WHO-র পরিসংখ্যান (World Heart Day 2021) অনুযায়ী হার্টের সমস্যায় (Heart Disease) বিশ্ব জুড়ে প্রত্যেক বছর প্রায় প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জন্যে মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে৷ এবং এর আওতায়ে থাকে কম বয়সি পুরুষ এবং মহিলা (Heart Disease Young Male-Female)৷ যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি৷ কিছুদিন আগেই অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লার মৃত্যু, সেই কথা আরও জোর দিয়ে মনে করিয়ে দিল৷ অর্থাৎ হার্টের সমস্যা যে শুধুমাত্র একটি বয়সের পরে হয় এবং শুধুমাত্র বয়সকালে (৬০-৭০ বছর) ধরা পড়ে, তা একেবারেই নয়৷ তথ্য বলছে যে, CAD (Coronary Artery Disease) যেটা ৪৫ বছরের নীচে হার্টের সমস্যাকে বলা হয়, তা অনেকটাই বেড়েছে৷
তাজ্জবের বিষয় যে, এই রোগের বয়সসীমা নেমে এসেছে ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে৷ গুরুতর হার্ট অ্যাটাক নিয়ে এরা ভর্তি হচ্ছেন এবং ধরা পড়ছে ৮০-৯০ শতাংশ ব্লক (Heart Block)৷ কখনও আবার ১০০শতাংশ ব্লকও পাওয়া যাচ্ছে৷ এর জন্য করতে হচ্ছে এমার্জেন্সি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি (Emergency Angioplasty) কিংবা বাইপাস সার্জারি (Bypass Surgery)৷ ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে-তে (World Heart Day 2021) জেনে নেওয়া যাক অল্প বয়স থেকে কীভাবে হার্টের যত্ন নেবেন৷ জানাচ্ছেন হার্ট বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবপ্রিয় মন্ডল (Dr. Debopriyo Mondal)....
মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫৫ বছরের আগে CAD (Coronary Artery Disease) হয়, তাহলে সেটাকে বলা হয় প্রিম্যাচিওর ক্যাড৷ যুবদের ক্ষেত্রে সেই বয়সটাই নেমে আসে ৪৫ বছরে৷ একে বলে Young CAD, জানাচ্ছেন ডাঃ দেবপ্রিয় ৷ ফ্যামিলি হিস্ট্রি বা বংশে যদি কারও হার্টের সমস্যা থাকে, তাহলে তার থেকে সেই সমস্যা দেখা যেতে পারে৷ এদের মধ্যে ১৫-২৫ শতাংশের ডায়বেটিস (Diabetes) এবং হাইপারটেনশনের (Hypertension) সমস্যা থাকে৷ ১১-২৮শতাংশের থাকে Hypercholesterolaemia এবং ৪০শতাংশের কোনও না কোনও সময় ধূমপানের (smoking) অভ্যাস থাকে৷ এছাড়া রয়েছে ওবিসিটি (Obesity) বা স্থূলত্বের সমস্যাও৷ এসবের ফলে পশ্চিমী দেশের যে কোনও ব্যক্তির থেকে প্রায় ১০ বছর আগেই এদেশের মানুষের মধ্যে মোটের উপর হৃদরোগের সমস্যা দেখা যায়৷ এর জন্য প্রয়োজন অ্যাগরেসিভ রিস্ক ফ্যাক্টর কন্ট্রোল (Aggressive Risk Factor Control)৷ স্পষ্ট করছেন হার্ট স্পেশ্যালিস্ট৷
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি বিষয় একজোট হয়ে কাজ করে ৷ বিশেষ করে এই সময়ের মানসিক অবস্থা ও ডিজিটাল ফ্যাটিগ (Digital Fatigue) (ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করা বা অনবরত স্ক্রিনে চোখ রাখা) চুপিসারে ধমনীর মধ্যে চর্বী জমাচ্ছে৷ সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর জীবনধারাও (Bad Lifestyle) পাল্লা দিয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে অল্প বয়সে হৃদরোগের সমস্যা৷ যার পরিণতি হচ্ছে মারাত্মক৷
