কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের অযোধ্যাপুর গ্রামের লালমোহন মণ্ডলের কন্যা ঈশিতা মণ্ডল এবারের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী। জন্ম থেকেই মূক ও বধির। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতাও খুব সঙ্গীন। প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন যাপন করতে হয় তাকে। বাবা লালমোহন মণ্ডল পেশায় কাঁথি পৌরসভার অস্থায়ী কর্মী। স্ত্রী ও দুই কন্যা নিয়ে অভাব অনটনের সংসার লালমোহন বাবুর। মেয়ের জন্মের পর লালমোহন বাবু যখন জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে শ্রবণ শক্তি ও বাক শক্তি নেই, তখন থেকেই লালমোহন বাবুর জীবনে শুরু হয় এক নতুন সংগ্রাম। মেয়েকে বাক শক্তি ও শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দিতে ছুটে বেড়িয়েছেন ভিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাছে। কিন্তু তাঁর সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, মেয়ে চিরতরে বাক শক্তি হারিয়ে বধির হয়ে গেছে।
advertisement
আরও পড়ুন- মাধ্যমিক শুরুর দিনে অ্যাডমিট কার্ড 'আটকে' পরিবার, পুলিশে গেল ছাত্রী!
চিকিৎসকদের কথা শুনে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন কাঁথি পুরসভা অস্থায়ী কর্মী লালমোহন মণ্ডল। নিজের মনকে শক্ত করে মেয়েকে পড়াশোনায় উৎসাহ জোগাতে থাকেন। জন্মগত ভাবে মূক ও বধির শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা। এই কারণে এদের শিক্ষাদান পদ্ধতিও আলাদা। প্রাথমিক শিক্ষা মূক ও বধির স্কুলে নিলেও পরে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে কাঁথির চন্দ্রামনি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন শুরু করে ঈশিতা মণ্ডল। স্কুলের শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে ঈশিতা আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী (Madhyamik 2022)। সাধারণ ছাত্রীর মতো আজও সে পরীক্ষা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন- হাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা! অ্যাডমিট কার্ড না পেয়ে ৩ ছাত্রীর বসা হবে না মাধ্যমিক পরীক্ষায়
মূক ও বধির ছাত্রী ঈশিতার বাবা লালমোহন মণ্ডল বলেন "জন্ম থেকেই ও মূক ও বধির। ও যখন দোলনায় ঘুমাতো তখন থেকেই জানতাম মূক ও বধির ও। শুধু এ রাজ্যে নয় ভিন রাজ্যের চিকিৎসা করাই। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি। চিকিৎসক জানিয়ে দেন শুধুমাত্র রাস্তা পারাপার করতে পারবে, আর বেশি কিছু করতে পারবে না। প্রথমে কাঁথির একটি মূক ও বধির স্কুলে পড়াশোনা করতো। পঞ্চম শ্রেণি থেকে সাধারণ ছাত্রীদের স্কুলে পড়াশোনা করছে। পড়াশোনায় খুব ভালো। আগামী দিনে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবো। সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যাতে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাই।"
মূক ও বধির ছাত্রী ঈশিতা মণ্ডলের মা ছন্দা মণ্ডল বলেন "সাধরণ ছাত্রীদের মতো মাধমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। পড়াশোনা করতে কষ্ট হয় ওর। শুনতে পায় না তাই।" মেয়েটি ইঙ্গিত আকারে জানায়, "সবাই কথা বলতে পারে, আমি বলতে পারি না, তবু আমি পরীক্ষা (Madhyamik 2022) দিতে যাবো।"
সুজিত ভৌমিক