দেরিতে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করার একাধিক ভালো ও একাধিক খারাপ দিক রয়েছে। যা পূর্বে বহুবার আলোচনা হয়েছে বহু স্তরে। কিন্তু দেরিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কারও অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে, যা পেরিয়ে পরিবারের পরিকল্পনা (Lifestyle) করতে সময় লেগে যায়। আবার কেউ দেরিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াকেই সুবিধার মনে করে। সে যাই হোক, এই ART-র ফলে আজ অনেকেই উপকৃত।
advertisement
ফার্টিলিটি, দেরিতে সন্তান ধারণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই যেটা বলা দরকার তা হল এগ ফ্রিজিং (Egg Freezing)। বহু সেলেবের হাত ধরে আজ এই টার্ম বা কথা অনেকের কাছেই পরিচিত। কী এই এগ ফ্রিজিং?
এগ ফ্রিজিং একটি পদ্ধতি, যেখানে মহিলাদের ডিম্বাণু ফ্রজেন করা হয়। পরে এই ডিম্বাণু পুনরুদ্ধার করে স্পার্মের সঙ্গে মিলিয়ে ইউটেরাসে দেওয়া হয়।
যারা দেরিতে সন্তান ধারণের কথা ভাবছে তাদের জন্য এই পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও মহিলারা অন্য বেশ কিছু কারণের এই পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হল, ১. যদি ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য কোনও মহিলার বন্ধ্যাত্ব আসার সম্ভাবনা থাকে বা ২. কারও যদি এন্ডোমেট্রিওসিস বা টিউব্যাল ব্লকিং থাকে।
আরও পড়ুন - Slim Figure: জিম আপাতত বন্ধ, ওজন ঝরাতে কাজে আসবে এই ব্যায়ামগুলো!
কী ভাবে করা হয় এই এগ ফ্রিজিং (Egg Freezing) ?
এগ ফ্রিজিংয়ের ক্ষেত্রে একাধিক স্তর ও পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলি হল -
১. সিন্থেটিক হরমোনের মাধ্যমে একটি চক্রের মধ্য দিয়ে একটি ডিম্বাণুর বদলে একাধিক ডিম্বাণু তৈরি করবে ওভারি। এর পর ডিম্বাণুগুলি কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা দেখার জন্য একাধিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ডিম্বাণুর গুণগত ও সংখ্যাগত মান খতিয়ে দেখবেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে প্রায় ১০-১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগবে।
২. এই ডিম্বাণু পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুত হয়। এর পর একটি আলট্রাসাউন্ড প্রোবের মাধ্যমে ডিম্বাণুগুলি অ্যাসপিরেট করা হয়। এক্ষেত্রে সাকশন ডিভাইস যুক্ত একটি নিডলের মাধ্যমে ফলিকল থেকে এক বা একাধিক ডিম্বাণু পুনরুদ্ধার করা হয়। প্রতিটি চক্রে প্রেগনেন্সির সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য ফলিকল থেকে প্রায় ১৫টি ডিম্বাণু সরিয়ে ফেলা হয়।
৩. শেষমেশ, এই ডিম্বাণুগুলি শূন্য তাপমাত্রার নিচে ফ্রোজেন করা হয় ও সংরক্ষিত করা হয়। এই ভিট্রিফিকেশন প্রক্রিয়া আন-ফার্টিলাইজড ডিম্বাণুর উপর আইস ক্রিস্টাল জমতে বাধা দেয়।
আরও পড়ুন - Ban vs NZ: কিউয়িদের দেশেই কিউয়ি বধ বাংলাদেশি বাঘদের, এবাদতের আগুনে বোলিংয়ে বাজিমাত
৩০-৪০ বছরে কি এগ ফ্রিজিং সম্ভব ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এগ তথা ডিম্বাণু ফ্রিজিংয়ের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর। একজন মহিলা যখন ৩০ বছর পেরিয়ে যান, তখন ধীরে ধীরে ফার্টিলিটি রেট হ্রাস পেতে থাকে। একই সঙ্গে ডিম্বাণুগুলির গুণগত মানও হ্রাস পায়। তাই যদি কেউ লেট প্রেগনেন্সির প্ল্যান করছেন, তাহলে ৩০-৩৪ বছরের মধ্যেই এগ ফ্রিজিংয়ের কথা মাথায় রাখতে হবে।
বয়সসীমা কি কোনও ভূমিকা নেয় ?
