আরও পড়ুন: পাতে পড়ে নিত্যই; জিরের ব্যবসায় বাঁধা মোটা অঙ্কের মুনাফা! জানুন বিস্তারিত!
আর শেয়ার বাজারে পতনের প্রভাব পড়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের উপরেও। ইতিমধ্যেই ফান্ডের মূল্য প্রায় ১০% হ্রাস পেয়েছে। শুধু তাই নয় স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ আরও প্রভাবিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক এবং আর্থিক নিয়ম মেনে যদি ফান্ড ‘নেভিগেট’ করা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের অনেক উপকার হতে পারে।
advertisement
এই পরিস্থিতিতে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
বাজারের অস্থিরতা
স্টক মার্কেটে অস্থিরতা দেখা দেওয়া কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে, কখনও কখনও ঝুঁকি মাঝারি ধরনের হয়, আবার কখনও কখনও অস্থিরতার মাত্রা অনেকটাই বেশি হতে পারে। যখন এই অস্থিরতার ফলে স্টক তার সাম্প্রতিক উচ্চতা থেকে ১০ শতাংশ নীচে পড়ে, তখন তাকে Correction বলা হয়। সাধারণত ২-৫ শতাংশ Correction-কে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেলা হয়। যে কোনও বিনিয়োগ কৌশলের এটিও একটি অংশ। কিন্তু যখন এটি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তখনই সমস্যার শুরু। এই সময় বিনিয়োগকারীকে মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে হবে কী কৌশল তিনি গ্রহণ করবেন। সাধারণ Deep Correction-এর পর সাধারণ পূর্ণ উদ্যমে বাজার উচ্চতায় ফেরে (Bounce Back)। ৯০ দশকে ডট কম বাস্ট (Dot com bust) দেখেছিল বিশ্ব। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত চলেছিল এই চাঙ্গা ভাব। সে সময় ইন্টারনেট ক্ষেত্রে শুরু হয়েছিল প্রবল আলোড়ন, তারই ফলে বেড়েছিল বিনিয়োগ। ২০০৯ সালে লেম্যান সঙ্কটের (Lehman Crisis)-এর পরে আরও একবার উল্লেখযোগ্য ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। তারপর মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার (Mid and Small Cap) একটি অংশের পতনের পর ২০১৭-১৮ সালে বাজার ফের ঘুরে দাঁড়ায়। সম্প্রতি আবার পতনের মুখোমুখী বিশ্ববাজার, সৌজন্যে কোভিড-১৯ অতিমারী। গত দু’দশকে একের পর এক ঝড় সামলেছে স্টক মার্কেট। যাঁরা ভীত না হয়ে ঝুঁকি নিয়েছেন তাঁরা লাভের মুখ দেখেছেন। কম মূল্যে শেয়ার কেনার পর প্রচুর লাভ করেছেন বহু মানুষ।
ইক্যুইটিতে (Equity) বিনিয়োগ করা কি উচিত?
স্টক-এ সব সময়ই ঝুঁকি থাকে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকটি বিবেচনা করলে দেখা যায় আদতে তা লাভজনক। সাধারণত, ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করা অর্থে প্রথম ৩ থেকে ৫ বছর একেবারেই হাত দেওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া বিনিয়োগকারীর বয়স এবং তিনি কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত তার উপর নির্ভর করে ইক্যুইটি। বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তাই হঠাৎ বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়ে কোনও লাভ হয় না। বরং কৌশলগত ভাবে ইক্যুইটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। একজন বিনিয়োগকারী ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত মোট পোর্টফোলিওর ন্যূনতম ৭০ শতাংশ ইক্যুইটি রাখতে পারেন। ৪০-৫০ বছরের মধ্যে যাঁরা তাঁরা তাদের ঝুঁকির কথা ভেবে ৩০-৬০ শতাংশ ইক্যুইটির জন্য বরাদ্দ রাখতে পারেন। ৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা অবসর গ্রহণের সময় কম ইক্যুইটির কথা ভাবতে পারেন।
আরও পড়ুন: আরও বাড়তে পারে সোনার চাহিদা, দামে কেমন প্রভাব পড়বে? জেনে নিন!
