এই উদ্যোগের মাধ্যমে একদিকে যেমন কমবে নদী দূষণ, তেমনই উৎসবের মরশুমে আয়ের মুখ দেখবেন চা বাগানের বহু মহিলা। গত বছর দীপাবলিতে ডিজাইনার মাটির প্রদীপ ও মোমবাতি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছিলেন তাঁরা। এবার আরও বড় উদ্যোগ — ধূপকাঠি তৈরি।
আরও পড়ুন: ঘাটালে জলযন্ত্রণার মাঝেই কর্তব্যে অবিচল আশাকর্মীরা! খামতি নেই পরিষেবা প্রদানে, তবুও আক্ষেপ এক জায়গায়
advertisement
মূলত এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে শিলিগুড়ির মোবাইল লাইব্রেরি সংস্থা। যারা বিগত বহু বছর ধরে চা বাগানে কাজ করে আসছেন। তাদের আয়োজিত দুর্গাপুজোর ফুল তুলে দেওয়া হয়েছে চা বাগানের মহিলাদের হাতে। পাশাপাশি, চা বাগান এলাকার বেশ কিছু পুজো কমিটিও বিসর্জনের পর ফুল তুলে দিয়েছে মহিলাদের হাতে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
মোবাইল লাইব্রেরির সদস্য পৌলমী চাকি নন্দী জানিয়েছেন, “চা বাগানের কর্মীদের অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। বিকল্প আয়ের উৎস না হলে সংসার চালানো কঠিন। তাই আমরা মহিলাদের সাবান, মোমবাতি, আচার-সহ নানা হস্তশিল্প শেখাচ্ছি। এবার নতুনভাবে ভেবেছি— ফেলে দেওয়া ফুলও কাজে লাগানো যায়।” তিনি আরও জানান, শুকনো ফুলের সঙ্গে গোবর সার মিশিয়ে প্রাকৃতিক ধূপকাঠি তৈরি করা হবে। ক্লাবগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে দুর্গাপুজোর শেষে সেই ফুল সংগ্রহ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ফুল শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে এবং বাকি কাজগুলোও আগামীতে খুব শীঘ্রই শুরু করা হবে। বর্তমানে মোবাইল লাইব্রেরির স্থানীয় অফিস ঘরে দু’জন মহিলা প্রাথমিকভাবে ধূপকাঠি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধীরে ধীরে আরও অনেক মহিলাকে যুক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। আগামী বছরে শহরের আরও বেশি পুজো মণ্ডপ থেকে ফুল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নদী দূষণ রোধে প্রশাসনের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ এখনও পুরোপুরি সচেতন নয়। এমন পরিস্থিতিতে চা বাগানের মহিলাদের এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, সামাজিক দৃষ্টিতেও তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। পৌলমী চাকি নন্দীর কথায়, “যদি এ বছর প্রকল্পটা সফল হয়, তাহলে আগামী বছর বড় পরিসরে ফুল সংগ্রহ করে ধূপ তৈরি করা হবে। পাশাপাশি এই ধূপকাঠি বাজারে বিক্রির ব্যবস্থাও করা হবে, যাতে মহিলারা আর্থিকভাবে আরও স্বনির্ভর হতে পারেন।” এই উদ্যোগ কেবলমাত্র পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিচ্ছে না, বরং সমাজের এক অবহেলিত শ্রেণিকে স্বনির্ভরতার পথে হাঁটাচ্ছে। ফেলে দেওয়া ফুলের পুনঃব্যবহার যেমন প্রকৃতিকে রক্ষা করছে, তেমনই তা জীবিকা ও আত্মসম্মানের নতুন আলো জ্বালাচ্ছে চা বাগানের মহিলাদের জীবনে।