জীবনের একের পর এক কঠিন বাধা পেরনোর পরে সমাজের নিয়মকানুনের বেড়াজালে পড়ে এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শান্তিপুর বিহারিয়া মাঠপাড়া ঘোড়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা অয়ন প্রামাণিক।
অয়নের বাবা অসিত প্রামাণিক কাপড়ের একটি ব্যবসা করেন বাড়িতেই। মা সুপ্রিয়া প্রামাণিক আশাকর্মী। রয়েছে একটি ছোট বোন যে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই অন্যের বাবা টের পান তাঁর ছেলের বেশ কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন, এরপর বেশ কিছু স্বনামধন্য ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জানতে পারেন তাঁর ছেলের মানসিকভাবে বেশ কিছুটা বিশেষভাবে সক্ষম।
advertisement
এরপর শুরু হয় অয়নের জীবনের যুদ্ধ। মাধ্যমিকে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর পেয়ে এরপর সে ভর্তি হয় শান্তিপুর কলেজে পলিটিক্যাল সাইন্সে অনার্স নিয়ে সেখানেও ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এরপর ভর্তির একটি বিএড কলেজে সেখান থেকে ৭৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে সে। তবে এখন সে পড়েছে মহাবিপদে, পড়াশোনা করার পরে সম্প্রতি রেলের গ্রুপ-ডি পরীক্ষায় বসতে গেলে মানসিকভাবে ৭৫% প্রতিবন্ধী বলে তাঁকে বসতে দেওয়া হয় না।
অয়নের ইচ্ছা শিক্ষকতা করার, তাই এসএসসির অনুশীলনে ব্যস্ত কিন্তু সেখানেও বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে রয়ে যাচ্ছে দুশ্চিন্তার ছাপ, মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তাকে আদৌ কি পড়ানোর সুযোগ করে দেবে সরকার? তবে প্রবল এই ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে বিনামূল্যে ইতিমধ্যেই অনলাইনে সে গড়ে তুলেছে অয়নের পাঠশালা যেখানে প্রায় ৭৭ জন ছাত্রছাত্রী শিক্ষক অয়নের ক্লাসে খুশি।
আরও পড়ুন: NIRF র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের সেরার সেরা মেডিক্যাল কলেজ কোনগুলো? তালিকায় বাংলার কোন কলেজ? রইল পুরো তালিকা
এর পরেই অয়ন এবং তাঁর পরিবার জানতে পারে যে কোনও পরীক্ষায় বসতে গেলে মানসিক প্রতিবন্ধকতার শতাংশ হতে হবে পঞ্চাশের কাছাকাছি। তার অধিক হয়ে গেলেই নিয়মমাফিক কোনও সরকারি চাকরির পরীক্ষায় তাঁকে বসতে দেওয়া হয় না। এরপরেই অয়নের বাবা এবং অয়ন ছোট একের পর এক চিকিৎসকের কাছে। তাঁদের দাবি, সে যদি মানসিকভাবে ৭৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী হয় তাহলে কীভাবে স্কুল এবং কলেজের পরীক্ষাতে এত নম্বর পেয়ে পাশ করতে পারে! তবে কিছুতেই কোনও চিকিৎসকেরাই রাজি হন না তাঁর প্রতিবন্ধকতার শতাংশ কমানোর জন্য, প্রত্যেক জায়গা থেকেই তাঁকে ফিরে আসতে হয় হতাশা নিয়ে।
তবে মানসিক সমস্যাযুক্ত বিশেষভাবে সক্ষমদের পড়াশোনা এবং চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত থাকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কের কাজ হাজাররকম, সবটাই স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট করে এমন নয়, তাই মানসিক সমস্যা মানেই স্মৃতিশক্তি কম হবে এমন কোনও মানে নেই। তবে বর্তমানে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে মানসিক হোক কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনও বাধা নয়।
Mainak Debnath