ঘটনাটি ঘটেছে বিষ্ণুপুর পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আকুঞ্জিপাড়া এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারের কর্তা জগন্নাথ পাল একসময় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। একই বাড়িতে থাকেন তাঁর মৃত দাদার স্ত্রী সবিতা পাল এবং জামাই সঞ্জয় কুণ্ডু, যিনি কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত।
advertisement
উল্টোপাল্টা খেয়ে হজমশক্তির ‘বারোটা’ বেজে গিয়েছে? ৭ প্রাকৃতিক উপায়ে দ্রুত ঠিক করুন!
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে সবিতা দেবী রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পুরনো গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি নতুন সিলিন্ডার লাগাতে যান। কিন্তু সিলিন্ডারটি সঠিকভাবে সংযোগ না হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস বাইরে বেরিয়ে আসে। সেই সময় তাঁকে সাহায্য করতে রান্নাঘরে যান তাঁর দেবর জগন্নাথ পাল ও জামাই সঞ্জয় কুণ্ডু। তাঁরা কোনওভাবে সিলিন্ডার ও ওভেনের সংযোগ স্থাপন করলেও বুঝতে পারেননি যে ততক্ষণে গোটা ঘর গ্যাসে ভরে গিয়েছে।
গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কেউ বুঝে ওঠার আগেই ওভেনে আগুন ধরাতে লাইটার ব্যবহার করা হয়, আর সেই মুহূর্তেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে গোটা রান্নাঘর। আগুনের লেলিহান শিখায় মুহূর্তে জ্বলে যায় ঘরের দরজা-জানালা, ফ্রিজ, আসবাব, এমনকি রান্নার সমস্ত সরঞ্জাম। আগুনে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন রান্নাঘরে থাকা তিনজন—সবিতা পাল, জগন্নাথ পাল ও সঞ্জয় কুণ্ডু।
তাঁদের আর্তচিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। খবর দেওয়া হয় বিষ্ণুপুর দমকল বিভাগে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে গুরুতর অবস্থায় দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে দ্রুত বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ, অন্যজনের ৭০ শতাংশ এবং তৃতীয় ব্যক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তিনজনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
রাতেই আহতদের দেখতে হাসপাতালে পৌঁছান বিষ্ণুপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, স্থানীয় বিধায়ক এবং কাউন্সিলর। তাঁরা আহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। চেয়ারম্যান বলেন, “এই দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা সম্ভব, সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অগ্নিকাণ্ডে ঘরের একটি বড় অংশ সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে পরে পুলিশও গিয়ে পরিদর্শন করে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, সিলিন্ডার লিক হয়ে গ্যাস জমে যাওয়াই এই ভয়াবহ আগুন লাগার কারণ।
পুরো এলাকা জুড়ে এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সবাই ছুটে আসি। দেখি গোটা রান্নাঘর আগুনে জ্বলছে। তিনজন ভেতরে আটকে ছিলেন। আমরা কোনওভাবে দরজা ভেঙে তাঁদের বাইরে বের করি।”
বর্তমানে তিনজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা তাঁদের জন্য অত্যন্ত সংকটজনক। প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধি তাঁদের পাশে রয়েছেন।
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে ভয়াবহ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনায় গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন কলকাতা পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর, তাঁর শ্বশুর এবং বৃদ্ধা শাশুড়ি। তিনজনকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
