Tamluk Tourism: বাড়ির কাছেই 'ট্যুরিস্ট স্পটের খনি'! কখনও ভাবতেই পারবেন না এই জায়গা এত মনোরম
- Published by:Pooja Basu
- hyperlocal
- Reported by:Saikat Shee
Last Updated:
পূর্ব মেদিনীপুরের ইতিহাস নির্ভর পর্যটন মানচিত্রে তমলুক শহর অন্যতম। পুজোর ছুটিতে প্রাচীণ বন্দর নগরীর ইতিহাস খুঁজে দেখতে চাইলে চলে আসুন তমলুক শহরে।
মহাভারত থেকে বর্তমান ভারতের ইতিহাসের সাক্ষী তমলুক তাম্রলিপ্ত নগরী। আজও শহরের পুরনো ইট পাঁজর জানান দেয় তার প্রাচীনত্ব। শহরের অলিতে গলিতে কান পাতলে শোনা যায় অতীত গৌরব নগরীর ইতিকথা। শহরের ধুলোবালিতে ছড়িয়ে আছে পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস। তাম্রলিপ্ত বা তমলুক বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর। তাম্রলিপ্ত পৌরসভার বয়স দেড়শ অতিক্রম করে গেছে কবেই। তাম্রলিপ্ত নগরী এক সময় ছিল প্রাচীন ভারতের আন্তর্জাতিক বন্দর নগরী।
advertisement
পূর্ব ভারতের প্রাচীন জনপদ তাম্রলিপ্ত নগরী। তাম্রলিপ্ত নগরীতে এসেছেন পৃথিবী বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক ফা হিয়েন। তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকেই সম্রাট অশোকের পুত্র কন্যা বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার উদ্দেশ্যে সিংহল যাত্রা করেছিলেন। তাম্রলিপ্ত নগরীতে এসেছেন বৈষ্ণব ধর্মের প্রাণ পুরুষ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু একবার নয় দু'বার তাম্রলিপ্ত নগরীতে এসেছিলেন। তমলুক নগরীতে আরও দুই পৃথিবী বিখ্যাত মানুষ পা দিয়েছিলেন নিজেদের কাজের উদ্দেশ্যে। কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তমলুক শহরে এসেছিলেন। ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি রাজনৈতিক সভা করেছিলেন তমলুকে।
advertisement
ঐতিহাসিক তমলুক শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন নিদর্শন ইতিহাস। প্রাচীন গৌরব মাখা তমলুকের ইতিহাস ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। তমলুক শহরের দেখার মতো অনেকগুলি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তমলুক রাজবাড়ী। প্রাচীন এই জনপদে রাজবাড়ী রাজবাড়ী বর্তমানে হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। বর্তমানে ভগ্ন রাজবাড়ীতে ইতালীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শন পাওয়া যায়।
advertisement
advertisement
মহাভারতের নিদর্শন এখনও বর্তমান। মহাভারতে বর্ণিত বিষ্ণু মন্দিরের এই শহরে অবস্থিত। তমলুকে অনেক বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম দেবী বর্গভীমা মায়ের মন্দির, চক্রেশ্বর শিবমন্দির, মহাপ্রভু মন্দির, জগন্নাথ দেবের মন্দির। ৫১ সতীপীঠ একটা পীঠ তমলুকের বর্গভীমা মায়ের মন্দির। মা এখানে কালী রূপে পূজিত হন। বিভিন্ন তিথিতে বিশেষ পুজো হওয়ার পাশাপাশি দুর্গা অষ্টমীতে বিশেষ পূজা হয় এই মন্দিরে।
advertisement
তাম্রলিপ্ত নগরীর সঙ্গে জড়িত থাকার পৌরাণিক কাহিনী গুলোর পাশাপাশি প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল পূর্ব ভারতের প্রধান বন্দর। তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকে দেশ-বিদেশের বাণিজ্যতরী যাওয়ার আশা করত। তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকেই সম্রাট অশোকের পুত্র ও কন্যা সিঙ্গেল যাত্রা করে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকেই তার ভারত যাত্রা শেষ করে। আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়া খনন কার্যে প্রাচীন তাম্রলিপ্ত নগরীর ও তাম্রলিপ্ত বন্দর এর অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়।
advertisement
স্বাধীনতার পীঠস্থান তমলুক। অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই বীরভূমি ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে বারবার গর্জে উঠেছে। ক্ষুদিরাম বসুর বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিল এই শহরেই। শহরে হ্যামিল্টন স্কুল পড়াকালীন বিপ্লবীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী অগ্নিযুগে কিংবা মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলনে বারবার দেখি শক্তির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে তমলুক। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন
advertisement
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুক হওয়ায় যাতায়াতের কোনো অসুবিধা নেই। তমলুক শহরের ওপর দিয়েই চলে গেছে হলদিয়া মেছেদা রাজ্য সড়ক ও দক্ষিণ পূর্ব রেল শাখার হলদিয়া - হাওড়া এবং হাওড়া - দিঘা রেল লাইন। তমলুক জংশন স্টেশন থেকেই ভাগ হয়ে দু'দিকে চলে গেছে। ট্রেনে তমলুক স্টেশনে পৌঁছে, টোটো নিয়ে তমলুক ঘুরে দেখতে পারে পর্যটকেরা।
advertisement
তমলুকের ইতিহাস সম্পর্কে রাজবাড়ির সদস্য তথা তমলুকের ইতিহাস গবেষণা করা ডক্টর দীপেন্দ্র নারায়ণ রায় জানিয়েছেন, 'মহাভারত থেকে আধুনিক ভারত বহমান ইতিহাসের সাক্ষী তমলুক শহর। এই শহরের আনাচে কানাচে ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যারা ইতিহাস ভালবাসেন বা ঐতিহাসিক স্থান ভালবাসেন তাদের জন্য তমলুক আদর্শ জায়গা।'
advertisement
তমলুক শহরে থাকা খাওয়ার জন্য কোনও সরকারি অতিথিশালা নেই। রয়েছে অনেক হোটেল। তমলুক শহরে রাত্রিবাসের জন্য উপযুক্ত বেসরকারি গেস্ট হাউস। শহরের মধ্যে বৈকুণ্ঠ সরোবর বা নতুন পুকুর পাড়ে অবস্থিত উন্নত মানের বেসরকারি গেস্ট হাউস। যোগাযোগ +৯১ ৮৩৩৫০৫৭৬২৭। পূর্ব মেদিনীপুরের ইতিহাস নির্ভর পর্যটন মানচিত্রে তমলুক শহর অন্যতম। পুজোর ছুটিতে প্রাচীণ বন্দর নগরীর ইতিহাস খুঁজে দেখতে চাইলে চলে আসুন তমলুক শহরে।