আসলে বাড়ি থেকে কাজ আমাদের কাজের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এনেছে। যেমন-- অনেকে বাড়িতে চেয়ারের পরিবর্তে বিছানায় (Bed) বসে ল্যাপটপে কাজ করেন। আবার মাঝে মাঝেই অনেকে আধশোওয়া অবস্থায় কাজ করেন। এমনিতে ল্যাদ খাওয়া আমাদের হাড়ে হাড়ে রয়েছে। তাই একটু সময় পেলেই আমরা গড়িয়ে নিতে থাকি।
তবে, বিছানায় বসে কাজ করলেও সেটা স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। টানা বিছানায় বসে কাজ করলে ঘাড়, পিঠ এবং মেরুদণ্ডের উপর প্রভাব পড়বে। কিন্তু শুধু এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলিই (Side Effects) নয়, বিছানায় শুয়ে বা বসে কাজ করা মানসিক স্বাস্থ্যের (Mental Health) উপরেও প্রভাব ফেলে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বাড়ি থেকে কাজের সময় আমরা অনেকেই ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের সামনে সঠিক ভাবে বসি না। তাতে আমাদের মেরুদণ্ড, মাংসপেশি ও হাড়ের উপর খুব চাপ পড়ে। যার জন্য মেরুদণ্ড, মাংসপেশি ও হাড়ে খুব যন্ত্রণা হয়।
মুম্বইয়ের ওকহার্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সোনাল আনন্দ এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, কী ভাবে বিছানায় বসে কাজ করা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং এর কারণে আত্মবিশ্বাস কমতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব--
চাপ এবং উদ্বেগের উচ্চ মাত্রা (Heightened levels of stress and anxiety):
বেডরুমের আবছা আলো উচ্চ মাত্রার উদ্বেগ বা চাপ সৃষ্টি করে, যা মনস্তাত্ত্বিক এবং মানসিক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদে এটা খারাপ হতে পারে।
কাজের মান কমে যাওয়া (Low productivity):
বিছানা থেকে কাজ ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে। যা কাজের মান, এনার্জি এবং জীবনের মানকে কমিয়ে দিতে পারে। শেষ পর্যন্ত, মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে আপনার তা মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
এনার্জির অভাব ও মেজাজ পরিবর্তন (Low energy and mood swings):
বাড়ির অন্যান্য ঘরের তুলনায় বেডরুমে আলো কম থাকে এবং অনেকে জানালা বন্ধ রাখেন। অর্থাৎ বেডরুমে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ঢোকে না। সূর্যের আলো প্রাকৃতিক সহায়ক হিসাবে বিবেচিত হয় ও এনার্জি দেয়। বেডরুমে কাজের সময় কম সূর্যের আলো ক্লান্তি আনে ও মনকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
অন্যান্য সমস্যা (Other issues):
বিছানায় বেশি ক্ষণ কাজ করলে চোখের উপরে চাপ পড়ে। শারীরিক সম্পর্কে প্রভাব পড়ে। যার জন্য অস্থিরতা এবং উত্তেজনা থাকবে।
বিছানায় বসে কাজ করার আরও পাঁচটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
স্থূলতা (Obesity):
বিছানা থেকে কাজ করলে এবং মোটেও নড়াচড়া না-করলে অতিরিক্ত ওজন বাড়তে পারে। অল্প দিনেই মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ব্যথা (Pain): একটানা বিছানায় বসে থাকলে কোমর, পিঠ, ঘাড়, হাত, কব্জি এবং চোখের ব্যথায় ভুগতে হতে পারে। খাটে বসে কাজ করলে পিছনে সাপোর্ট দেওয়ার মতো কিছু থাকে না। বালিশের উপর ঠেস দিয়ে কাজ করলেও কোমর আর পিঠ সঠিক সাপোর্ট পায় না।
ঘুম কমে যাওয়া (Reduce sleep quality):
বিছানা মূলত ঘুম বা আরামের জন্য। কিন্তু, যখন কেউ এটি কাজ বা পড়ার জন্য ব্যবহার করেন, তখন তাঁকে জেগে থাকতে হয়। বিছানায় কাজ করলে ঘুমের সঙ্গে তার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যাবে এবং পরে রাতে ঠিকমতো ঘুম হবে না।
অ্যাসিডিটি (Acidity):
একেবারেই নড়াচড়া না-করলে এবং বিছানায় এক জায়গায় বসে টানা কাজ করলে অ্যাসিডিটি এবং অম্বলের সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।
কম উৎপাদনশীলতা (Low productivity):
বিছানায় বসে টানা কাজ করলে ক্লান্তি আসবে, ঘুম পাবে। যার কারণে কাজে মন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে এবং কাজের মানও পড়ে যাবে।
বিছানা থেকে কাজ করার অভ্যেস কী ভাবে কমানো যাবে?
