পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বাসিন্দা ছিল থৈবি মুখোপাধ্যায়। আসানসোলের উমারানি গড়াই বিদ্যালয়ের টপার ছিল থৈবি মুখোপাধ্যায়। সব পরীক্ষাতেই টপ করত সে। সেরকমই এবার মাধ্যমিকেও বিদ্যালয়ের মধ্যে টপ করেছে থৈবি। কিন্তু নিজের এত ভাল ফলাফল দেখার জন্য সে আর জীবিত নেই। লিভার জন্ডিসে গত হয়েছে গত ইংরেজি মাসের ১৬ এপ্রিল।
advertisement
মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ছিল সে। তবে জন্ডিস হলেও মনের মধ্যে ছিল অদম্য জেদ। অসহ্য পেটে যন্ত্রনা নিয়েই সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েও এত ভাল ফল করেছে সে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ আর বেঁচে নেই আসানসোলের থৈবি মুখোপাধ্যায়। উমারানি গড়াই বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ পাপড়ি গড়াই বলেন, “খুবই ভাল ছাত্রী ছিল, আমাদের স্কুলে টপ করত। ও বিদ্যালয়ে না এলে আমরাও মিস করতাম। খুবই ভাল মেয়ে ছিল। ও সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিলে আরও ভাল ফলাফল করত। ওর মতো মেয়ে বলেই শরীর খারাপ নিয়েও পরীক্ষা দিয়েছিল। ওর মধ্যে জেদ ছিল ভাল ফলাফল করার।”
আরও পড়ুন: পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে অনেকেই জড়িত, NIA-এর হাতে ২০ জনের নাম! এবার শুরু হবে জিজ্ঞাসাবাদ
মাধ্যমিকে থৈবির প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯৯, ইংরাজিতে ৯২, গণিতে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৫ এবং ভূগোলে ৯৫। সকলের দাবি, থৈবি সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিলে আরও ভাল ফলাফল করত। পড়াশোনার বাইরে আঁকা, গান, এক্সট্রা ক্যারিকুলাম সবেতেই সে ছিল টপ। জানা গিয়েছে, থৈবির বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় পেশায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার এবং মা পিউ মুখোপাধ্যায় গৃহবধূ। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর মেয়ের ফলাফল জেনে সকলেই খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
থৈবির দাদু এবং ঠাকুমাও নাতনির এই সাফল্যে আনন্দিত হয়েছেন তবে নাতনি বেঁচে না থাকার কষ্ট যেন তাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। থৈবির দাদু এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল, স্কলারশিপ পেত। কিন্তু ও না থাকায় আজ আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। থৈবি বেঁচে থাকলে আরও বেশি আনন্দ পেতাম।” মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই তার লিভার জন্ডিস ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য হায়দ্রাবাদ, ভেলোর সর্বত্র ছুটে যায় বাবা-মা। লিভার ট্রান্সফার করার জন্য প্রয়োজন ছিল ১ কোটি টাকা, এগিয়ে এসেছিল স্কুল, শহরবাসী। চিকিৎসার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদনে সাড়াও দিয়েছিল শহরবাসী। শেষ পর্যন্ত ৪৫ লাখ টাকা চিকিৎসার খরচ যোগানো হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি থৈবিকে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ফলাফলও দেখতে পেল না আসানসোলের থৈবি মুখোপাধ্যায়।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী