উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার মিনাখা, বাদুড়িয়া, বসিরহাট ও স্বরূপনগর এলাকায় এখন পতিত জলাভূমিতে পানিফল চাষে ব্যস্ত কৃষকরা। আগে যেখানে বছরের পর বছর জমি অনাবাদী পড়ে থাকত, সেই জমিতেই আজ পানিফল চাষ তাদের জীবনে নিয়ে এসেছে নতুন আশার আলো। মাত্র ৮-১০ হাজার টাকা খরচে এক বিঘা জমিতে এই ফলের চাষ করে কয়েক মাসের মধ্যেই মিলছে ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ। জলজ পরিবেশে সহজেই বেড়ে ওঠায় চাষের ঝুঁকিও তুলনামূলক কম। বাজারে পানিফলের চাহিদা বাড়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন এ চাষে। স্বল্প খরচে ভাল লাভ হওয়ায় এটি এখন লাভজনক মৌসুমি ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে।
advertisement
আরও পড়ুন: দাবার বোর্ডে বুদ্ধির লড়াই! যুদ্ধক্ষেত্রে লড়ছেন দৃষ্টিহীন দাবাড়ুরা, দুর্দান্ত আয়োজন কোথায়
পানিফলের ইংরেজি নাম Water Chestnut। এটি একটি পরিচিত জলজ উদ্ভিদ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর শিকড় থাকে জলের নিচে, আর পাতা ভেসে থাকে উপরে। ফলের গায়ে শিংয়ের মতো কাঁটা থাকায় একে অনেকে শিংড়া বলে থাকেন। অনেকেই আবার জলের বাদাম নামেও চেনেন, যদিও এতে প্রকৃত বাদামের কোনও উপাদান নেই। এই ফল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়, আবার সিদ্ধ, রান্না বা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করেও খাওয়া সম্ভব।
চীনে পানিফলের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বহুকাল ধরেই প্রচলিত। তারা এই ফল শুকিয়ে আটা তৈরি করেন এবং সেই আটা দিয়ে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য যেমন পিঠে, কেক, বিস্কুট তৈরি করেন। চীনের বাজারে পানিফল নির্ভর খাদ্যদ্রব্যের চাহিদাও যথেষ্ট বেশি। পানিফল শুধু সুস্বাদুই নয়, স্বাস্থ্যগুণেও ভরপুর। এতে রয়েছে ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি১২ ও ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পানিফল খেলে হজমশক্তি ভাল থাকে, ক্লান্তি কমে এবং ত্বকের জেল্লা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: ৩ দিনে ডবল, অ্যাজোলা চাষ বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে গ্রামীণ মানুষদের
প্রাচীন ইতিহাস বলছে, প্রায় তিন হাজার বছর আগে থেকেই চীনে পানিফল চাষ শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফিলিপাইন ও আফ্রিকার বহু দেশে এর চাষ হয়। আজ বাংলার প্রান্তিক চাষিদের কাছে পানিফল শুধু এক মৌসুমি ফল নয়, এটি তাদের জীবিকা ও স্বনির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠছে। পতিত জমিতে এই ফলের চাষ যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতির চাকা সচল করছে। শীতের আগমনী দিনে তাই গ্রামবাংলার জলাভূমি জুড়ে এখন ভাসছে সম্ভাবনার ফল—পানিফল।





