জ্বর, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে...
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে গোটা দেশ জুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। সঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। যা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিভিন্ন জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ফলে কোভিড তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে কোভিড ১৯ প্রত্যেকের জীবনে একাধিক সমস্যা তৈরি করেছে। এর উপর ডেঙ্গু সহ অন্য রোগে আক্রান্ত হলে সমস্যা আরও বাড়বে। প্রত্যেকে যদি সঠিক ভাবে সচেতন না হয় তাহলে সমস্যা আরও বাড়বে। একদিকে কোভিড, অন্য দিকে ডেঙ্গু বা অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত হলে টুইন্ডেমিকের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
advertisement
ডেঙ্গুতে সংক্রমণ এমন একটি সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে যখন কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড ছাড়াও বিভিন্ন সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এমনকী বিভিন্ন এলাকায় কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যার থেকেও সাধারণ জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব? কোভিড থেকে এবং সাধারণ জ্বর থেকে বাঁচতে কী কী পদক্ষেপ অবলম্বন করা দরকার?
কখন তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে? জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কেন বাড়ছে?
কোভিডের তৃতীয় ঢেউ কবে আছড়ে পড়বে সে নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন। এবং এখনও পর্যন্ত যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তাতে মনে করা হচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ পর কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়বে। সেই হিসেব অনুযায়ী ভারতে চলতি মাসের শেষের দিকে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন গণনা এবং বিভিন্ন গাণিতিক মডেল অনুযায়ী ধারণা করা হয়েছে আগামী কয়েক মাস ধরে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। কারণ এক দিকে উৎসবের মরসুম, অন্য দিকে ভ্রমণ করার প্রবণতা কোভিড সংক্রমণ বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে এটাও মনে করা হচ্ছে, যেহেতু গণহারে কোভিডের ভ্যকসিন দেওয়ার কাজ চলছে তাই তা কোভিডের তৃতীয় ঢেউ কিছুটা হলেও প্রতিহত হতে পারে।
যখন আমরা প্রত্যেকেই প্রায় করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে ব্যস্ত তখন অন্য রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকী কিছু সময় পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিচ্ছে।
সাধারণ জ্বর হলে কি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে?
কোভিড এবং সাধারণ জ্বর দু'টি সম্পূর্ণ আলাদা ভাইরাস দ্বারা আক্রমণ করে। কিন্তু একই সময় দু'টি ভাইরাসের আক্রমণ হলে তা চিন্তার কারণ। এতে তা টুইন্ডেমিকের রূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চলতি বছরে টুইন্ডেমিকের সম্ভাবনা অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও তাঁদের বক্তব্য, জ্বরে আক্রান্ত হলেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে অন্য কোনও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই পরিস্থিতিতে সকলকে সুস্থ থাকতে হলে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ পরিস্থিতি মারাত্মক হলে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। অন্য দিকে, সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হলে কো-ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। যার ফলে কোভিডে আক্রান্ত হয় অনেকে। সেরে উঠতেও অনেক সময় লাগে।
উপসর্গ না বুঝতে পারা
বর্তমানে যেহেতু আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে তাই অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। সাধারণ জ্বরের যে সব উপসর্গ থাকা দরকার সেই সব উপসর্গগুলি প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে উপসর্গ সেই ভাবে প্রকাশ পাচ্ছেও না। আর এতেই তৈরি হয়েছে একাধিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হয় তো কেউ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু সেই ভাবে তাঁর কোনও উপসর্গ প্রকাশ পায়নি। অথবা উপসর্গ প্রকাশ পেলেও তা সাধারণ জ্বরের উপসর্গ। আর তাতেই চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হচ্ছে। এমনকী অনেকে সাধারণ জ্বর বলে উপেক্ষা করছেন বিষয়টা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শরীরে কোনও সমস্যা দেখা দিলেই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ রোগ নির্ণয়ে যত দেরি হবে পরিস্থিতি তত জটিল হবে।
সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন
কোভিড ১৯ মানবশরীরে আক্রমণ করলে কতটা মারাত্মক হতে পারে তা ইতিমধ্যে অনেকের কাছে পরিষ্কার। সাধারণ জ্বর হলেও পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, গত বছর সেই ভাবে জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়নি। কিন্তু এই বছর জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়েছে। আগে থেকে কোনও উপসর্গ প্রকাশও হতে দেখা যাচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তাঁরা আচমকা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সব ক্ষেত্রে রোগ মুক্তি হতেও বেশ কিছুটা অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন পড়ছে। শুধু বড়রা নয়, বর্তমানে সাধারণ জ্বরে ছোটরাও আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় পরিস্থিতি বেশ আশঙ্কাজনক হচ্ছে।
আরও পড়ুন-বিছানায় শুয়ে-বসে আরাম করে বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ! অভ্যেসই ডেকে আনছে বিপদ
কী ভাবে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব?
সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে যেহেতু আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় তাই সেই সময় অনেকে সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হয়। যেহেতু এটি একটি ভাইরাসজনিত জ্বর তাই প্রত্যেকের উচিত এই সময় সতর্ক থাকা। সতর্কতা নিলে জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব। কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
-নিয়মিত হাত ধোওয়া প্রয়োজন। কারণ, হাতে ভাইরাস থাকলে তা মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে শরীর।
-যখন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, তখন নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন।
-যদি কেউ অসুস্থ বোধ করেন তাহলে তাঁর উচিত নিজেকে আলাদা করে রাখা। হাঁচি, কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা প্রয়োজন। এবং সঙ্গে সঙ্গে হাত ধোয়া বা হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
-চোখে, নাকে এবং মুখে বার বার হাত দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা উচিত।
-বাড়ির বাইরে বের হলে সর্বদা মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। এবং প্রয়োজন হলে সঙ্গে একটি স্যানিটাইজার রাখা প্রয়োজন।
-এই নিয়মগুলি মেনে চললে সাধারণ জ্বর এবং কোভিড আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন- কোভিড বুস্টার ডোজ ও থার্ড ডোজের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?? জেনে নিন বিশদে!