কোন বয়সে এগ ফ্রোজেন হচ্ছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ২০-৩০ বছরের মধ্যে ডিম্বাণুগুলির গুণগত ও সংখ্যাগত মান ভালো থাকে। তাই সফল হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল হয়। যাই হোক, ৪০ বছর বয়সেও এগ ফ্রিজিং সম্ভব, তবে প্রেগনেন্সি রেট হ্রাস পায়। কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুগুলির গুণগত ও সংখ্যাগত মান হ্রাস পায়।
আরও পড়ুন - Panchang 5 January: পঞ্জিকা ৫ জানুয়ারি: দেখে নিন নক্ষত্রযোগ, শুভ মুহূর্ত, রাহুকাল এবং দিনের অন্য লগ্ন!
৩০-৪০ বছর বয়সে এগ ফ্রিজিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
২০-৩০ বছরের বয়সসীমার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে ৪০ বছর বয়সে এগ ফ্রিজিং মিসক্যারেজ অর্থাৎ গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। আসল বিষয়টি হল, ওভারির একটি বায়োলজিকাল ক্লক রয়েছে। কিন্তু ইউটেরাসে নেই। যদি, ৩০ বছর বয়সে এগ ফ্রজেন হয় এবং ৪০-৪৫ বছর বয়সে ডিম্বাণু তরলীকরণ তথা দ্রবীভূত করার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে একটি যথাযথ ও স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণ সম্ভব। কারণ, অপেক্ষাকৃত কম বয়সের ডিম্বাণু তুলনামূলকভাবে বেশি বয়সের ইউটেরাসের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা যায়।
এক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে দেশ বিশেষে তা বদলাতে থাকে। যেমন ব্রিটেনে ১০ বছর পর্যন্ত ডিম্বাণু স্টোর করতে পারে মহিলারা। সুইডেনে এই সময়সীমা ৫ বছর।
একাধিক সাবধানতাও অবলম্বন করতে হয়। ক্যানসারের চিকিৎসা চললে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হয়। এন্ডোমেট্রিওসিস বা টিউব্যাল ব্লকিংয়ের মতো বিষয়গুলিও উল্লেখযোগ্য। এর পাশাপাশি মেনোপজের কোনও পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। মহিলারা অনেকেই বিষয়টিকে কেরিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। এগ ফ্রিজিং একটি কেরিয়ার অপশনও হতে পারে। কারণ এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনেকটাই খরচ সাপেক্ষ। তবে এই প্রক্রিয়া চলাকালীন হরমোন প্রয়োগের ফলে কিছু স্বল্পমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এক্ষেত্রে বমি-বমি ভাব, পেটে ব্যথা সহ একাধিক সমস্যা দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, এগ ফ্রিজিংয়ের সময় বিশেষজ্ঞরা কিছু সাধারণ তবে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মহিলাদের একটি যথাযথ ও স্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল মেনে চলতে হবে। সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। যাতে কোনও অসুস্থতা সহজে গ্রাস করতে না পারে, সেই বিষয়ে নজর রাখতে হবে। কারণ এগুলি প্রেগনেন্সির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এগ ফ্রিজিংয়ের সময় বয়স, সাফল্যের সম্ভাবনা, ফ্রিজিংয়ের খরচ, শারীরিক সমস্যা সহ প্রতিটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তার পর সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া শ্রেয়।