বর্তমানে বহু মানুষ ফ্ল্যাটে থাকেন। বেশিরভাগ মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাটের আকার বেশ ছোট হয়। কিন্তু তারই মধ্যে সুন্দর পরিকল্পনা করে বাগান তৈরির শখ মেটান তাঁরা। আবার এই বাগান সাজানোর ধরন আছে অনেক রকম। ঘরের একফালি জায়গার বাগানের মধ্যেই অনেকে পাখির খাঁচা, মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম ইত্যাদি রাখেন। তবে এই বাগান তৈরির কোনও নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। কারণ আঁকা, নাচ, গানের মতই বাগান তৈরিও এক ধরনের শিল্পকর্ম। এখানেও নান্দনিকতার বিষয় আছে। আর প্রত্যেকেই নিজের রুচি, শখ, ভাবনা অনুযায়ী বাড়ি বা ফ্লাটের একফালি জায়গায় বাগান সাজিয়ে তোলেন।
advertisement
আরও পড়ুন: ১৫ দিন নয়, যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় তার আগেই রিপোর্ট দিতে বদ্ধপরিকর তদন্ত কমিটি
বীরভূমের সদর শহর সিউড়িতে এমনই এক অনন্য সুন্দর বাড়ি বাগান আমাদের নজরে এসেছে। এই বাড়িটির নাম রূপকথা। বাড়ির প্রধান সদস্য দীনবন্ধু বিশ্বাস পেশায় শিক্ষক। তবে নেশায় যে তিনি কত কিছু, তার ইয়ত্তা নেই। যে হাতে তিনি গৃহস্থকে সাপের ভয় থেকে মুক্তি দেন, সেই হাতেই বিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন বাগদেবীর মূর্তি। আবার সেই হাতেই নিজের ‘রূপকথা’ বাড়ির এক টুকরো কোণকে তিনি গড়ে তুলেছেন সুখী গৃহকোণ হিসাবে। আর পাঁচটা ঘরোয়া বাগানের থেকে এই বাগানে ফুল ফলের বিভিন্নতা খুব যে আলাদা কিছু, এমনটা নয়। হয়তো বা কিছু ক্ষেত্রে বাকিরা একে অনায়াসেই টেক্কা দেবে। কিন্তু এর বিশেষত্ব লুকিয়ে রয়েছে নির্মাণে। সিমেন্টের তৈরি প্রত্যেকটি টবের গায়ে সুন্দর করে কাটা টাইলসের টুকরো আটকে টবের মধ্যে যে নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন, তার মধ্যে যত্নের ছাপ স্পষ্ট। বাগানের ঠিক মধ্যিখানে একটি পুরনো আমলের লোহার চাপাকল, আর তার নীচে ভাঙা টাইলস লাগানো সিমেন্টেরই কলসিদের গড়াগড়ি খাওয়া আপনাকে কখন যে ৩০-৪০ বছর পিছিয়ে নিয়ে চলে যাবে, আপনি বুঝতেও পারবেন না। ওই অতি সুন্দর কলসি কোনও সর্বাঙ্গসুন্দর রমণীর কোমড়ে শোভা পাবে, একথা ভাবতে ভাবতেই আপনার চোখে পড়বে বুদ্ধমূর্তি। খয়েরি রঙের ধ্যানস্থ সেই বুদ্ধমূর্তি দুপুরের তপ্ত রোদেও আপনাকে এমন এক গভীর প্রশান্তি দেবে যে ৩০-৪০ বছর পিছিয়ে কলসি কাঁখে কল্পিত নারী কখন যে ওই একই কলসি কাঁখে নগরনটী বাসবদত্তায় পরিনত হবে, তা বুঝতে পারা অসম্ভব।
এখানে গাছের বেদীর সামনে সুসজ্জিত সমুদ্র শঙ্খের সারি দেখে আপনি একবার বাসবদত্তা থেকে ফিরতে ফিরতে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগর ঘুরে বনলতা সেনের সঙ্গে দেখা করবেনই। আর যখন এই ঘোর কাটিয়ে বাস্তবের জ্ঞান নিয়ে নেমে আসবেন বাস্তবের মাটিতে তখন অবাক হয়ে জানতে পারবেন শুধুমাত্র বুদ্ধমূর্তিটুকু কেনা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার চাঁদপাড়া থেকে। বাকি সমস্ত কীর্তি ওই শিক্ষকের নিজের হাতেই গড়া! এই বাড়ি বাগানে শখের সঙ্গে মিশেছে নান্দনিকতা। আর তা থেকে জন্ম নিয়েছে এক শিল্প। সেই শিল্পের কদর করতে আপনি বাধ্য।
শুভদীপ পাল