ডাঃ দেবপ্রিয়ের মতে, সবটাই আমাদের হাতের বাইরে নয়৷ আমরা চাইলে কিছুটা এড়িয়ে চলতে পারি এই রোগের থেকে৷ তবে তার জন্য প্রয়োজন নিষ্ঠা৷ সবথেকে সহজ উপায় হল সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন যাকে হেলথি লাইফস্টাইল (Healthy Lifestyle for good heart) বলা হয়৷ তার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া বুঝে করতে হবে ৷ এর পাশাপাশি যাদের পরিবারে হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদেরও কম বয়স থেকে নিয়ম করে চেকআপ (Regular Check Up)করাতে হবে৷ থাকতে হবে খুবই সাবধানে৷
যাদের বংশগত এই রোগ থাকে, দেখা যায় তাঁরা অনেক সময় খুব অল্প বয়সে (২৫-৩০ বছরে) হার্টের সমস্যা নিয়ে আসেন৷ ততদিনে অনেকটাই বড় আকার ধারণ করে করোনারি আর্টারি ডিজিজ (Coronary Artery Disease) ৷ ফলে সেই সময় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ছাড়া উপায় থাকে না৷
প্রাথমিক লক্ষণ কী হতে পারে? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন যে, বুকের বাঁ দিকে চাপভাব কিংবা কিছু দূর জোরে হাঁটার পর নিঃশ্বাসের সমস্যা৷ যাদের familial Hypercholesterolaemia বলে পরিবারের মধ্যে রোগটি রয়েছে তাদের কনুই, বা হাঁটু ফুলে যায়৷ কনুই হাঁটুতে কোলেস্টেরল জমার ফলে ছোট ছোট ফোলা ভাব তৈরি হয় যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় tendon xanthomata বলে৷ যা দেখে অভিজ্ঞ চিকিৎসক সহজেই বুঝে যান আপনার রোগটি৷
কী করতে হবে? সাবধানতা অত্যন্ত প্রয়োজন৷ যাদের সুগার, হাই প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল-এর মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের এই রোগগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে৷ ধূমপান ও মদ্যপান নৈব নৈব চ৷ এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে৷ খাবারের তালিকা থেকে মিষ্টি বাদ দিতে হবে সঙ্গে কোনও ভাজাভুজি, কেক-পেস্ট্রি ধরনের খাবার ও কোল্ড ড্রিঙ্কস চলবে না৷ খাবারের তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর পরিমাণ মরসুমি ফল৷
এতেই কি মুক্তি? অধিকাংশ ক্ষেত্রে হ্যাঁ৷ তবে যাদের বংশগত ভাবে এই সব রোগ থাকে তাদের এরপরও ঝুঁকি (Risk in Heart Disease) থেকে যায়৷ যাদের বংশের নিয়মে কোলেস্টেরল খুব বেশি থাকে তাদের জন্য খুব ভাল কাজ করে pcsk9 inhibitors৷ এর সঙ্গেই জুড়েছে করোনার আতঙ্ক (Heart Disease and Coronavirus)৷ করোনা নিজে থেকে করোনারি আর্টারি সমস্যা সৃষ্টি করে না৷ তবে বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী বেশ কিছু করোনারি আর্টারি থ্রমবোসিস দ্বারা ব্লক হয়ে যায়৷ কোভিড সেরে গেলেও হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে৷ সে কারণে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পরবর্তীতে কার্ডিয়াক চেকআপ বিশেষভাবে জরুরী৷
ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে-তে (World Heart Day 2021) ছড়িয়ে পড়ুক সচেতনতা (Awareness)৷ একটাই কামনা, সকলে নিজের এবং পরিবারের সকলের খেয়াল রাখুন যাতে নিজের গাফিলতি এই মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত না হন৷ কারণ কিছুটা খেয়াল রাখলে অনায়াসে হৃদরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।