বিশ্বে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে সবার আগে রয়েছে এই দেশটি, অথচ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে এর অস্তিত্ব ! যার কারণ শুনলে অবাক হবেন আপনিও
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Japan Birth Rate: শুনতে অবাক লাগলেও জাপান আজ সত্যি সত্যিই অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। আর এভাবেই সবটা চলতে থাকলে আজ থেকে ৬৯৫ বছর পর ২৭২০ সালের জানুয়ারি মাসে জাপানে শুধুমাত্র একটি শিশুই জন্ম নেবে। জাপান নিজেদের জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে। তারপরেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
advertisement
তবে হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও জাপান আজ সত্যি সত্যিই অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। আর এভাবেই সবটা চলতে থাকলে আজ থেকে ৬৯৫ বছর পর ২৭২০ সালের জানুয়ারি মাসে জাপানে শুধুমাত্র একটি শিশুই জন্ম নেবে। জাপান নিজেদের জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে। তারপরেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। বলা হচ্ছে যে, ২০২৪ সালে জাপানে যে সংখ্যক শিশু জন্মেছে, তা টানা ৯ বছর ধরে নিম্ন রেকর্ডে নেমে এসেছে। Representative Image
advertisement
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সে দেশে ২০২৪ সালে যে সংখ্যক শিশু জন্ম নিয়েছে, তা ৯ বছরে প্রথম বারের জন্য বেশি। আর এর দিন দুয়েক পরেই জাপানের এই রিপোর্ট এসেছে। যা বেশ উদ্বেগজনক। আসলে দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশুর জন্মহার বৃদ্ধির কারণ হল, যুগলদের মধ্যে বিয়ের হার বৃদ্ধি। আসলে কোভিড-১৯ অতিমারীর জেরে এই যুগলদের নিজেদের বিয়ে পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপান যদি এই পথে হাঁটতে থাকে, তাহলে এই দেশের অস্তিত্ব মুছে যাবে বলে আশঙ্কা। জাপানের জন্মহার হ্রাস এবং এর কারণ সম্পর্কে আজকের প্রতিবেদনে আলোকপাত করা যাক। Representative Image
advertisement
জাপানে শিশুদের কী অবস্থা? জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বৃহস্পতিবার দেশের জনসংখ্যা সংক্রান্ত ডেটা প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে যে, শুধুমাত্র সে দেশে ২০২৪ সালে জন্ম নিয়েছিল ৭,২০,৯৮৮ জন শিশু। এদের মধ্যে অবশ্য রয়েছে বিদেশি নাগরিকও। ২০২৩ সালে জন্মেছিল ৭,৫৮,৬৩১ জন শিশু। অর্থাৎ ২০২৪ সালে জন্মহার কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। অন্যদিকে আমরা যদি ভারতের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখা যাবে, Countrymeter-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে জন্মেছে ২,৯৪,৬৬,৩৬৬ জন শিশু। Representative Image
advertisement
জাপানের তথ্য থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে, ১৮৯৯ সাল থেকে এই সংক্রান্ত তথ্যের উপর নজর রাখছে সরকার। সেই সময় থেকে এই হার সর্বনিম্নয় এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে যদি জাপানের মৃত্যুসংখ্যা যোগ করা হয়, তাহলে সেটা একটা বড়সড় সমস্যা তৈরি হবে। রেকর্ড বলছে, ২০২৪ সালে সে দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৬,১৮,৬৮৪ জনের। যা আগের বছরের তুলনায় ১.৮ শতাংশ বেশি। এর অর্থ হল, জাপানে খুব কম সংখ্যক শিশু জন্মাচ্ছে আর বেশি বেশি করে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। Representative Image
advertisement
advertisement
এই প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, জন্মহার হ্রাস পাওয়ার প্রবণতায় কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। তিনি বলেন যে, আমাদের সচেতন হতে হবে যে, ক্রমহ্রাসমান জন্মহার এখনও পর্যন্ত রোধ করা যায়নি। কিন্তু বিবাহের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি বিবাহ আর জন্মহারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সূত্র হিসেবে ধরা হয়, তাহলে এই বিষয়ে নজর দেওয়া আবশ্যক। Representative Image
advertisement
জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য বলছে যে, ২০০৮ সালে জাপানের জনসংখ্যা শীর্ষে উঠেছিল। তা পৌঁছে গিয়েছিল ১২৮.১ মিলিয়নে। যদিও তারপর থেকে প্রায় ৫ মিলিয়ন কমেছে। এরপর অবশ্য হ্রাসের ধারা বজায় থেকেছে। ন্যাশনাল পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবিষ্যদ্বাণী, ২০৪৮ সাল নাগাদ দেশের জনসংখ্যা ১০০ মিলিয়নের নীচে নেমে যাবে। আর ২০৬০-এ তা ৮৭ মিলিয়নে এসে ঠেকবে। অন্যভাবে বলতে গেলে অর্ধশতাব্দীর কিছু বেশি সময়ের মধ্যে, দেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ বা ৪০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাবে। Representative Image
advertisement
জাপানে জন্মহার হ্রাসের কারণ ঠিক কী? জাপানে জন্মহার হ্রাসের একাধিক কারণ রয়েছে। জাপান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক অর্থনীতিবিদ তাকুমি ফুজিনামি তুলে ধরলেন যে, এর কারণ হল দেশের বিয়ের সংখ্যা হ্রাস। অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানে ১০০ জন শিশুর মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত ভাবে মাত্র কয়েকটি শিশুই জন্মায়। আর এটাই প্রমাণ করে যে, বিবাহ এবং জন্মহারের মধ্যে এক গভীর যোগ রয়েছে।
