বিশাল ব্যাটারিগুলি ব্যবহার করার ক্ষমতা ভবিষ্যতের ব্যবস্থাপনা এবং ক্লিনার গ্রিডগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuels) পোড়ানোর পরিবর্তে আমাদের উচিত প্রচুর পরিমাণে বায়ু এবং সৌরবিদ্যুতের মতো পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস (Renewable Sources) ব্যবহার করা এবং সেই বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করা উচিত। তাই পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে বৈদ্যুতিক যানবাহন (Electric Vehicle ) চার্জ করে আমরা আমাদের গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে পারি।
advertisement
আরও পড়ুন - Viral Video: নিজে জানাননি, কিন্তু ‘এই’ সুন্দরী ফাঁস করলেন Shardul Thakur Engagement-র ভিডিও
পরিকল্পনাটি দুর্দান্ত শোনাচ্ছে, তাই না? তবে এটা কাজে করা বেশ জটিল। কারণ বিদ্যুৎ সঞ্চয় করা কঠিন। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখি- আমাদের গাড়িতে। ব্রিটেনের ২৭ মিলিয়ন পরিবারের মধ্যে প্রায় ১% বর্তমানে একটি EV-এর মালিক, প্রতিটি গাড়িতে গড়ে ৬০ কিলো ওয়াটের ব্যাটারি রয়েছে। এই ৩ লাখ ইভি ১৮ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চয় করতে পারে। যা পাওয়ার হাউজগুলিতে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্রিটেনের (UK) স্নোডোনিয়াতে (Snowdonia) ডিনারউইগ পাম্প করা স্টোরেজ প্ল্যান্টের চেয়েও বেশি, এটিতে প্রায় ৯ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করার সুবিধা আছে।
২০৩০ সালের মধ্যে ব্রিটেনের রাস্তায় প্রায় ১১ মিলিয়ন বৈদ্যুতিক যানবাহন থাকতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে যে এই গাড়িগুলির ৫০% অব্যবহৃত শক্তিকে গ্রিডে ফেরত দিতে সক্ষম হবে। যাতে করে ৫.৫ মিলিয়ন পরিবারকে বিদ্যুৎ দেওয়ার সুযোগ আসবে।
কী ভাবে আমরা এটা করতে পারি?
একটি প্রযুক্তিগত স্তরে গাড়িগুলিকে গ্রিডকে পাওয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা কররা জন্য তিনটি জিনিস ঘটতে হবে। প্রথমত, গাড়ি থেকে চার্জিং পয়েন্টে বিদ্যুতের দ্বি-মুখী স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। এই সিস্টেমটি ভেহিকেল টু গ্রিড (Vehicle-to-Grid) নামে পরিচিত। ফুকুশিমা বিপর্যয় (Fukushima Disaster) এবং পরবর্তী বিদ্যুতের ঘাটতির পরে জাপানে প্রথমবার এটি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু প্রযুক্তিকে রোল আউট করার জন্য আরও উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি থেকে গ্রিডে চার্জিং হার্ডওয়্যার ইনস্টলেশন, গাড়ির সামঞ্জস্যতা এবং বিদ্যুতের বাজার পরিবর্তন। এছাড়াও দ্রুত চার্জিং সরঞ্জামের সমাধান করা প্রয়োজন।
প্রযুক্তিগত সমাধানের তৃতীয় অংশটি হল পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক থেকে সহায়তা নিশ্চিত করা। গ্রিডের কিছু অংশ একই সময়ে সংযোগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়ার ডাম্প করতে অক্ষম। তাই স্থানীয় নেটওয়ার্কগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে।
আরও পড়ুন - Shane Warne Accident: ছেলের সঙ্গে বাইক চড়তে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট, ১৫ মিটার গেলেন হেঁচড়ে হেঁচড়ে
চালকদের সহায়তা:
একবার এই প্রযুক্তি সব জায়গায় চালু হয়ে গেলে আমরা কী ভাবে নিশ্চিত করব যে লোকেরা এই স্কিম বেছে নেবে? তার জন্য উপভোক্তাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। নতুন উদ্ভাবনী বিকল্প সম্পর্কে গাড়ি চালাকদের সচেতন করতে হবে। চালকদের হাতে-কলমে দেখাতে হবে যে এই প্রযুক্তি কী ভাবে কাজ করে।
এই মুহুর্তে, বেশিরভাগ ট্রায়ালগুলি পাওয়ার সংস্থাগুলি বা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থাগুলি দ্বারা হচ্ছে, যারা জানে প্রযুক্তি কী ভাবে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করে এবং পাওয়ার গ্রিডের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। কিন্তু, চালকদের দিকে এবার নজর দেওয়া উচিত। সস্তায় বৈদ্যুতিক যানবাহন চার্জ করা এবং সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে গ্রিডে সেই বিদ্যুৎ বিক্রি করে বছরে ভালো অর্থ আয় করা যেতে পারে। এছাড়াও, পরিবেশের উপর প্রভাব কমানো, জ্বালানি খরচ সাশ্রয় করা এবং সস্তায় বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ, সবই দুর্দান্ত সুবিধা। যদিও লো ব্যাটারির কারণে অনেক গাড়ি মালিক উৎসাহ না-ও পেতে পারে। তাছাড়া বাড়িতে সামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জার ইনস্টল করার সম্ভাব্য খরচ ও ব্যাটারি আয়ুকাল কমে আসার বিষয়টিও রয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটি মসৃণ না হলেও সমাধানের অনেক রাস্তা রয়েছে। পাওয়ার কম্পানি, গাড়ি প্রস্তুতকারক এবং ফাইন্যান্স কম্পানির জন্য সরকারি সাহায্য প্রয়োজন যার জন্য বিশেষ করে।
ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি: ভারতে (India) বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। আগামীদিনে এই গাড়ি আরও জনপ্রিয় হবে, তার সঙ্গে চাহিদা বাড়বে বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর দেশে বিক্রি হওয়া মোট গাড়ির ০.৪৫ শতাংশ ইলেকট্রিক গাড়ি। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ও দেশের কয়েকটি রাজ্য সরকার এনিয়ে নীতিমালা তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পেশ করা পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে, তবে ভারত হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র, ঠিক যেমন এখন চিনে বহু শিল্প সামগ্রী তৈরি হয়। কিন্তু সেই ভবিষ্যৎ ঠিক কতটা দূরে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এক্ষেত্রে দেশের কাছে কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জিং, যেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে ইলেকট্রিক ভেহিকলের জন্য লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি (Lithium Ion Battery)। ভারত এখনও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবহনমন্ত্রী (Union Minister for Road Transport and Highways) নীতিন গড়কড়ি (Nitin Gadkari) জানিয়েছেন যে মাত্র ২ বছরের মধ্যেই বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম পেট্রল ও ডিজেল গাড়ির দামে কেনা যাবে। তিনি বলেন, "আগামী ২ বছরের মধ্যে, বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম এমন স্তরে নেমে আসবে যে সেগুলি পেট্রল গাড়ির সমান হবে। ইতিমধ্যেই ইভি-তে জিএসটি মাত্র ৫ শতাংশ করা হয়েছে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিরও দাম কমছে।" মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামদিনে পেট্রল পাম্পগুলিতে ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে।