্তিতে ভারতে রাইফেল তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) চেয়েছিলেন ১০০ শতাংশই দেশে তৈরি করা হোক AK ২০৩।
সরকারের তরফে মনে করা হচ্ছে এদেশে AK ২০৩ করার ফলে যে শুধু মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে এবং দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে তা নয়, দেশে চাকরির অনেক ক্ষেত্র খুলে যাবে। এই প্রকল্প শুরু হওয়ায় অনেক নিয়োগ বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে।