এনডিপিএস (NDPS) আইনে কোন কোন মাদক নিষিদ্ধ?
নারকোটিক্স ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস আইনে মাদকদ্রব্য বলতে কোকা পাতা (Coca leaf), গাঁজা (Cannabis), আফিম (Opium), পপি স্ট্র (Popy straw) এবং সব উৎপাদিত মাদকই অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু, সাইকোট্রপিক পদার্থ (Psychotropic Substances) বলতে বোঝায় প্রাকৃতিক বা সিন্থেটিককে অথবা কোনও প্রাকৃতিক উপাদান বা কোনও লবণ বা এই জাতীয় পদার্থ বা উপাদান। যা এই আইনে উল্লিখিত। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের লক্ষ্য চিকিৎসা বা বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য ছাড়া মাদকদ্রব্য এবং সাইকোট্রপিক পদার্থের উৎপাদন, বাণিজ্য, ব্যবহার ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা। এই আইন সংশোধন করে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্যের তালিকা বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে। সেই অধিকার সংসদের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে, মাদকের প্রকৃতি, অপব্যবহার করার সম্ভাবনা, সুযোগ ইত্যাদি বিচার করা হয়।
advertisement
এনডিপিএস আইনে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে?
এনডিপিএস আইনের অধীনে নির্ধারিত শাস্তি বাজেয়াপ্ত হওয়া মাদকের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে হয়। পরে আইন সংশোধন করে শাস্তি তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় এবং কোন ধরনের শাস্তি হবে তা ঠিক করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, গাঁজা চাষের শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এছাড়াও উৎপাদন, দখল, কেনা-বেচা, পরিবহণ এবং অবৈধ পাচারের ক্ষেত্রে শাস্তি বাজেয়াপ্ত হওয়া গাঁজার পরিমাণের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, অল্প পরিমাণে (১ কেজি) গাঁজা বাজেয়াপ্ত হলে শাস্তি এক বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আবার অনেক সময় দোষীর ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে বাজেয়াপ্ত হওয়া গাঁজার পরিমাণ একটু বেশি (১ কেজির বেশি, ২০ কেজির কম) হতে হবে। তবে যদি কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ (২০ কেজি)গাঁজা পাওয়া যায় তবে সেই ব্যক্তির ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এক্ষেত্রে সাজা কোনও ভাবেই ১০ বছরের নিচে হবে না। এছাড়াও জরিমানা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে, জরিমানা এক লাখ টাকার কম হবে না। ২ লাখ টাকার বেশি জরিমানা আদায়ের জন্য আদালতে আবেদন করা যেতে পারে।
এনডিপিএস আইনের ২৭ নম্বর ধারায় যে কোনও মাদকদ্রব্য বা সাইকোট্রপিক পদার্থ সেবনের জন্য শাস্তির কথা বলা আছে। যেখানে বলা হয়েছে যে কোকেন, মরফিন, ডায়াসিটাইলমোরফিন বা অন্য কোন মাদকদ্রব্য বা সাইকোট্রপিক পদার্থ সেবন করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। উপরোক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন অন্য কোনও মাদক সেবনের জন্য শাস্তি হবে ৬ মাস পর্যন্ত কারাবাস এবং এতে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। রাজস্ব বিভাগের মতে, গাঁজার ক্ষেত্রে ১ কেজি পর্যন্ত বাজেয়াপ্তকে 'অল্প পরিমাণ' বলা হয়। ২০ কেজি বা তার বেশি বাজেয়াপ্তকে 'বাণিজ্যিক পরিমাণ' বলা হয়। চরস বা হাশিসের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম পর্যন্তকে 'অল্প পরিমাণ' বলা হয়। এক্ষেত্রে 'বাণিজ্যিক পরিমাণ' হল ১ কেজি বা তার বেশি।
এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, যে বার বার একই অপরাধ করলে মাদক মামলায় সাজা বেশি হতে পারে। বার বার একই অপরাধের জন্য কারাবাসের সাজা সর্বোচ্চ মেয়াদের দেড়গুণ পর্যন্ত হতে পারে। জরিমানাও সর্বোচ্চ পরিমাণের দেড়গুণ হতে পারে। একই ধরনের অপরাধে আবারও দোষী সাব্যস্ত হলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশ গাঁজাকে বৈধতা দিয়েছে?
১৯৮৫ সালে লাগু হওয়া কেন্দ্রের এনডিপিএস আইন হল রাষ্ট্রসংঘের নীতিমালায় স্বাক্ষরকারী হিসাবে ভারতের প্রতিশ্রুতি। অন্য দেশগুলিও এই নীতিমালায় স্বাক্ষর করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মাদক সম্পর্কিত জাতীয় নীতি অনুসারে চিকিৎসা বা বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য ছাড়া মাদকদ্রব্য এবং সাইকোট্রপিক পদার্থের উৎপাদন, বাণিজ্য, ব্যবহার ইত্যাদি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করবে। তবে, এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন গাঁজার ব্যবহার প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং ভারতের লাখ লাখ মানুষ নিয়মিত ভাবে এটি সেবন করে। উপরন্তু, দেশে সব ধরনের গাঁজা নিষিদ্ধ নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ভাং বা সিদ্ধি, যা গাঁজার পাতা থেকে তৈরি একটি সাধারণ মিশ্রণ, তার বহুল ব্যবহার রয়েছে। ভাং এনডিপিএস আইনের (NDPS Act) আওতাভুক্ত নয়, এর উৎপাদন ও বিক্রি অনেক রাজ্যেই অনুমোদিত ধর্মীয় কারণে।
আইন থাকা সত্ত্বেও গাঁজার ব্যবহার ভারতে চলছেই, আর সেই কারণে বাড়ছে মামলার সংখ্যাও। যা পরোক্ষে বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৩ সালে হেম্প ড্রাগস কমিশনকে দিয়ে ভারতে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। সেই কমিশন রিপোর্ট দিয়েছিল যে গাঁজার পরিমিত ব্যবহার শারীরিক, মানসিক বা নৈতিকতার উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেনি। কয়েক বছর আগেই উরুগুয়ে, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্য গাঁজার বিনোদনমূলক ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়াও এই দেশগুলি বিশ্বব্যাপী গাঁজার ব্যবহারকে বৈধতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৩ সালে উরুগুয়ে সরকার ১৮ বছরের উপরের মানুষদের গাঁজা ব্যবহারে সম্পূর্ণ অনুমতি দেয়। ওষুধের দোকানে গাঁজা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে কানাডা গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এছাড়া, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ২০০১ সাল থেকে গাঁজা ব্যবহারের অনুমতি আছে এই দেশে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গাঁজার ব্যবহার অনুমতি দেয়। এখন দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে গাঁজা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু, ব্যক্তিগত স্তরের বাইরে বিক্রি বা ব্যবহার নিষিদ্ধ। আমেরিকার ১১টি প্রদেশ, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি, তারা বিনোদনমূলক গাঁজা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। অন্য প্রদেশগুলি হল আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া, ইলিনয়েস, মাইন, ম্যাসাচুসেটস, নাভেদা, ওরিগাঁও, ভেরমন্ট। তবে প্রদেশগুলিতে গাঁজা বিক্রি ও রাখার আইন ভিন্ন ভিন্ন।
গত বছরের জুনে ইকুয়েডর গাঁজা চাষ ও বিক্রি আইনে পরিবর্তন আনে। বাড়িতে গাঁজা গাছ লাগানোর অনুমতিও দিয়েছে সরকার। এখন বিশ্বের অনেক দেশই গাঁজার ব্যবহার বিষয়ে নিজেদের মনোভাব ও নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে।