অথচ ভ্যারিয়ান্ট শক্তিশালী...
দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭২০ জন। এপর্যন্ত ওমিক্রনে (Omicron) আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮৬৮ জন। কোভিডের এই নয়া স্ট্রেইন ভাবাচ্ছে সকলকে কারণ এটি পূর্বের সকল ভ্যারিয়ান্টের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালি এবং সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় চার গুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যারিয়ান্টের ক্ষেত্রে উপসর্গ কম দেখা গেলেও এতে একজনের থেকে অনেকে সংক্রমিত হতে পারেন যা দ্বিতীয় ওয়েভের ডেল্টা (Delta) ভ্যারিয়ান্টের থেকেও অনেক বেশি। আর তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আছড়ে পড়েছে এই তৃতীয় ওয়েভ এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন একসঙ্গে বহু মানুষ।
advertisement
ওমিক্রনের এই বৈশিষ্ট্যই রীতিমতো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষের। যেহেতু দাবানলের আকারে এই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং প্রতি দিন বহু মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন তাই বার বার স্বাস্থ্য কর্মী থেকে চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, বলছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, হাতে স্যানিটাইজ়ার লাগাতে, মাস্ক পরতে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে।
আরও পড়ুন : করোনায় দু'বছরের কম বয়সি শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে কেন? শিশুদের ক্ষেত্রে ওমিক্রনের প্রভাব কতটা মারাত্মক?
এক দিকে যখন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মানুষকে সচেতন করছেন, সতর্ক করছেন, ওমিক্রন ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছায় সেই নিয়ে সমীক্ষায় ব্যস্ত তখন অন্য দিকে, একাংশ বলছেন, এটাই হয়তো প্যানডেমিক বা অতিমারির শেষের শুরু। কেন বলছেন, তার পিছনে একাধিক যুক্তি রয়েছে।
ওমিক্রনের এই ন্যূনতম উপসর্গ হতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উদাহরণ
ওমিক্রন সংক্রমণ শুরু হওয়া থেকেই দেখা যাচ্ছে, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের মতো অক্সিজেন কমিয়ে দেওয়া, তীব্র জ্বর বা অত্যন্ত শরীর খারাপ এবার দেখা যাচ্ছে না। এই ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের বেশিরভাগকেই সাধারণ জ্বর ও সর্দি ও গা-হাত-পা ব্যথায় ভুগতে দেখা যাচ্ছে। অক্সিজেনের কমতিও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এটাকেই অনেকে আশীর্বাদ হিসেবে ধরে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন : নতুন ভ্যারিয়ান্ট না ল্যাবরেটরির ভুল? ডেল্টাক্রন নিয়ে যা জানা দরকার...
চিকিৎসকরা বলছেন, যার আগে কোভিড হয়েছে তার শরীর এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ইতিমধ্যেই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ফেলেছে। যেটাকে চিকিৎসার ভাষায় ন্যাচারাল ইমিউনিটি বলা হয়।
অনেকেই বলছেন, এই ভ্যারিয়ান্ট ভ্যাকসিনের কাজ করতে পারে। ন্যাচারাল ভ্যাকসিনের কাজ। ইউিভার্সিটি অফ রিডিং-এর ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ইয়ান জোনস এবিষয়ে বলেন, যারা ফিট এবং স্বাস্থ্যবান তাদের উপর এই ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছে না। এটি অনেকাংশে সাধারণ ফ্লুর মতোই কাজ করছে। তাঁর কথায়, রিস্ক নিয়ে বলতে পারা যায়, এই ভ্যারিয়ান্ট হয়তো কোনও ক্ষতি ছাড়াই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
যদিও, এই পরিকল্পনাকে অনেকেই নস্যাৎ করে বলেছেন, এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটি পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন : ই-পাসপোর্ট কী, কবে ভারতে চালু হতে পারে এই ব্যবস্থা?
ওমিক্রন কি এই প্যানডেমিক বাড়িয়ে দিতে পারে?
যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে এই প্রশ্ন অনেকের মনেই আসছে প্যানডেমিকের চিত্র বদলাবে খুব শীঘ্রই। কারণ এই ভ্যারিয়ান্ট থেকে বাঁচা খুব সমস্যার। এর সংক্রমণ ক্ষমতা এতটাই বেশি যে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খুব তাড়াতাড়ি এই ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকী, এর জন্য বুস্টার ডোজও বাজারে চলে এসেছে। যাতে সকলে আরেকটু স্ট্রং হতে পারে।
কিন্তু তাও সংক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই ভ্যারিয়ান্ট আপার রেসপিরেটরিতে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে তাই ফুসফুসে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না- যে কারণেই এটির উপসর্গ অনেক কম।
এই আলোচনার মাঝেই ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞ ড. মনিকা গান্ধী বলছেন, যা হচ্ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে ওমিক্রন আদতে প্যানডেমিককে সাহায্য করছে শেষ হতে। Bloomberg Report অনুযায়ী, এই বিশেষজ্ঞর কথা, এই ভাইরাস আমাদের সঙ্গেই থাকবে, আশা করা যেতে পারে এটি ইমিউনিটি বাড়িয়ে প্যানডেমিক শেষ করতে সাহায্য করবে।
তাঁর মতোই, অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছন, এই ভ্যারিয়ান্ট প্যানডেমিককে এন্ডেমিকে পরিণত করবে। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ শিখে যাবে এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা ও একে সামলে চলা।
প্যানডেমিকের শেষের শুরু
European Medicines Agency (EMA) কিছু দিন আগেই প্রশ্ন তুলেছে, ভ্যাকসিনের চতুর্থ শট নিয়ে। কারণ তৃতীয় শট বা বুস্টার ইতিমধ্যেই অনেক দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে। তাদের জন্যই চতুর্থ শট নিয়ে ভাবনা-চিন্তার সময় এসে গিয়েছে বলে প্রশ্ন তুলছে তারা। এজেন্সির কথায়, বুস্টার হল একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যা ফলপ্রসূ হলে লাভ হতে পারে।
এই এজেন্সিরও মতে, ওমিক্রন প্যানডেমিককে শেষের দিকে ঠেলতে শুরু করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সমীক্ষাও বলছে, যদি ওমিক্রনের মতোই উপসর্গ থাকে এবং বিশ্বে এরকম হতে থাকে বার বার তা হলে এটাই শেষের শুরু। এভাবেই মৃত্যু হার কমবে এবং এই ভাইরাসের বাড়াবাড়ি কমবে।
তা হলে কি আমাদের এই ভাইরাসকে নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই?
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরাই বলছেন, ওমিক্রন শরীরে ন্যাচারাল ইমিউনিটি তৈরি করবে এবং এই অতিমারীকে শেষ করবে। তবুও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যতটা সম্ভব নিজেকে নিয়মে আবদ্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয় নিয়ে একাধিক মত পার্থক্য রয়েছে। এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই ভাইরাসকে আরও কিছু দিন পরীক্ষা করতে হবে এবং এই ভাইরাসে আক্রান্তদের উপর সমীক্ষা করতে হবে। তবে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে মুখে মাস্ক ও শারীরিক দূরত্বের কথা মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনোয় লাগাম আনতে হবে এবং খাওয়ার সময় বা চোখে-মুখে হাত লাগানোর পূর্বে হাতে স্যানিটাইজার লাগাতে হবে।