Children Viral Fever: বাচ্চা জ্বরে ভুগছে? এই ৩টি লক্ষণ দেখলে কোনও ভাবে বাড়িতে ফেলে রাখবেন না...জানুন চিকিৎসকের মত
- Published by:Pooja Basu
Last Updated:
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের (COVID19 third Wave) আতঙ্কের মধ্যেই বাচ্চারা ভুগছে অজানা জ্বরে (Children Fever)৷ খুবই আতঙ্কিত বাবা-মায়েরা৷ কী করবেন? জানাচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ৷
কয়েকদিন ধরেই খবরে শিরোনামে ছোটদের অজানা জ্বর (Children Fever)৷ করোনার সঙ্গে এই জ্বরের কোনও সম্পর্ক না থাকলেও এর দাপট নেহাত কম নয়৷ এমনকী মৃত্যুও পর্যন্ত হয়েছে৷ প্রবল জ্বর-শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় (Children Pneumonia) আক্রান্ত হচ্ছে ছোট বাচ্চারা৷ আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ফুসফুস৷ প্রাথমিকভাবে ভাইরাল ফিভার (Children Viral fever) বা কখনও ডেঙ্গু বা স্ক্রাব টাইফাস আবার কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছে৷ কী করলে ছোট বাচ্চারা সুস্থ থাকবে? কোন লক্ষণ দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে অভিভাবকদের এবং সর্বোপরি কীভাবে এই রোগের থেকে মুক্তি মিলবে? উত্তর দিচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা (Child Specialist Dr. Sumita Saha)৷
১) প্রশ্ন- অনেক সময় বাচ্চারা সর্দি-কাশিতে ভোগে? কখন সতর্ক হতে হবে?
উত্তর- বাচ্চারা খুব অল্পতেই সর্দি-কাশিতে ভোগে৷ এখন এমনিতেই ফ্লুয়ের আবহাওয়া৷ কখনও বৃষ্টি হচ্ছে তো কখনও রোদ৷ এএখন ভাইরাল ফ্লু (Viral Flu) যেমন হচ্ছে তেমন ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়াও (Bacterial Pneumonia) হচ্ছে৷ তবে ভাইরাল ফ্লুতে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না৷ ১ বা ২ বছরের বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে৷ অনেক সময় ভ্যান্টিলেশনেও (Children in Ventilation) পাঠাতে হচ্ছে শিশুদের, অক্সিজেন দিতে হচ্ছে বা নেবুলাইজেশন লাগছে৷ তবে সেটা অবশ্যই তাদের অসুস্থতা বুঝে৷ বাচ্চা অসুস্থ হলেই একদিনের মাথায় বাবা-মায়েরা চলে আসছেন চিকিৎসকের কাছে৷ স্বাভাবিক, বাচ্চার শরীর খারাপ হলে, অভিভাবকদের খুবই চিন্তা হয়৷ তবে ৬ মাসের কম বয়সি বাচ্চা না হলে, অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অর্থাৎ ২ দিন বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা যেতে পারে শিশুকে৷
advertisement
advertisement
২) প্রশ্ন- এই জ্বরের উপসর্গ কী কী?
উত্তর- দিন দু’য়েকের জ্বর৷ ১০২-১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠছে৷ সঙ্গে নাক দিয়ে অনবরত জল পড়া৷ হাঁচি-কাশি৷ আবার অনেক সময় বমির উপসর্গও থাকছে৷ তবে এগুলো সবই ভাইরাল ফ্লুয়ের উপসর্গ (Symptoms of Children Viral Flu)৷ অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া (Symptoms of Bacterial Pneumonia in Children) হলে হাঁচি বা নাক দিয়ে জল পড়ে না৷ গা ব্যথা হয় সঙ্গে বুকে সর্দি, ঘরঘর কাশি হয়৷ ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়াতে হাই ফিভার (High Fever) থাকে৷
advertisement
যেটা ভীষণভাবে নজরে রাখতে হবে, সেটা হল দু’দিনের বেশি, অতিরিক্ত জ্বর (১০২-১০৩ ডিগ্রি) উঠছে কিনা? বাচ্চা স্বাভাবিক নিয়মে খেতে পারছে কিনা? খাওয়ার পরিমাণ অর্ধেকের কম হয়েছে কিনা? প্রসাবের মাত্রা কমেছে কিনা? সঙ্গে শ্বাসকষ্ট রয়েছে কিনা? এগুলো যদি থাকে, তাহলে বাচ্চাকে বাড়িতে না রেখে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হবে৷
৩) প্রশ্ন- প্রাথমিকভাবে, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সময় লাগে, সেই সময়টা বাবা-মায়েরা কী করতে পারেন? প্রাথমিক কোনও চিকিৎসা?
উত্তর- এই সময়, বাচ্চা অসুস্থ হলে প্রাথমিকভাবে (Treatment Children Viral Flu) তাকে আরামে রাখাটাই লক্ষ্য৷ এই সময়টা চেষ্টা করতে হবে যাতে শিশু কিছুটা শারীরিক ভাবে আরামে থাকে৷ জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে৷ এতে হাঁচি-কাশিতে একটু আরাম হতে পারে৷ ছোট শিশুদের (বিশেষ করে ৬ মাসের কম বয়সি, যারা মায়ের দুধ খায়) নাক বন্ধ হয়ে গেলে খেতে অসুবিধা হয়৷ খুবই কষ্ট পায়৷ তাদের স্যালাইন ড্রপ দেওয়া যেতে পারে৷ স্যালাইন ড্রপ বড়দেরও দেওয়া হয়৷ এতে নিঃশ্বাসের সমস্যা দূর হয়৷ যারা একটু বড়, গার্গেল করতে পারে, বা ভ্যাপার নিতে সক্ষম, তারা এগুলো করলে কিছুটা কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে৷ এর সঙ্গে অবশ্যই নজরে রাখতে হবে যে শিশুরা হাঁপিয়ে যাচ্ছে কিনা৷ বা অন্য কোনও উপসর্গ শরীরে দেখা দিচ্ছে কিনা৷ অ্যান্টি অ্যালার্জি জাতীয় কিছু ওষুধ দেওয়া যেতে পারে৷
advertisement
এর সঙ্গে অবশ্যই নজরে রাখতে হবে যে শিশুরা হাঁপিয়ে যাচ্ছে কিনা৷ বাড়িতে অক্সিমিটার থাকলে স্যাচুরেশন মাপা যেতে পারে৷
৪) প্রশ্ন- কোন বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি?
