তা হলে সমস্যাটা ঠিক কোথায়? প্রথমেই জানতে হবে পিরামিড জালিয়াতির (Pyramid Fraud) সঙ্গে অ্যামওয়ের নাম জড়াচ্ছে কী ভাবে—
অ্যামওয়ে আসলে কী?
অ্যামওয়ে একটি আমেরিকাভিত্তিক MLM সংস্থা। যা গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এরা সরাসরি FMCG (Fast-moving cunsumer goods) পণ্য যেমন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, সৌন্দর্য ও গৃহচর্যা ইত্যাদি বিক্রি করে। সেই সঙ্গে এই সংস্থার দাবি, তারা বিশ্বের অন্যতম লাভজনক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ফলে খুব সহজেই তারা সরাসরি বিক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে MLM চালিয়ে যেতে থাকে। বছরের পর বছর ভারতে এ ভাবেই চলছে অ্যামওয়ের ব্যবসা। কিন্তু এ দেশে MLM বিষয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। একাধিকবার অ্যামওয়ের বিরুদ্ধে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কোনও ভাবেই তাকে এ দেশ থেকে নির্মূল করা যায়নি।
advertisement
আরও পড়ুন : স্তনের সুস্বাস্থ্যের জন্য অন্তর্বাস পরতেই হবে? জানুন, চিকিৎসকদের মত
এই মুহূর্তে ফের সংবাদ শিরোনামে অ্যামওয়ে, কেন?
গত সোমবার, ইডি এক বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, তারা জালিয়াতির মামলায় ওই কোম্পানির স্থাবর, অস্থাবর ও অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ৭৫৭.৭৭ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ুর দিনদিগুল জেলায় অ্যামওয়ের জমি ও কারখানা। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে পরিমাণ সম্পত্তির কথা তারা উল্লেখ করেছে তার মধ্যে ৪১১.৮৩ কোটি টাকা রয়েছে অ্যামওয়ের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিতে। বাকি ৩৪৫.৯৪ কোটি টাকা রয়েছে নানা ব্যাঙ্কে। অ্যামওয়ের অধীনস্থ প্রায় ৩৬টি অ্যাকাউন্টে রাখা রয়েছে এই বিপুল পরিমাণ টাকা। ইডি-র দাবি, অ্যামওয়ে আদতেই MLM কেলেঙ্কারিতে জড়িত।
আরও পড়ুন : কোনও শ্যাম্পু-কন্ডিশনারেই চুল ভাল থাকছে না? এবার এই গাছের ফল ব্যবহার করে দেখুন
অ্যামওয়ের ব্যবসায়িক চিত্র
অ্যামওয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সংস্থার ব্যবসায়িক নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অ্যামওয়ে তার প্রথম বিক্রেতাকে রাখবে পিরামিডের একেবারে চূড়ায়। ওই বিক্রেতা আবার নতুন নতুন বিক্রেতাকে তাঁর আওতায় কাজ দেবেন। এঁদের সকলকেই বলা হয় ABO (Amway Business Owner) অর্থাৎ, এঁরা সকলেই সরাসরি অ্যামওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। এই ABO-রা তিনটি উপায়ে রোজগার করতে পারবেন বলে সংস্থার দাবি—
১. সরাসরি অ্যামওয়ে পণ্য ক্রেতার কাছে বিক্রয় করে।
২. বিক্রয় মূল্য যখন একটি সীমা ছাড়িয়ে যাবে তখন সংস্থা তাঁকে বোনাস দেবে।
৩. ব্যবসায় বৃদ্ধি হলে সংস্থার তরফে ABO-কে ইনসেন্টিভ দেওয়া হবে।
অ্যামওয়ের ব্যবসায়িক মডেল দেখলে তাকে স্পষ্ট পিরামিড বলেই মনে হয়। কিন্তু সংস্থার ওয়েবসাইটে তাদের বিজনেস মডেল অ্যানালিস্ট দাবি করেছেন, পিরামিড নয়, বরং অ্যামওয়ে হল নেটওয়ার্ক ব্যবসা। পিরামিড মডেলে যে কেউ লোক নিয়োগ করেই টাকা পায়। কিন্তু অ্যামওয়ে-তে তা হয় না। সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী যাঁরাই এই ব্যবসায় যোগ দেবেন তাঁরা একটি নির্দিষ্ট স্তর বিভাজন মেনে ক্রয়-বিক্রয় করবেন। আর পরবর্তীজনের কাছে এই ব্যবসা পৌঁছে দেবেন। তাতেই ছড়িয়ে পড়বে ব্যবসা।
আরও পড়ুন : Patna Tea Seller: ২ বছরের চেষ্টাতেও পাননি চাকরি, অর্থনীতিতে স্নাতক তরুণী এখন ‘চায়ওয়ালি’
সত্যিই কি অ্যামওয়ে জালিয়াতি করছে?
বারবার জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে অ্যামওয়ে। কিন্তু ইডি-র দাবি, এটি আদ্যন্ত একটি পিরামিড জালিয়াতি সংস্থা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, অ্যামওয়ে সব সময় প্রচার করে কী ভাবে তাদের দলের সদস্য হয়ে একজন ব্যক্তি ধনী থেকে আরও ধনী হয়ে উঠবেন। পণ্য বিক্রয়ের বিষয়টিকে আদতে গুরুত্বই দেওয়া হয় না। আসলে সরাসরি পণ্য বিক্রয়ের একটি মুখোশ পরে থাকে অ্যামওয়ে। তারই পিছনে চলে MLM পিরামিড জালিয়াতি।
ইডি-র দাবি, সংস্থাটি ২০০২-০৩ সাল থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্রায় ২৭,৫৬২ কোটি টাকা রোজগার করেছে। সেখান থেকে ওই একই সময়ে তারা ভারত ও আমেরিকার বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর ও সদস্যদের প্রায় ৭,৫৮৮ কোটি টাকা দিয়েছে।
অ্যামওয়ে জালিয়াতি
২০০৬ সাল থেকে ভারতে ব্যবসা করছে। ২০১৪ সালে সংস্থার CEO এবং MD-কে জালিয়াতির অভিযোগে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে বছরই অন্ধ্রপ্রদেশ হাই অ্যামওয়ের ব্যবসায়িক মডেলকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছিল। অতীতে চিনেও এই সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।