SIP বন্ধ করা উচিত নয়
নিয়মিত বিনিয়োগের কোনও বিকল্পই বন্ধ করা উচিত। কম দামে সঞ্চিত ইউনিটগুলি দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ তৈরি করতে সহায়তা করে। SIP দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য পূরণের খুবই ভাল বলে মনে করা হয়। বিনিয়োগ একটি অভ্যাস, তা নিয়মিত করা উচিত। এই অভ্যাস একবার বন্ধ হয়ে গেলে তা ফিরে পাওয়া মুশকিল।
কখন রিডিম (Redeem) করবেন?
হঠাৎ করে অনেক টাকার একান্তই প্রয়োজন না হলে বা আর্থিক লক্ষ্য পৌঁছানোর আগে বিনিয়োগ রিডিম করা বা তুলে ফেলা একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বাজারের পতন কিন্তু কখনই বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার একমাত্র কারণ হতে পারে না। এমনকী বাজারের অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও ক্রমাগত বিনিয়োগ করা উচিত। যদি এক বছরের মধ্যে বিনিয়োগ ম্যাচিওর করে বা খুব টাকার প্রয়োজন হয় তবেই বিনিয়োগ তুলে নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ক্রয় করুন
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি আসলে সুযোগ করে দিচ্ছে আরও শেয়ার কেনার। হাতে যদি পর্যাপ্ত নগদ থাকে, তা হলে অতিরিক্ত শেয়ার কেনা যেতে পারে। তাতে ভবিষ্যতে সুফল মিলতে পারে।
Systematic Transfer Plan ব্যবহার করুন
STP (Systematic Transfer Plan) বিনিয়োগের একটি কার্যকর উপায়। ইক্যুইটি-তে বিনিয়োগ করতে এই টুলটি ব্যবহার করতে পারেন। ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করলে তা আটকে থাকতে পারে। STP-এর মাধ্যমে ভাল ভাবে পরিস্থিতি পরিচালনা করা সম্ভব হবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি তহবিলে লিকুইড ফান্ডে টাকা জমা করে ধীরে ধীরে কম ঝুঁকিপূর্ণ থেকে ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
বিনিয়োগ পদ্ধতি
ইক্যুইটি এবং ডেট এক্সপোজারের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারেন। বিষয়টি মিশ্র তহবিল এবং গতিশীল সম্পদ তহবিল দেখার মতো। এই কৌশলটি ঝুঁকি সীমিত করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঝুঁকির-সামঞ্জস্যপূর্ণ রিটার্ন পাওয়া যেতে।
আরও পড়ুন: ১ মাসে পাওয়া যেতে পারে ভালো রিটার্ন, দেখে নিন এক ঝলকে!
মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ
বিনিয়োগকারীদের অনেকের কাছেই যথেষ্ট পরিমাণে নগদ টাকা থাকতে পারে। তবে হাতে অনেক টাকা থাকলেও একবারে অনেক বেশি টাকা বিনিয়োগ করা উচিত নয়। একবারে এক জায়গায় অনেক টাকা বিনিয়োগ না করে ছোট ছোট খাতে বিনিয়োগ করা উচিত।
বাজারের অস্থিরতাকে ব্যবহার করুন
বাজারের অস্থিরতা সম্পদ তৈরির একটি বড় সুযোগ। অস্থির সময়ে বিনিয়োগ সম্পদ সৃষ্টির একটি সম্ভাবনা তৈরি করে। অস্থিরতা থেকে দূরে না সরে গিয়ে কার্যকর সম্পদ উৎপাদনের জন্য কৌশলগত ভাবে এটি ব্যবহার করা উচিত।