TRENDING:

Explained: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট বিশ্বে

Last Updated:

শরণার্থীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO)।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#নয়াদিল্লি: ২০২২ সাল অবশ্যই একটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেটি হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War 2) পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট (Refugee crisis)। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হতে পারে এবং ইউক্রেন (Ukraine) এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার (Russia) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে। শহরগুলি পুনর্নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে বহু ইউক্রেনীয় জীবনের বাকি অংশটা হয় তো অন্য দেশেই কাটাবেন। রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী সংস্থা বা ইউএনএইচসিআর (UN Refugee Agency) বুধবার জানিয়েছে যে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ লাখেরও বেশি শরণার্থী (Refugee) ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। এই সমস্যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সঙ্কট বলে অভিহিত করেছে রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী সংস্থা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্যুইট করেছেন রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি (Filippo Grandi)। শরণার্থীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO)।
advertisement

কারা ইউক্রেন ছাড়ছেন?

যারা বিদেশে চলে যাচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইউক্রেন নিয়ম করেছে ১৮-৬০ বছর বয়সি পুরুষরা দেশ ছাড়তে পারবেন না।

তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন?

দেশের বাইরে কোনও ফ্লাইট না থাকায় শরণার্থীরা গাড়ি, বাস, ট্রেন বা পায়ে হেঁটে প্রতিবেশী দেশগুলিতে পৌঁছচ্ছে। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, পোল্যান্ড (Poland) অর্ধেকেরও বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আক্রমণের পর থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫০৩ জন দেশটিতে প্রবেশ করেছে। হাঙ্গেরি (Hungary) ১২ মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৬ জন শরণার্থী গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ জন ইউক্রেন থেকে স্লোভাকিয়ায় (Slovakia) প্রবেশ করেছে। ১০ মার্চ পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ১ লাখ ৬ হাজার মানুষ রাশিয়ায় আশ্রয় চেয়েছে। মলদোভায় (Moldova) বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৯ জন শরণার্থীর প্রবেশ করেছে। রোমানিয়া (Romania) জানিয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪২ জন শরণার্থী তাদের দেশে প্রবেশ করেছে। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ১৮ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল থেকে ৯৬ হাজার মানুষ রাশিয়ায় প্রবেশ করেছে।

advertisement

চেক প্রজাতন্ত্রে (Czech Republic) ইউক্রেনীয় শরণার্থী প্রবেশের হার দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে এখনও পর্যন্ত এক লাখের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি, ফ্রান্সের (France) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের দেশে প্রায় আড়াই হাজার ইউক্রেনীয় শরণার্থী পৌঁছেছে। আয়ারল্যান্ড (Ireland) সরকার জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ শরণার্থী আয়ারল্যান্ডে পৌঁছেছে। এছাড়া অস্ট্রিয়া (Austria), ক্রোয়েশিয়া (Croatia), এস্তোনিয়া (Estonia), গ্রিস (Greece), ইতালি (Italy), লিথুয়ানিয়া ( Lithuania), নেদারল্যান্ডস (Netharlands), পর্তুগাল (Portugal) এবং সুইডেন (Sweden) হাজার হাজার ইউক্রেনীয়ের আগমনের খবর দিয়েছে।

advertisement

আরও পড়ুন: রাশিয়া কি সিরিয়ার যোদ্ধাদের ইউক্রেনে আনবে? পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?

ইউএনএইচসিআর (UNHCR)-র মার্চের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছিল যে যুদ্ধ শুরু হলে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার সংস্থাটি বলেছে যে শীঘ্রই এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। লাখ লাখ মানুষ ইউক্রেনের অভ্যন্তরে যুদ্ধ থেকে বাঁচতে পালিয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুমান করেছে যে আগামী দুই মাসের মধ্যে ৭৫ লাখ মানুষ ইউক্রেনে বাড়িছাড়া হবে।

advertisement

উদ্বাস্তুরা কি প্রতিবেশী দেশগুলিতেই থাকবে?

ইউক্রেনীয়রা ৯০ দিনের জন্য ভিসা (Visa) ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) যে কোনও দেশে থাকতে পারবে। এতে তাৎক্ষণিক সমস্যার মুখে পড়তে হবে না। ইউক্রেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত চারটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। সেই দেশগুলি হল-পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়া। শেনজেন চুক্তির (Schengen Treaty) কারণে ইইউ ভুক্ত যে কোনও দেশে পৌঁছনোর পর কেউ বেশিরভাগ ব্লকের চারপাশে অবাধে ভ্রমণ করতে পারে। তাই অনেক ইউক্রেনীয় ইতিমধ্যেই ইইউ-র (EU) সদস্য দেশগুলিতে চলে গিয়েছে। বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার ৩৫ জন ইউক্রেনীয় শরণার্থী জার্মানিতে (Germany) রেজিস্ট্রেশন করেছে। সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২৩ হাজার ৮৭২ জন ইউক্রেনিয়ান ইতালিতে পৌঁছেছে। ইইউ বলেছে যে তারা ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের তিন বছর পর্যন্ত ব্লকে থাকার এবং কাজ করার অধিকার দেবে।

advertisement

২০২০ সালের জুন পর্যন্ত, প্রায় ৬.১ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় বিদেশে বসবাস করেছিল। তাই অনেক শরণার্থী তাদের প্রবাসী আত্মীয়দের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আমেরিকা নিষিদ্ধ করেছে তেল আমদানি, বিগ টেক ক্লাউড কোম্পানিগুলো কি রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হবে?