গত বছর জাপানে অবশ্য বিয়ের হার বেড়েছিল ২.২ শতাংশ। এর ফলে সেই সংখ্যা ৪,৯৯,৯৯৯-এ পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা অবশ্য হ্রাস বা পতনটাকে ধামাচাপা দিতে পারেনি। যেটা দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালে। আসলে ওই বছর দেশের বিয়ের হার কমেছিল প্রায় ১২.৭ শতাংশ। ফুজিনামির বক্তব্য, যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে ২০২৫ সালে এসে। Representative Image
গত বছর জাপানে অবশ্য বিয়ের হার বেড়েছিল ২.২ শতাংশ। এর ফলে সেই সংখ্যা ৪,৯৯,৯৯৯-এ পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা অবশ্য হ্রাস বা পতনটাকে ধামাচাপা দিতে পারেনি। যেটা দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালে। আসলে ওই বছর দেশের বিয়ের হার কমেছিল প্রায় ১২.৭ শতাংশ। ফুজিনামির বক্তব্য, যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে ২০২৫ সালে এসে। Representative Image
advertisement
কিন্তু জাপানিরা কেন বিয়ে করতে চান না? বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক অবস্থা এবং লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা জাপানিদের বিয়েতে অনীহার মূল কারণ। জাপানের বহু মহিলাই বলেন যে, যেসব পুরুষদের স্থায়ী চাকরি নেই, তাঁরা বিয়ে করতে চান না। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট এবং দ্য ইনস্টিটিউট ফর এথিক্স ইন এআই-এর এক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর একাতেরিনা হার্টগ জাপানের শ্রম অনুশীলনের সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। নিউজউইক-কে তিনি বলেন যে, জাপানে পুরুষরাই পরম্পরাগত ভাবে সংসারের প্রধান উপার্জনকারী। এর ফলে যাঁরা কম আয় করেন, তাঁরা বিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছেন কিংবা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।Representative Image
advertisement
আরও একটি সমস্যা হল, মহিলাদের অনিয়মিত চাকরি। এই পরিস্থিতিতে একটা সংসার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া তাঁদের পক্ষে একপ্রকার কঠিন। কারণ এই ধরনের চাকরিতে কাজের সময় অনিশ্চিত। আর বেতনও বেশ কম। ফলস্বরূপ বহু মহিলাও পরিবার শুরু করতে চান না। কিছু বিশেষজ্ঞের আবার বিশ্বাস যে, জাপানের বাজারে ভাল চাকরির প্রচুর অভাব। এর কারণে একদল পুরুষ ঠিক করে নিয়েছে যে, তাঁরা বিবাহ করবেন না এবং সন্তান পরিকল্পনার পথেও হাঁটবেন না। আসলে তাঁরা এবং তাঁদের সম্ভাব্য সঙ্গীরা জানেন যে, একটা পরিবার বা সংসার চালানোর মতো খরচ তাঁরা করতে পারবেন না। আবার জাপানে অতিরিক্ত কাজের সংস্কৃতি রয়েছে। এমনকী এখানে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হল অতিরিক্ত কাজের চাপ। যাকে জাপানি ভাষায় ‘কারোশি’ বলা হয়। আর এই সমস্ত কারণেই দম্পতিরা সেভাবে সন্তান আনতে চাইছেন না।
advertisement
ক্রমহ্রাসমান জন্মহার নিয়ে কি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জাপান? বিগত কয়েক বছর ধরে জাপানের অফিসাররা এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। ২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছিলেন যে, এ যেন এক এখন-তখন পরিস্থিতি। তাঁর কথায়, জাপান এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে আমাদের ঠিক করতে হবে যে, আমরা কি সমাজ হিসেবে আদৌ কাজ চালিয়ে যেতে পারব কি না। শিশু এবং শিশু লালন-পালন সংক্রান্ত নীতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই হবে। এটি একেবারেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা নয়।
advertisement
সরকার কী করছে? বিবাহ এবং শিশু জন্মহার বাড়াতে একাধিক অভিযান চালাচ্ছে জাপান সরকার। এমনকী টোকিও মেট্রোপলিটান গভর্নমেন্ট একটি সরকারি ডেটিং অ্যাপও চালু করেছে। যার মাধ্যমে বিবাহের প্রচার করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি আবার SpaceX, Tesla এবং X-এর মালিক ইলন মাস্কেরও নজর কেড়েছে। তিনি বলেছেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, জাপান সরকার এই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। সময়ে যদি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে জাপান (এবং অন্যান্য অনেক দেশ)-এর অস্তিত্ব একেবারেই মুছে যাবে।
advertisement
বিবাহের জন্য উৎসাহিত করতে সরকার আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: দেশের মানুষের মধ্যে বিবাহের জন্য উৎসাহ জাগাতে সরকার অন্যান্য পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল চাইল্ড কেয়ার ফেসিলিটি এবং হাউজিংয়ের ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান। যদিও পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে, এই বিষয়গুলি জাপানকে সাহায্য করবে না। ফলে আপাতত জাপান সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি এখন অনেকটা ‘হয় কর, নাহলে মৃত্যুবরণ কর’-র মতো।