এ এক আশ্চর্য পরিবার। যেখানে ছোট ছোট তিনি ভাইবোনের পিছনে পড়তে বসা নিয়ে বকা-ঝকা করেন না মা। বরং, ৩৬৫ দিনই তাদের ছুটির দিন, বেড়ানোর দিন। আসলে অস্ট্রেলিয়ার ৪০ বছর বয়সী মাইক পোপ এবং তাঁর স্ত্রী ব্রুক গত তিন বছর ধরে বিশ্ব ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন। ওই দম্পতি এখনও পর্যন্ত মোট ১৫টি দেশে ভ্রমণ করেছেন। আরও অনেক দেশ রয়েছে তাঁদের তালিকায়, যেখানে যেতে চান মাইক পোপ, সপরিবার। আর এখানেই সবচেয়ে বড় মজা। মাইক-ব্রুকের তিন সন্তানও এই বিশ্বভ্রমণের অংশীদার। স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার বদলে বাবা-মায়ের সঙ্গে গোটা বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছে খুদের দল। তা হলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই তিন খুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, সারা দিন বেড়ালে ওরা কখনও পড়াশোনা করে?
মাইক এবং ব্রুকের তিন সন্তানের সব চেয়ে ছোটটির বয়স ঠিক তিন বছর, তার আগেরটি ৬ বছর এবং সবথেকে বড় ছেলেটির বয়স ৮ বছর। ডেইজি, মাইলা ও ম্যাক্স—নামের তিন ছেলেমেয়েকে নিয়েই দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ান পোপ দম্পতি। তবে কি একেবারেই লেখাপড়া করে না তারা! মোটেও না। সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষার বয়স হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে দম্পতি তৈরি করে ফেলেছেন একটি সময়সূচী। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন মাইক পোপ। এখনও তা চলছে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে থাকার সময় মাইক পোপ নিজে একজন ফায়ার ফাইটার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী কাজ করতেন ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে। দু’জনেই তাদের পূর্ণ সময়ের চাকরি ছেড়েছেন ভ্রমণের টানে। এখন তারা অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন বলে জানিয়েছেন।
এ পর্যন্ত এই ‘যাযাবর’ পরিবারটি মাল্টা, মেক্সিকো, সার্বিয়া, বোস্টন, ফ্লোরিডা, আইসল্যান্ড, তুরস্ক, ব্রিটেনের মতো দেশ পরিভ্রমণ করেছে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ঘুরতে পছন্দ করেন। ফলে সন্তান জন্মের পরেও সেই ভাবনা বদলায়নি। বরং তাকে নতুন করে চালনা করতে শুরু করেছেন। এই দম্পতি যখন ঘর ছাড়েন, ঠিক তখনই তাদের ছোট মেয়ের জন্ম হয়। এখন তার বয়স ৩ বছর এবং এই বয়সেই সে বাবা-মায়ের সঙ্গে পৃথিবীটা ঘুরে দেখতে শুরু করে দিয়েছে। শুধুমাত্র কোভিড-১৯ অতিমারীর সময়, তাঁরা মেক্সিকোতে চার মাস আটকে ছিলেন। অতিমারীর প্রকোপ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাইক-ব্রুক ইউরোপের অনেক দেশে ভ্রমণ সেরে ফেলেন। তাঁরা অবশ্য জানিয়েছেন, সে সময় খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হত তাঁদের।
কিন্তু এ ভাবে দেশ থেকে দেশে ঘুরে ঘুরে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। কোনও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াও সম্ভব নয়। তাই পোপ দম্পতি তাদের জন্য পড়াশোনার সময়সূচী নির্ধারণ করে দিয়েছেন। দিনে মাত্র দেড় ঘণ্টা সব বাচ্চাদের পড়ান মাইক এবং মনে করেন এটুকুই যথেষ্ট। দম্পতি বিশ্বাস করে যে শিশুরা প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখছে।
পোপ দম্পতির দাবি, ২ ঘণ্টার কম সময়েই শিশুরা অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারে। আর বাকি শিক্ষাটুকু তাঁদের সন্তানেরা পাচ্ছে ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে। তিন সন্তান প্রায় প্রতিদিন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা করছে, মেলামেশা করছে, নতুন বন্ধু তৈরি হচ্ছে। এই বিচরণ ক্ষেত্র থেকেই তাঁরা জীবনের শিক্ষা পাচ্ছে। তবে দম্পতি আপাতত ভ্রমণ থেকে বিরতি নেওয়ার কথাই ভাবছেন। তাঁরাও এ বার চাইছেন সন্তানদের কোনও স্কুলে ভর্তি করে দিতে।