উপযুক্ত কাজের পরিবেশ (Proper Work Atmosphere):
বিছানার পরিবর্তে টেবিল এবং চেয়ার ব্যবহার করতে হবে। যাতে খোলামেলা ভাবে কাজ করা যায়। রাতে ভাল ঘুম চাইলে দিনের বেলা বিছানা থেকে দূরে থাকতে হবে। টেবিল সুন্দর করে সাজানো গোছানো থাকলে কাজ করতেও ভালো লাগে। ডেস্কের কাছে একটি বা দুটি গাছ রাখলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এ ছাড়া, ল্যাপটপের চার্জারের তার এবং অন্যান্য জিনিসগুলি ডেস্কে সুন্দর ভাবে রাখতে হবে, যাতে একটার সঙ্গে আর একটা জড়িয়ে না-যায়।
আরও পড়ুন- পুজোর মুখে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা: করোনা মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ করছে সরকার?
চেয়ারে এমন ভাবে বসুন, যেন মেরুদণ্ড সোজা থাকে। এতে ব্যাক পেইনের মতো সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপও আপনার থেকে অন্তত এক ফুট দূরত্বে থাকলেই সব চেয়ে ভালো হয়। ফলে চোখ ভালো রাখা সহজ হবে। সেই সঙ্গে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসতে হবে। সঠিক চেয়ারে বেছে নেওয়াটাও খুব জরুরি।
এমন চেয়ারে বসা উচিত, যার পিছনে হেলান দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। চেয়ারে বসে কাজ করার সময় পায়ের মধ্যে যাতে বেশ কিছুটা দূরত্ব থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। না-হলেই পেশিতে টান ধরতে পারে।
সঠিক পোশাক (Dress up properly):
অফিসে যাওয়ার জন্য যেমন পোশাক পরতে হয়, বাড়ি থেকে কাজ করলেও একই ধরনর পোশাক পরতে হবে। যাতে সাধারণ ভাবে ভালো লাগে। রাতের পোশাক পরে কাজে বসা উচিত নয়। আর সময়মতো কাজেও বসতে হবে।
মাঝে মাঝে হাঁটা-চলা করা (Keep moving):
কাজে এনার্জি আনতে মাঝে মাঝে স্বল্প বিরতি নেওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। যদি বিছানায় বসে করা হয়, তাহলে পিঠ, ঘাড়, হাত এবং চোখের ব্যথা এড়াতে হাঁটা-চলা করতে হবে। এতে স্থূলতা, অম্লতা, চাপ, উদ্বেগ, বিরক্তি, হতাশার মতো সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে পাঁচ মিনিটের জন্য হাঁটা-চলা করা উচিত।
পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া (Adapting to the Environment):
অফিসের পরিবেশ থেকে আচমকা বাড়ির পরিবেশে কাজ শুরু করার পর পরিবর্তনটা সামলানো একটু কঠিন হয়ে যায়। তবে, চেষ্টা করলেই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Work From Home