শুরু হল 'জুতো' দিয়ে। সৌরীশ দের প্রথম ছবি। ২৫ নভেম্বর নজরুল তীর্থে মুক্তি পাবে এই ছবি। এর আগেও চারটি নীরব ছবি বানিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেগুলি স্বল্পদৈর্ঘের ছবি। কিন্তু এই প্রথম পূর্ণদৈর্ঘের ছবি বানালেন সৌরীশ।
কিন্তু এই ছবি বানানোর নেপথ্যে রয়েছে একটি কাহিনি। ২০১৬ সালে সলমন খানের একটি ছবি ঘিরে প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। একটি প্রেক্ষাগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে সৌরীশ খেয়াল করেন, সলমনের সেই ছবিটি নিয়ে বিস্তর আলোচনায় মগ্ন দর্শকরা। আর তারই পাশে ভিড় থেকে দূরে দাঁড়িয়ে দু'জন মূক ও বধির মানুষ নিজেদের মধ্যে ইশারায় কথা বলছেন। ছবিটি নিয়ে তাঁদের ভ্রূক্ষেপ নেই। তাঁরা পোস্টারের দিকে ঘুরেও তাকান না। সৌরীশ বুঝতে পারেন, যেই ছবি আসলে সংলাপনির্ভর, সেই ছবিগুলি নিয়ে এই মানুষগুলির কোনও উত্তেজনা নেই, কারণ তাঁরা সেটি উপভোগ করতে পারেন না। তাই সেই সব মানুষের জন্য নীরব ছবি বানানোর পথ চলা শুরু।
advertisement
আরও পড়ুন: ভারতের এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি
কিন্তু প্রযোজক মেলে না। তিন বছর ধরে অল্প টাকা জমিয়ে জমিয়ে ছবিটা তৈরি হয়। এর পর আসল সমস্যা শুরু। প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া নিয়ে ছোটাছুটি। ছবি রিলিজ করাতে পারেন না পরিচালক। যেহেতু এই ছবির মূল অভিনেতা একটি জুতো, তথাকথিত তারকা নেই, ফলে ছবি বিক্রি করার উপকরণের অভাব রয়েছে বলে শুনতে হয় তাঁকে। সৌরীশের কথায়, ''অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নজরুল তীর্থ রিলিজ করানোর সুযোগ পেয়েছি। নজরুল তীর্থে এই ছবিটি বিনামূল্যে দেখতে পারবেন মূক ও বধির মানুষেরা। যে কোনও সময়ে। কিন্তু একইসঙ্গে চিন্তার বিষয়, নিউটাউনের মতো জায়গায় খুব বেশি দর্শক পাওয়া যাবে না। তাই এমন একটি সুযোগ দরকার ছিল, যেখানে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে নিজের সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় করাতে পারব। সেই সুযোগও এল আমার কাছে।''
আরও পড়ুন: ‘‘প্রভু আমার" রবীন্দ্রগানে এক আন্তর্জাতিক মেলবন্ধন, মিলে গেল নিউইয়র্ক থেকে কলকাতা
তার পরেই সৌরীশের সঙ্গে তথাগতর পরিচয়। তাঁর 'ওহানা ফিল্ম ক্লাব' ক্যাফেতে এই ছবি দেখানোর সুযোগ মেলে সৌরীশের। যদিও এই ক্যাফেতে শনিবার এবং রবিবার করে ছবির স্ক্রিনিং হয়, কিন্তু সৌরীশের অনুরোধে ২৫ তারিখ থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি করে শো-টাইম রাখা হয়েছে। এছাড়াও ধর্মতলার একটি প্রেক্ষাগৃহে এই ছবি দেখানোর চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি এই ছবির সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় শহরে। সেখানে পরিচালক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তথাগত এবং দেবলীনা দত্ত। তথাগতর কথায়, ''আমাদের দেশে সিনেমাকে চিরকালই বিভাজনের রাজনীতিতে দেখা হয়। কখনও কঠিন বিষয়বস্তু হলে মানুষ ছবি দেখেন না, কখনও তারকা নেই বলে দেখেন না, কখনও আবার প্রযোজকের কারণে হল অবধি সিনেমা পৌঁছয় না। যেমন কলকাতার সরকারি হলগুলোতে জায়গা পেল না সত্রাবিত পালের 'নিতান্তই সহজ সরল'। তাহলে এই ধরনের ভাল ছবির ভবিষ্যৎ কী? এই লড়াইটা যাঁরা লড়ছে, তাঁদের জন্যই ক্যাফেতে সিনেমা দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী দিনে আরও চারটি ছবি আমাদের হাতে আছে, যেগুলো হলে ঠাঁই পায়নি। দেখানো হবে আমাদের ক্যাফেতে। সিনেমা যেন আটকে না থাকে। আর 'জুতো' সিনেমাটি সেই উদ্যোগের প্রথম নাম।''