উত্তর- নির্দিষ্ট কোনও বয়স নেই, সব বয়সের বাচ্চাদের মধ্যেই এই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে৷ হয়ত বাড়িতে বড়দের কারও জ্বর হচ্ছে৷ যা অল্প সময়ের মধ্যেই সেরে যাচ্ছে৷ তাদের থেকেই বাচ্চারা সংক্রমিত হচ্ছে৷ এই জ্বরে বাচ্চারা বেশি ভুগছে৷
advertisement
৫) যেসব বাচ্চা একদম ছোট, কথা বলতে পারে না, তাদের প্রতি কীভাবে নজর রাখতে হবে?
উত্তর- একদম ছোট বাচ্চা বলতে যারা মায়ের দুধ খায়, (precaution for breat feeding baby) তাদের জন্য মায়েদের সাবধানে থাকতে হবে৷ মায়েদের যদি সর্দি হয়, তাহলে তাদের শিশুদের থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়৷ তবে এর মানে তাদের মায়েদের দুধ খাওয়াবে না, এমন নয়৷ কারণ শিশুরা মায়ের দুধ খেলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে৷ মায়ের দুধ থেকে ভাইরাস ছড়ায় না৷ এই রোগ ছড়ায় বায়ু কণা থেকে৷ ঠিক যেভাবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, এক্ষেত্রেও সেভাবে সতর্ক থাকবে হবে৷ তাই মায়েদের দুটো মাস্ক পরে শিশুদের কাছে যেতে হবে, ব্রেস্ট ফিডের সময়ও৷ খেয়াল রাখতে হবে যাতে নাকে বা মুখে হাত দেওয়ার পর সেই হাত শিশু শরীর স্পর্শ না করে৷ বারবার হাত ধুয়ে শিশুকে ছুঁতে হবে৷ বাড়ির যাদের সর্দি-কাশি হবে তাদের বাচ্চার কাছে খুব বেশি না যাওয়াই ভাল৷
advertisement
যদি শিশুর জ্বর হয়, তাহলে সেই জ্বর ২-৩ খুব বেশি হচ্ছে কিনা, দেখতে হবে৷ সঙ্গে যদি শ্বাস কষ্ট থাকে, বা খাওয়ার নিয়মে ৫০ শতাংশ কমে যায় এবং প্রসাবের মাত্রা কমে যায়, তাহলে সতর্ক হতে হবে৷ বাড়িতে ফেলে না রেখে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে৷ এর মধ্যে বাচ্চার স্যাচুরেশন মাপা যেতে পারে বাড়িতে৷
advertisement
৬) প্রশ্ন- এই জ্বর বা সংক্রমণ এড়াতে কী কী করতে হবে?
উত্তর- যা আবহাওয়া তাতে এই ধরনের ভাইরাল ফ্লু বা ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে৷ বাচ্চাদের জ্বর হলে, উপসর্গগুলি নজরে রাখতে হবে৷ এরই সঙ্গে কোভিডের ক্ষেত্রে যে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তাই করতে হবে৷ এর মধ্যে থাকবে মাস্ক পরা (বাড়িতেও), বারবার হাত ধোয়া৷ প্রয়োজনে আইসোলেট থাকা৷
৭) প্রশ্ন- চিকিৎসা কী?
উত্তর- কী হয়েছে, তার উপর চিকিৎসা (Treatment for Children Viral Fever) নর্ভর করবে৷ যদি ভাইরাল ফ্লু হয়, তাহলে একরকমের চিকিৎসা৷ যদি ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হয়, তাহলে অন্য রকমের চিকিৎসা৷ ১ বছরের কম বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভাইরাল ফ্লু হলে কতটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে সেটা দেখে কখনও শুধু স্যালাইন ড্রপ দিলে হয়৷ কখনও আবার নেবুলাইজ করতে হয়৷ প্রয়োজন অনুযায়ী সিরাপও দেওয়া হয়৷ সবটাই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা হয়৷ এক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও প্রয়োজন নেই৷
অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে৷ প্রয়োজনে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে৷ ৬ মাসের কম বয়সি শিশুদের ভেন্টিলেশনেও রাখা হচ্ছে শারীরিক অবস্থা বুঝে৷
যেহেতু এসব ক্ষেত্রেও করোনাভাইরাসের মত উপসর্গ নিয়ে শিশুরা আসে আমাদের কাছে, তাই বোঝার চেষ্টা করতে হবে কোভিড নাকি সাধারণ ফ্লু৷ অনেক ক্ষেত্রে কোভিডের সঙ্গে স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া যুক্ত থাকে৷ তাই এমন উপসর্গ থাকলেই শিশুদের কোভিড পরীক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়৷ না হলে ভাইরাল ফ্লুয়ের চিকিৎসা শুরু করা হয়৷ আর যদি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, তখন বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষা করা হয়৷
Location :
First Published :
October 03, 2021 7:47 PM IST