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে যাওয়া কতটা সহজ?

এটি জটিল প্রমাণিত হতে পারে। ইউক্রেনীয়দের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ব্রিটেন ((Britain) দুটি ভিসা স্কিম চালু করেছে। কিন্তু এটি একটি আমলাতান্ত্রিক, সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। বুধবার পর্যন্ত মাত্র ৭০০টি ভিসা জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (Boris Johnson) প্রক্রিয়াটির মন্থর গতির পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে ব্রিটেনে (UK) আসতে চাওয়া শরণার্থীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি খতিয়ে দেখা দরকার। তবে সমালোচনার মুখে পড়ে ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটেন সরকার। ঘোষণা করা হয়েছে, উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য ব্রিটেনের যেসব নাগরিক তাদের অতিরিক্ত ঘর বা সম্পত্তি ছেড়ে দেবে, তারা প্রতি মাসে ৪৫৬ ডলার করে পাবে। সরকারের ‘হোমস ফর ইউক্রেন স্কিম’ নামে প্রকল্পের আওতায় কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য একটি অতিরিক্ত ঘর খালি করে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) গত সপ্তাহে বলেছে যে তারা ইতিমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে থাকা ইউক্রেনীয়দের 'অস্থায়ী সুরক্ষিত' মর্যাদা দেবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি (Jen Psaki) গত মাসে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও শরণার্থী গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে অধিকাংশ শরণার্থী ইউরোপে থাকতেই পছন্দ করবে। ইজরায়েল মঙ্গলবার বলেছে যে নতুন করে তারা মাত্র ৫ হাজার ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত। তবে, প্রায় ২০ হাজার ইউক্রেনীয়, যারা রুশ আক্রমণের আগেই দেশে এসেছিল তাদের সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। ইউক্রেনও প্রায় ২ লাখ ইহুদির আবাসস্থল, যাদের মধ্যে বহু মানুষ ইতিমধ্যেই ইজরায়েলে পালিয়ে এসেছে, আরও অনেকই পালিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস (Kamala Harris) ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের মোকাবিলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও শরণার্থী নিতে ইচ্ছুক। বৃহস্পতিবার পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ সফরকালে হ্যারিস বলেন, "আমরা যা করতে পারি এবং আমাদের যা করতে হবে, তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি প্রস্তুত।"

শুধু উদ্বাস্ত নয়, এই যুদ্ধ জন্ম দিয়েছে খাদ্য সঙ্কটেরও: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে (Russia-Ukraine War) হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত ও সঙ্কট। করোনাভাইরাস বিশ্ব থেকে এখনও বিদায় নেয়নি। তার মধ্য়েই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। শরণার্থী সংকট ছাড়াও যে সমস্ত বিষয়গুলিতে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে তার মধ্যে অন্যতম খাদ্য সঙ্কট। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সারের (Fertilizer) দাম লাগামছাড়া করে দিতে পারে। বিশেষ করে যদি যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, রাশিয়া (Russia) ও ইউক্রেনে (Ukraine) বিশ্বের প্রায় ২৯% গম উৎপাদন হয়। সূর্যমুখী তেলের (Sunflower Oil) ৬০ শতাংশই আসে এখান থেকে। ফলে এই ধরনের পণ্যের উৎপাদন কমার জেরে সেগুলির দাম বাড়বে। রাশিয়ার সার উপাদানের প্রাথমিক বাজার হল ব্রাজিল, এস্তোনিয়া, চিন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, মেক্সিকো, পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং লাটভিয়া।

রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী কৃষি ও খাদ্যের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। রাশিয়াও প্রচুর পরিমাণে সারের মূল উপাদন যেমন পটাশ (Potash) এবং ফসফেট (Phosphate) উৎপাদন করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সার না দিলে ফলন কমে যাবে। সরাসরি প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনযাত্রায়। জাহাজ চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে পণ্য সরবরাহ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার পাল্টা হিসেবে রাশিয়া সার রফতানি বন্ধ করার কথা জানিয়েছে। ঘরে সমস্যা মেতাতে ইউক্রেনও একই রাস্তায় হেঁটেছে। ইউক্রেন ইতিমধ্যে কিছু কৃষিপণ্যের রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। তার প্রধান হল-গম, ভুট্টা এবং সূর্যমুখী তেল। ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা অভ্যন্তরীণ বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং অন্য জটিল সারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
সাপের ভয়ঙ্কর যম 'এটি'! ধীরে ধীরে কমছে সংখ্যা, বিলুপ্ত হলে বাড়বে মৃত্যু,কী বলছেন আধিকারিক
আরও দেখুন

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে এই পদক্ষেপের অর্থ কৃষকদের জন্য খরচ বাড়বে এবং ফসলের ফলন কম হবে। তাতে খাদ্যপণ্যের (Food) দাম বাড়বে। নাইট্রোজেন সারের মূল উপাদান অ্যামোনিয়া (Ammonia) তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাসের (Natural Gas) প্রয়োজন হয়।

বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Explained: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট বিশ্বে
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল